রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগের ফলে মৃত্যু হচ্ছে ফসলের পরাগ মিলনকারী কীটপতঙ্গের। আর এই কীটপতঙ্গের মৃত্যুর ফলে হচ্ছে না পরাগ মিলন। ফলস্বরূপ ফসলের উৎপাদন ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কম হচ্ছে বলে মত প্রকাশ করছেন তেহট্ট মহকুমা এলাকার পটল চাষিরা। তাই পটলের ১০০ শতাংশ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে চাষিরা ভোররাতে পটল ফুলে পরাগ মিলনের জন্য জমি থেকে পুরুষ ফুল তুলছে। তারপর রেণু স্ত্রী ফুলের সাথে মিলন ঘটানো হচ্ছে। পটল চাষিদের ভাষায় এই প্রক্রিয়াটিকে ফুল ঠেকানো বলা হয়।
এভাবে পরাগ মিলন ঘটানোর ফলে প্রতিটা স্ত্রী ফুল থেকে পরিপুষ্ট পটল ধরছে। এই প্রক্রিয়াতে পটলের জমিতে পরাগ মিলন ঘটালে একটি স্ত্রী ফুলও নষ্ট হবে না। প্রতিটা ফুলের কুঁড়ি থেকেই পটল ধরবে। প্রত্যেকদিন ভোরে সূর্য ওঠার আগে এই পরাগ মিলনের কাজটি শুরু করতে হয়, তা না করতে পারলে সূর্যের তেজ বাড়তে শুরু করলে ফুলের পাপড়িগুলি বন্ধ হয়ে যায়, তখন আর কৃত্রিমভাবে পরাগ মিলন করা সম্ভব হয় না। তাই প্রত্যেকদিন ভোরে পটলের জমিতে চোখ রাখলেই দেখতে পাওয়া যাবে, চাষিরা কৃত্রিম উপায়ে স্ত্রী ফুলের সাথে পুরুষ ফুলের মিলন ঘটাতে ব্যস্ত। পটল চাষি হরিপদ সরকার, স্বপন বিশ্বাস, বলরাম পালরা জানান, বর্তমান সময়ে ফসলের ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ, পোকামাকড় মারার জন্য ফসলের বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়।
এই কীটনাশক প্রয়োগের ফলে ফসলের ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ পোকামাকড়ের সাথে ফসলের উপকারে কীটপতঙ্গগুলোরও মৃত্যু ঘটে। ফসলের উপকারী কীটপতঙ্গ গুলি মৃত্যুর কারণে ফসলের পরাগ মিলন সঠিকভাবে না হওয়ায় ফসলের উৎপাদন কমে যায়। যে কারণে আমাদের মতো সমস্ত পটল চাষিকেই ভোরবেলায় এসে জমিতে ফুটে থাকা প্রতিটা স্ত্রী ফুলের সাথে পুরুষ ফুলের মিলন ঘটাতে হচ্ছে। এই কাজটি করতে না পারলে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ফলন কমে যাবে। ফলন উৎপাদন কমে গেলেই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে চাষিরা।
তাই বেশি ফলন পেতে প্রত্যেকদিন ভোররাতে ঘুম থেকে উঠেই পটলের ফুলে পরাগ মিলন ঘটাতে দৌড়াতে হয় পটলের জমিতে। সরকার বা কৃষি দপ্তরের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত, কোন কীটনাশক ব্যবহার করলে ফসলের উপকারী মৌমাছি, চিৎপতঙ্গ গুলোর কোন ক্ষতি হবে না, আর ফসলের ক্ষতিকারক যে সমস্ত কীটপতঙ্গ আছে সেগুলো ধ্বংস হবে। সরকার বা কৃষিদপ্তর এই ধরনের কিছু আবিষ্কার করতে পারলে সারা দেশের মধ্যে আমাদের দেশ কৃষিতে বিপ্লব ঘটবে।
তেহট্ট-১ ব্লকের কৃষি আধিকারিক তপন চন্দ্র রায় জানান, পটলের ভালো ফলন পেতে হলে দশটি স্ত্রী গাছের সাথে একটি পুরুষ গাছ অবশ্যই রাখতে হবে। অনেক চাষি এই অনুপাতে পুরুষ গাছ রাখতে চান না। জমিতে পুরুষ গাছের সংখ্যা কম থাকলে ফলন কমে যাওয়ার একটি বড় কারণ। এছাড়াও বিভিন্ন কীটনাশক প্রয়োগের ফলে ফসলের উপকারী-অপকারী সমস্ত ধরনের পোকামাকড়, মৌমাছি, কীটপতঙ্গের মৃত্যু ঘটে। এই উপকারি কীটপতঙ্গের মৃত্যুর ফলে পরাগ মিলনের ব্যাঘাত ঘটে, ফলস্বরূপ পটল গাছের ফলন অনেকাংশে কমে যায়। সঠিক মাত্রায় ফলন পেতে হলে ১০টি স্ত্রী গাছ ও ১টি পুরুষ গাছ বাগানে অবশ্যই রাখতে হবে।
এছাড়া কৃত্রিম উপায়ে যেমন পুরুষ পটল গাছের ফুল তুলে তার পরাগযুক্ত অংশটি পরিষ্কার বিশুদ্ধ জলের সাথে ভালো করে মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এরপর পরিষ্কার স্প্রে মেশিনের সাহায্যে জমিতে স্প্রে করতে হবে। এছাড়াও ভালো একটি পদ্ধতি হলো ভোর বেলায় পুরুষ ফুলের পরাগ যুক্ত অংশটি স্ত্রী ফুলে সরাসরি মিলন ঘটানো। এই প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ হলেও ১০০ শতাংশ ফলন পাওয়া যাবে। এই কৃত্রিম উপায়ে পরাগ মিলনের কাজটি ভোরবেলা করতে হবে। সূর্যের তাপ বেড়ে গেলে এই প্রক্রিয়াতে আশানুরূপ কাজ নাও হতে পারে। এর চাইতে বিশদে জানতে হলে চাষিদের সরাসরি অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।
