সৌরভ মাজি, বর্ধমান: নিম্নচাপের জেরে মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হয়েছে হালকা ঝোড়ো হাওয়া। সঙ্গে টানা বর্ষণ। বুধবার বিকেল পর্যন্ত চলেছে বৃষ্টি। এদিকে ধানের ভরা মরশুম চলছে পূর্ব বর্ধমান জেলায়। এই পরিস্থিতিতে বহু জায়গায় দমকা হাওয়ায় ফলন্ত ধান গাছ নুইয়ে পড়েছে। ফলে সেই সব ধানে ক্ষতির আশঙ্কা। আবার অনেক জায়গায় ধান কাটাও হয়েছিল। সেই ধানেরও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন অনেক চাষি। তবে কৃষি দপ্তরের আশ্বাস, ধানের বিশেষ ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তবে বৃষ্টির কারণে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলে ক্ষতি এড়ানো সম্ভব বলে জানাচ্ছে কৃষি দপ্তর। একইসঙ্গে, আলু, সরষে, সবজি চাষের বিষয়েও কৃষি দপ্তরের পরামর্শ মেনে চলার কথা জানানো হচ্ছে চাষিদের।
কৃষি দপ্তর সূত্রে বুধবার জানা গিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় গড়ে মোট ১২১.৯ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরমধ্যে সবথেকে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে মন্তেশ্বর, কেতুগ্রাম-১ ও আউসগ্রাম-১ ব্লকে। জেলায় আউশ ধান তোলার কাজ শুরু হয়েছে। এবছর জেলায় প্রায় ৯ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষ হয়েছিল। ইতিমধ্যেই ৫০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। জেলার যেসব এলাকায় আমন ধান রয়েছে তারমধ্যে এদিন গলসি-১ ও ২ ব্লকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি দেখা গিয়েছে। তবে, এখনও পর্যন্ত যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে তাতে আমন ধানের কোনও ক্ষতি হবে না বলে জানিয়েছে কৃষি দপ্তর। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা এড়াতে বেশ কিছু পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি দপ্তর। বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি দমকা হওয়ার কারণে ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরা। আমন চাষের ক্ষেত্রে ঝড়ের কারণে ধান গাছ নুইয়ে পড়েছে বহু ব্লকে। তা থেকে ধান পাওয়ার আশা ক্ষীণ। এছাড়াও বেশ কিছু সবজি চাষের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বৃষ্টি ও দমকা হওয়ার কারণে গাছের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা। মান্থার কারণে মাথায় হাত চাষিদের।
জেলা কৃষি অধিকারী অমর মণ্ডল জানান, ধানের জমির অতিরিক্ত জল বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বৃষ্টির সময় ধান কাটার কাজ বন্ধ রাখতে হবে। কাটা ধান দ্রুত খামারজাত করতে হবে। ফসলে নাইট্রোজেন ঘটিত সার প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। দমকা হাওয়ার হাত থেকে ফসল বাঁচাতে সবজির মাচা, পানের বরজ শক্ত করে বেঁধে রাখতে হবে। প্রয়োজনের মাঠে থাকা আমন ধান আটি বেঁধে রাখতে হবে। প্রতিকূল আবহাওয়া কেটে গেলে ফসলে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। জেলায় আলু চাষের ক্ষেত্রে নতুন করে বীজ লাগানোর ক্ষেত্রে কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে নিষেধ করা হচ্ছে। জেলার মধ্যে জামালপুর ব্লকের কিছু এলাকায় আলু চাষ শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আলু চাষিদের ১ নভেম্বর পর্যন্ত আলুর বীজ লাগানোর ক্ষেত্রে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি দপ্তর। শীতকালীন সবজি চাষের ক্ষেত্রেও কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় 'মান্থার' প্রভাব কেটে যাওয়ার পর সরষে ও ডাল শস্য চাষ শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জেলায় সবজি চাষের ক্ষেত্রেও বেশকিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সবজির মধ্যে পেঁপে ও কলা চাষের ক্ষেত্রে ঝড়ের কারণে গাছ ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এই সমস্ত গাছ ভেঙে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
