অর্ক দে, বর্ধমান: রাস্তা তৈরি নিয়ে পারিবারিক বিবাদ। আর তা গড়াল ‘সামাজিক বয়কটে’র দিকে! এমনই ঘটনাায় উত্তপ্ত হয়ে উঠল বর্ধমানের (Burdwan) মেমারি পুরসভার ১৫ নং ওয়ার্ড এলাকা। অভিযোগ, রাস্তা তৈরি নিয়ে বিবাদের মাঝে তৃণমূল কাউন্সিলর হস্তক্ষেপ করেন। আর তাঁর বিরোধিতা করার অভিযোগে একটি পরিবারকে সামাজিক বয়কটের (Social Boycott) ডাক দেওয়া হয়েছে। মাইকিং করে পাড়ায় প্রচার করা হয়েছে যাতে ওই পরিবারকে কোনওরকম সাহায্য না করা হয়।
ঘটনা ঠিক কী? স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, পাড়ায় ঢোকার রাস্তা তৈরি নিয়ে মেমারি পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিবাদ চলছিল। স্থানীয় তৃণমূল (TMC) নেতৃত্বের একাংশ তাতে হস্তক্ষেপ করে একটি পরিবারকে সমর্থন জানিয়ে রাস্তা তৈরির কথা জানায়। অপর পরিবারের লোকজন তৃণমূলের এই ‘হস্তক্ষেপ’ মানতে পারেনি। তাঁরা আইনের দ্বারস্থ হন। আর তাতে শাসকদলের নেতারা রুষ্ট হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ। তাঁরা ওই পরিবারকে সামাজিকভাবে বয়কটের ডাক দিয়েছে।
[আরও পড়ুন: মোদির আগে বঙ্গে শাহ, বিজেপির ‘বঞ্চনা’র সমাবেশে যোগ দেবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী]
পরিবারের সদস্য সেলিমা বেগম বলেন, ”আমাদের জায়গার উপরে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছিল। আমরা তা মানতে চাইনি। সেই কারণে আমাদের উপর আগেও আক্রমণ করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে তৃণমূলের কয়েকজন নেতা-কর্মী আমাদের বাড়িতে এসে হুমকি দেয়, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে, এমনকী আমাদের মারধরও করা হয়। আমাদের পরিবারও তৃণমূল সমর্থক। তার পরও এমন করা হচ্ছে।” এর নেপথ্যে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর কাশ্মীরা খাতুন শেখ ও তাঁর স্বামী সুরমান আলি রয়েছেন বলে অভিযোগ। এই ঘটনার পর থেকে চরম আতঙ্কে তাঁদের পরিবার। সেলিমা বেগমের স্বামী সেখ আজিজুল হক বলেন, ”প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঝামেলায় নেতারা অকারণে মাথা ঘামাচ্ছেন। যাদের জন্য রাস্তা তৈরি হচ্ছে, তাঁরা কাউন্সিলরের অনুগামী। তাই কাউন্সিলর (Councilor) তাঁর দলবল নিয়ে এসে ফতোয়া জারি করেছেন। অনুগামীরা খুনের হুমকিও দিচ্ছে।”
যে পরিবারের সঙ্গে রাস্তা নিয়ে বিবাদ, সেই পরিবারের সদস্য সবুর আলি শেখের কথায়, ”ওই পরিবারটির সঙ্গে গ্রামের কারও সম্পর্ক ভালো নয়। তাঁদের বাড়ির পাশ দিয়ে একটি রাস্তা গিয়েছে। আমাদের সঙ্গে গন্ডগোল হওয়ার জন্য তিনি রাস্তাটি কেটে দেন। তা নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। রাস্তাটি সংস্কার করার জন্য বলেছিলাম। ওঁরা আমাদের কথার গুরুত্ব দেননি। উলটে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই পরিবারের বিরুদ্ধে গোটা পাড়ার লোকজন বীতশ্রদ্ধ। তবে কেউ সামাজিক বয়কট করেনি।”
[আরও পড়ুন: ইস্তফা দিয়েই রাজ্যকে নিশানা প্রাক্তন AG সৌমেন্দ্রর]
নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মেমারি পৌরসভার ১৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর (Councilor) কাশ্মীরা খাতুন শেখ। তাঁর বক্তব্য, ”ওই পরিবারকে একাধিকবার রাস্তার সমস্যা মেটানোর জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা কোনওভাবেই আলোচনায় বসতে রাজি হননি। রাস্তার সমস্যার জন্য পিছনের বাড়িগুলির অসুবিধা হচ্ছিল, আমরা রাস্তা করে দিয়েছি।” সামাজিক বয়কটের বিষয়টি অস্বীকার করেন কাউন্সিলর। জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, ”স্থানীয় দুই পরিবারের মধ্যে গন্ডগোল আছে শুনেছি। তারা আইনের আশ্রয় নিয়েছে এর সঙ্গে তৃণমূল কোনও সম্পর্ক নেই। তৃণমূল কংগ্রেস কাউকে সামাজিক বয়কট করে না।”
এখন ধান কাটার মরশুম চলছে। এই সময়ে কোনও শ্রমিক ওই পরিবারের জমিতে কাজ করতে পারবেন না বলে ‘ফতোয়া’ও দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকরা ভয়ে কাজ করতে আসছে বলে জানান পরিবার। ফলে জমির ধান জমিতেই পড়ে নষ্ট হচ্ছে। এমনকি এলাকার বাসিন্দাদের তাঁদের সঙ্গে কথা বলতেও নিষেধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এহেন সামাজিক বয়কটের শিকার হয়ে একেবারে আতান্তরে পড়েছেন।