shono
Advertisement

কৃষকদের নতুন আয়ের দিশা দেখাচ্ছে ড্রাগন ফল, জেনে নিন চাষের পদ্ধতি

ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগীরাও সর্বরোগহরা ড্রাগন ফল খেতে পারেন।
Posted: 08:52 PM Mar 24, 2021Updated: 08:52 PM Mar 24, 2021

উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম-সহ আরও অনেক পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ড্রাগন ফল। ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগীরাও ড্রাগন ফল খেতে পারেন। ড্রাগন চাষ লাভজনকও। লিখছেন বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি আবহাওয়া ও পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক শাওন বন্দ্যোপাধ্যায় ও গবেষক দোলগোবিন্দ পাল। 

Advertisement

উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন সি (Vitamin C), অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম-সহ আরও অনেক পুষ্টিগুণ থাকায় ড্রাগন ফল খুব উপাদেয় ও স্বাস্থ্যকর। ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগীরাও সর্বরোগহরা ড্রাগন ফল খেতে পারেন। এছাড়া ক্যানসার (Cancer), হৃদরোগ, সর্দি-কাশি-হাঁপানি, হজমের গোলযোগ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণেও ড্রাগন ফলের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ।

[আরও পড়ুন: তীব্র গরমে আম চাষে একাধিক সমস্যা, সমাধানের উপায় জানালেন বিশেষজ্ঞরা

উষ্ণ-আর্দ্র আবহাওয়াতে খুব অম্ল বা ক্ষার মাটি ছাড়া প্রায় সব ধরনের মাটিতেই ড্রাগন ফল (Dragon Fruit) চাষ হয়ে থাকে। তবে উচ্চ জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ এবং জলনিকাশের সুবিধাযুক্ত বেলে-দোআঁশ মাটি ড্রাগন ফল চাষের জন্য আদর্শ। অন্যান্য ক্যাকটাস জাতীয় ফসলের ন্যায় ড্রাগন ফলের উৎপত্তি মরু অঞ্চলে নয়, বরং এটি পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত সমৃদ্ধ মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার ফল। তাই স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য গড় ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা এবং বাৎসরিক ৫০০ থেকে ১০০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত প্রয়োজন । অতিরিক্ত বৃষ্টির জন্য ফুল ঝরা, ফলের পচন ও গাছের গোড়া পচা দেখা যেতে পারে। তাই জমিতে জল নিষ্কাশন সুনিশ্চিত করতে হবে ।

ড্রাগন ফল নরম কাণ্ড বিশিষ্ট হওয়ায় ৬-৭ ফুট উঁচু এবং ৫ ইঞ্চি চওড়া সিমেন্টের চারকোণা পোস্ট অবলম্বন হিসেবে ব্যবহার করা হয় । জমির দৈর্ঘ্য বরাবর ৬ ফুট চওড়া এবং ন্যূনতম ৬ ইঞ্চি বেড় বানিয়ে তার ঠিক মাঝ বরাবর সিমেন্টের পোস্টগুলি ৮x৮ ফুট দূরত্বে লাইন করে বসাতে হবে। দুইটি বেড়ের মাঝে ১.৫ থেকে ২ ফুট চওড়া নালা থাকবে যা সেচের কাজে ও বর্ষাকালে জল নিকাশের জন্য ব্যবহৃত হবে ।

ড্রাগন ফল অঙ্গজ পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করে। ২ থেকে ৩ বছরের পুরনো শক্ত সবুজ ডাল দু’ ফুট লম্বা করে কেটে নিয়ে অক্সিন হরমোন সহযোগে বর্ষার মরশুমে মাটিতে খাড়াভাবে লাগালে দ্রুত শিকড় নিয়ে নতুন চারা তৈরি হয়। প্রতিটি সিমেন্ট পোস্টের চারদিকে চারটি মাদা তৈরি করতে হবে। চারা বসানোর অন্তত ১৫ দিন আগে মাদা প্রতি ৫০০ গ্রাম জৈবসার, একমুঠো হাড়গুঁড়ো ও ৫০ গ্রাম সিঙ্গেল-সুপার-ফসফেট মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে। মাদায় চারা গাছ বসিয়ে পোস্টের সঙ্গে পাট বা নারকেল দড়ি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। এরপর গাছের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক গাছের ক্ষেত্রে রিং করে ১০ কেজি গোবর সার, ২৫ গ্রাম ইউরিয়া, ৭৫ গ্রাম সুফলা (১৫:১৫:১৫) দেওয়া হয়।

গাছের উচ্চতা বাড়লে অবলম্বন হিসেবে প্রতি সিমেন্টের পোস্টের মাথায় ২ ফুট ব্যাসের শক্ত লোহার রেলিং বা মোটর বাইকের টায়ার আটকে দেওয়া যেতে পারে, যার ওপর অবলম্বন করে পার্শ্বডালগুলি বৃদ্ধি পাবে এবং ছাতার মতো আকৃতি নেবে। সাধারণত গ্রীষ্মকালে চার থেকে পাঁচ দিন অন্তর এবং শীতে ৭ থেকে ৯ দিন অন্তর সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হয়।

ড্রাগন ফলে তেমন কোনও পোকার আক্রমণ হয় না এবং যেসব পোকা দেখা যায় তারা মারাত্মক কোনও ক্ষতি করতে পারে না। তবে রোগ বলতে সাধারণত কাণ্ড ও ফল পচা রোগ, অ্যানথ্রাকনোজ এবং কাণ্ডে বাদামি দাগ রোগ দেখা যায়। কান্ড ও ফল পচা রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য ইন্দোফিল-এম-৪৫ (০.২%) বা বোর্দো মিশ্রণ (১%) স্প্রে করতে হবে। অ্যানথ্রাকনোজ এবং কাণ্ডে বাদামি দাগ রোগ থেকে রক্ষা পেতে আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলতে হবে এবং আক্রান্ত গাছে কোনও ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হবে।

[আরও পড়ুন:বিঘা পিছু ২০ হাজার আয়, সজনে পাতায় সাজছে স্বনির্ভরতার স্বপ্ন]

ড্রাগন ফলে গাছ বীজ বপনের ১২ থেকে ১৫ মাসের মধ্যে ফল দেওয়া শুরু করে। তৃতীয় বছরের পর থেকে পোস্ট প্রতি ফলন দাঁড়ায় ৩০ থেকে ৩৫ কেজি । পূর্ণবয়স্ক বাগানের একর প্রতি গড় ফলন ৮ থেকে ১০ টন হয়ে থাকে। বর্তমানে প্রতি কেজি ড্রাগন ফলের বাজার মূল্য প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বলে জানা গিয়েছে। তাই পোস্ট প্রতি আনুমানিক ৬০০ টাকা খরচ হলেও স্বল্প পরিশ্রমে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়। তাছাড়া ড্রাগন বাগানের দুই সারির মধ্যে অন্যান্য ফুল(Flower) ও শাকসবজি চাষ(Agriculture) করে বাড়তি আয়ও করা যায়। তাই বর্তমান করোনা অতিমারী পরিস্থিতিতে উদ্যোগী কৃষকবন্ধু এবং ছোট-বড় উদ্যোগপতিদের কাছে ড্রাগন ফল চাষ হয়ে উঠুক একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় বিকল্প।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement