ধীমান রায়, কাটোয়া: ছিল সবুজ। হয়ে গেল সাদা। দিনকয়েক ধরে নারকেল গাছের (Coconut Tree) পাতার রং পরিবর্তন নিয়ে জেরবার পূর্ব বর্ধমানের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। এই ঘটনা নিয়ে রটছে নানা গুজব। যদিও কৃষি বিশেষজ্ঞদের দাবি, নারকেল গাছ এক ভয়ানক সংক্রামক রোগে আক্রান্ত। সে কারণেই পাতা সাদা হয়ে যাচ্ছে।
পূর্ব বর্ধমানের ভাতার, মঙ্গলকোট, কাটোয়া, আউশগ্রাম, মন্তেশ্বর-সহ বিভিন্ন ব্লকেই গত কয়েকদিন ধরেই নারকেল গাছের পাতায় এই উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। ভাতারের হাড়গ্রামের বাসিন্দা কৃষক পরিমল পাঁজার কথায়, “আমি প্রথমে খেয়াল করিনি। মুম্বই থেকে আমার এক আত্মীয় ফোন করে জানান সেখানেও নাকি একের পর এক নারকেল গাছের পাতা সাদা হয়ে যাচ্ছে।”
তবে অনেকেই বলছেন, “রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জৈব অস্ত্র ব্যবহারের কারণে এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে।” হঠাৎ সাদা হয়ে যাচ্ছে নারকেল গাছের পাতা। গত দু-চারদিন ধরেই পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন এলাকায় এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে। তাতেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। দেখা যাচ্ছে, নারকেল গাছের পাতার তলার দিকে সাদা মোমের মতো পুরু আস্তরণ।
[আরও পড়ুন: যুদ্ধের আবহেও ছাড়েননি দেশ, মায়ের ওষুধ আনতে গিয়ে রুশ গোলায় ছিন্নভিন্ন তরুণী]
যদিও উদ্ভিদ ও কৃষিবিজ্ঞানীরা বলছেন, “এটি একটি কীটের আক্রমণ মাত্র।” তবে পূর্ব বর্ধমানের প্রাক্তন-সহ কৃষি অধিকর্তা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন,”এই রোগটি ভীষণ সংক্রামক। খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ। সামাল দেওয়া কঠিন। পুরো এলাকাভিত্তিক প্রতিকার করলে তবেই ফল পাওয়া যায়।” নারকেল বা অন্য কোনও গাছের পাতা হঠাৎ সাদা হয়ে যাওয়ায় আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। এটি রুগোজ স্পাইরালিং হোয়াইট ফ্লাই নামে একটি কীটের আক্রমণে ঘটছে। কীটটির বিজ্ঞানসম্মত নাম অলিওরোডিকাস রুগিওপারকুলেটাস। জানা যায়, ২০০৪ সালে মধ্য আমেরিকার বিভিন্ন দেশে নারকেল গাছে এই ধরণের প্রকোপ দেখা গিয়েছিল। ২০১৬ সালে তামিলনাড়ুতেও এই একই উপসর্গ দেখা দেয়। কৃষি বিজ্ঞানীরা জানান, নারকেল ছাড়াও আম, জামরুল, সবেদা, কাঁঠাল-সহ বিভিন্ন গাছেও এই কীট বাসা বাঁধে।
ভাতার ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা বরুণ হালদার বলেন, “রুগ্ন গাছেই এই রোগপোকার প্রভাব প্রথম পড়ে। আসলে গ্রামবাংলার অধিকাংশ পরিবার গাছের তেমন যত্ন নেন না। নিয়মিত বছরে দু’বার পর্যাপ্ত খাবার গাছের গোড়ায় দেওয়া উচিত।তবে এখন প্রথমেই রোগপোকার দমন করা প্রয়োজন।” কাটোয়া ১ নম্বর ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা আজমীর মণ্ডল বলেন, “মাছির মতো দেখতে সাদা রংয়ের এই কীটগুলি। পূর্ণাঙ্গ মাছির ডানায় এক জোড়া হালকা বাদামি বিন্দু থাকে। গাছের পাতার নিচের দিকে স্ত্রী মাছিগুলি চক্রাকারে প্রায় ২০০টি ডিম পাড়ে। তুলোর মতো আঠালো আস্তরণ দিয়ে ডিমগুলিকে ঢেকে দেয়। তার ফলে পাতা সাদা হয়ে যায়। ডিম থেকে পূর্ণাঙ্গ মাছিতে পরিণত হতে প্রায় ১ মাস সময় লাগে।”
তবে কৃষিবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই পোকার আক্রমণে গাছের ভীষণ ক্ষতি হয়। গাছের রস চুষে খায় কীটগুলি। পাতা শুকিয়ে যায়। তার উপর ছত্রাকের আক্রমণও ঘটে। রাতের দিকে নারকেল গাছে টর্চের আলো ফেললে খুব স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান। রাসায়নিক কীটনাশকে এই পোকা বধ করা নিরাপদ নয় বলে পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করলে এই পোকা আরও ব্যাপক শক্তি নিয়ে ফিরে আসতে পারে। পরিবর্তে জৈব কীটনাশক ব্যবহার করাই উপযুক্ত হবে বলে জানাচ্ছেন কৃষি গবেষকরা। প্রয়োজনে সাবান গোলা জলও ব্যবহার করা যেতে পারে।