দেবব্রত দাস, খাতড়া: চলতি মরসুমে বাঁকুড়া জেলায় ধানচাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে গিয়েছে। প্রায় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে জেলায়। চলতি বছরে ব্যাপক হারে বৃষ্টি হয়েছে। পুজোতেও নিম্নচাপের বৃষ্টির প্রভাবে নদী তীরবর্তী নিচু এলাকায় ধান চাষে ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে বিষ্ণুপুর মহকুমার দামোদর ও দ্বারকেশ্বর নদ তীরবর্তী এলাকায় ধানচাষিরা। এবার শোষক পোকার আক্রমণে ও ধসায় খাস ধান গাছের শিস নষ্ট হতে বসেছে। ফলে দেশি খাস ধানে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
বাঁকুড়া জেলা কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মরশুমে জেলার তিনটি মহকুমায় প্রায় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। এদিকে টানা ভারী বৃষ্টিতে খাতড়া ও বাঁকুড়া সদর মহকুমায় ধানচাষের পক্ষে সহায়ক হয়েছে। তবে বিষ্ণুপুর মহকুমায় দামোদর ও দ্বারকেশ্বর তীরবর্তী সোনামুখী, পাত্রসায়ের, ইন্দাস ব্লকের নিচু এলাকায় জমিতে জল দাঁড়িয়ে থাকায় ক্ষতি হয়েছে। খাতড়া মহকুমার কৃষি আধিকারিক শুভেন্দু হাজরা বলেন, “পুজোর আগে ও পরে নিম্নচাপের বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় বেশ কিছু মৌজায় দেশি খাস ধানে শোষক পোকার আক্রমণ ও ধসার উপদ্রব দেখা দিয়েছে। দেশি খাস ধান গাছে ব্লাইট বা ধসা জাতীয় রোগ হয়েছে। ছত্রাকনাশক ওষুধ প্রয়োগ করার জন্য চাষিদের বলা হয়েছে। ফলে কিছু এলাকায় দেশি খাস ধানে ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।”
জেলা কৃষিদপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, নিম্নচাপের বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার দাপটে কিছু জমিতে লাল স্বর্ণ, শতাব্দী, বি এন ২০, দেশি খাস-সহ বিভিন্ন প্রজাতির ধানগাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। পাশাপাশি শোষক পোকার আক্রমণে দেশি খাসধানের শিষের নিচে ব্লাইট বা শিষ ঝলসা জাতীয় রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এবার ধানচাষ ব্যাপক হয়েছে। তবে শোষক পোকার উপদ্রবে ফলনের মুখে দেশি খাস ধানের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। সোনামুখী ব্লকের কোচডিহি পঞ্চায়েত এলাকার চাষি শান্তনু মণ্ডল, সহদেব মণ্ডল বলেন, “অনেক টাকা খরচ করে খাস ধান চাষ করেছি। কিন্তু এখন ফলনের মুখে শোকপোকার আক্রমণ শুরু হয়েছে। জমিতে ২-৩ বার করে ছত্রাকনাশক ও শোষক পোকানাশক ওষুধ স্প্রে করা হয়েছে। ধান শিষের নিচে ধসা জাতীয় রোগ দেখা যাচ্ছে। শিষ শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে ফলন ভালো হবে না বলে আশঙ্কা করছি।”
বাঁকুড়া জেলা কৃষি দপ্তরের এক আধিকারিক অবশ্য জানিয়েছেন, এখন জমিতে নানারকম মেরি ও ঝলসা পোকার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ধান গাছে মেরি ও ঝলসা দেখা দেওয়ার আগেই কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করার জন্য বলা হয়েছে। তবে যেসব জমিতে এই রোগ ও পোকার উপদ্রব মারাত্মকভাবে হচ্ছে সেইসব জমিতে দেশি খাস ধানের শিস শুকিয়ে গেলে ফলন কম হবে। তবে সর্বত্র এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়নি। ব্লক স্তরে কৃষি আধিকারিকদের বিষয়টি নজরে রাখার জন্য বলা হয়েছে।
