কালোমরিচ বা Piper nigrum হল মশলাজাতীয় ফসলের মধ্যে একটি। গবেষণায় প্রমাণিত যে এটি আন্তঃফসল হিসাবে কার্যকরভাবে নারকেল দিয়ে চাষ করা যেতে পারে। মরিচের সঙ্গে আন্তঃফসল, নারকেলের উৎপাদন বাড়িয়ে তোলে এবং মাটির ক্ষয় ও আগাছা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লিখেছেন বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শস্য বিজ্ঞান বিভাগের গবেষক দেবলীনা রায় এবং মশলা, আবাদি, ঔষধি ও সুগন্ধী বিভাগের গবেষক অনসূয়া শীল।
দ্বিতীয় পর্ব (প্রথম পর্ব)
উপযুক্ত জাত: কালো মরিচের উন্নত জাতগুলির মধ্যে পান্নিউর ১, পান্নিউর ৪ এবং পান্নিউর ৫, থেভাম, শ্রীকারা, পঞ্চমী এবং করিমুন্ডা অন্যতম। একটি নারকেল ভিত্তিক উচ্চ ঘনত্বের বহু-প্রজাতি শস্য পদ্ধতির অধীনে, পান্নিউর ১ জাতটি থেকে প্রতি বছর লতা প্রতি ২.৫ থেকে ৪ কেজি শুকনো মরিচের ভাল ফলন চাষিরা পেয়ে থাকেন। অন্যান্য জাতগুলি, যেমন পান্নিউর ৪ এবং পান্নিউর ৫, শ্রীকারা এবং পঞ্চমী, প্রতি বছর লতা প্রতি ১.৫ থেকে ২.৫ কেজি শুকনো মরিচের উচ্চ ফলন প্রদানের ক্ষমতা রাখে।
কালো মরিচের সঠিক পরিচর্যার নিয়মাবলি: মরিচের লতা রোপণের ৬ মাস পর থেকে সার ব্যবহার শুরু করতে হবে। সার প্রয়োগের সময় সার মিশ্রণটিকে গাছ থেকে প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার দূরে এবং বড় লতার ক্ষেত্রে প্রায় ১ ফুট দূরে, ডালপালা এবং পাতা এড়িয়ে এবং ভালভাবে ছিদ্র করে প্রয়োগ করতে হবে। কালো মরিচ উৎপাদনের সাফল্য অধিকাংশেই নির্ভর করে সঠিকভাবে পুষ্টি ব্যবস্থাপনা এবং রোগ ব্যবস্থাপনার পরিপ্রেক্ষিতে কীভাবে গাছের যত্ন নেওয়া হচ্ছে তার উপর। রাসায়নিক সার হিসাবে ৫০, ৫০ এবং ১৫০ গ্রাম প্রতি লতা হিসাবে নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পটাশিয়াম প্রয়োগ করতে হবে। তবে, জৈব সার যেমন ভার্মিকম্পোস্ট বা গোবর সার বা কম্পোস্ট ২ থেকে ৩ কেজি জৈব প্রতি লতায় প্রয়োগে ভাল ফলন পাওয়া যায়। সার প্রয়োগের সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন গাছের গোড়ার অংশ কোনওমতেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তার জন্য গোড়া থেকে ৫ সেন্টিমিটার বাইরের দিকে সার ছড়িয়ে দিন এবং পুরনো পাতা দিয়ে জায়গাটা ঢেকে দিন। গ্রীষ্মের পুরো মাস জুড়েই সেচ অপিরহার্য এবং ড্রিপ সেচ বা স্প্রিংকলার আকারে সেচের ব্যবস্থা থাকলে সেই পদ্ধিত অবলম্বন করতে পারেন। রোগ পোকামাকড় রোধে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। কালো মরিচের ঢলে পড়া রোগ সম্মুখীন হলে, নিম কেক বা ভার্মি কম্পোস্টের সঙ্গে ছত্রাকনাশক এবং জৈব এজেন্ট (ট্রাইকোডার্মা ভিরিড) ব্যবহার সমন্বিত একটি রোগ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।
[আরও পড়ুন: এক নিমেষেই দ্বিগুণ আয়, নারকেল বাগানে গোলমরিচ চাষে চমক]
মরিচ লতা ছাঁটাইয়ের সঠিক সময়: মরিচলতাতে মোটামুটিভাবে নয়টি পাতা গজানোর পরে, নিচের ছয়টি অক্ষত রেখে উপরের তিনটি পাতা ছেঁটে ফেলতে হবে। তবে, বর্ষাকাল শুরুর আনুমানিক এক সপ্তাহের মধ্যে লতার নিচের দিকের তিনটি পাতা অক্ষত রেখে বাকি পাতাগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হবে। এই পদ্ধতিতে দ্রাক্ষালতা নলাকারভাবে বিকশিত হবে এবং ৩ বা ৪টি প্রধান শাখা থেকে আনুভূমিক শাখাগুলি অধিক পরিমাণে প্রস্ফুটিত হবে। সার প্রয়োগের পূর্বে যেসব লতাগুল্মগুলি ঢলে পড়েছে অথবা মাটি ছুঁয়ে ফেলেছে সেগুলোকে বাদ দিয়ে দিতে হবে।
ফসল কাটার সঠিক সময়: দ্রাক্ষালতাগুলিকে সাধারণত ২০ থেকে ২৫ ফুটের বেশি বাড়তে দেওয়া উচিত নয়। এতে সহজেই বেরিগুলি সংগ্রহ করা যায় এবং নারকেল গাছ থেকে নারকেল আরোহণে কোনওরকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না। সঠিক পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণে দ্বিতীয় বছর থেকেই ফসল সংগ্রহ করা যেতে পারবে। নির্বাচিত স্থানীয় জাত এবং উন্নত জাতগুলি থেকে গাছ প্রতি ১ থেকে ১.৫ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যেতে পারে। এক একর নারকেল জমিতে মরিচের একটি আন্তঃফসল থেকে এক বছরে প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ কেজি মরিচ সংগ্রহ করা যায়। বর্তমানে এক কেজি মরিচ বিক্রয়ে প্রায় ৭০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত আয় হতে পারে। মরিচের সঙ্গে আন্তঃফসলের এক একর নারকেল জমি থেকে চাষিরা প্রায় ৩৫০০০০ টাকা থেকে ৫২৫০০০ টাকা লাভ পেতে পারবেন।