বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: হড়পা বানে উত্তরের অন্তত চারশো চা বাগান ক্ষতিগ্রস্ত। অনেক চা বাগানে উৎপাদন বন্ধ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চা পর্ষদ নভেম্বর মাসে চা পাতা তোলা ও উৎপাদন বন্ধ করতে পারে। সেই পরিস্থিতিতে প্রবল সমস্যার মধ্যে পড়তে পারেন চাষিরা। সেই আশঙ্কা ক্ষুদ্র চা চাষিদের শঙ্কা।
ভয়াবহ হড়পা বান ও ভূমিধসের প্রায় তিন সপ্তাহ পেরিয়েছে। দার্জিলিং, তরাই এবং ডুয়ার্সের চা বাগানগুলি এখনও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কষছে। এলাকার ২৭৬টি বড় বাগানের মধ্যে প্রায় ৩০টি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্তত ৪০০টি ছোট চা বাগান বিধ্বস্ত। মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মতো আগামী সপ্তাহে চা পর্ষদের বৈঠকে কাঁচা চা পাতা তোলা বন্ধের নির্দেশিকা আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন উত্তরের ক্ষুদ্র চা চাষিরা।
বিপর্যস্ত চা বাগান। নিজস্ব চিত্র
গত বছর অনেক আগে চা পর্ষদ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কাঁচা চা পাতা তোলার নির্দেশিকা জারি করায় চরম বিপাকে পড়েছিল উত্তরের কয়েক লক্ষ চা নির্ভর মানুষ। ক্ষুদ্র চা চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠন কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “বন্যায় অন্তত ৪০০টি চা বাগানে ক্ষতি হয়েছে। উৎপাদন বন্ধ আছে। এই পরিস্থিতিতে নভেম্বরে চা পাতা তোলা ও উৎপাদন বন্ধ হলে চা বাগানে আগামী মরসুমে পাতা তোলার মতো সামর্থ অনেকের থাকবে না।" তিনি জানান, মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত সেই হিসাব এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে বড় এবং ছোট চা বাগান মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ কয়েশো কোটি হবে।
আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি জেলার ৫০টিরও বেশি বড় চা বাগান বিধ্বস্ত হয়েছে। কোথাও পুরো ডুবে গিয়েছিল। এরপর পলিতে তলিয়েছে চা গাছ। পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত চা বাগানের সংখ্যা ৪০। প্রায় ৯৫০ হেক্টর জমির চা গাছ তছনছ হয়েছে। তার মধ্যে বন্যার জলে ধুয়ে ভেসেছে ৪০০ হেক্টর জমির চা বাগান। এখানেই শেষ নয়। একাধিক রাস্তা, কালভার্ট জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে। বাগানে যাতায়াত সম্ভব হচ্ছে না। জলঢাকা নদীর হড়পা বানে ময়নাগুড়ির রামশাই ও আমগুড়ি গ্রামের কয়েকশো চা চাষির চা বাগান পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। সেখানে এক বছরের মধ্যে চা পাতা মিলবে কিনা সন্দেহ আছে। চা চাষিদের বক্তব্য, ওই পরিস্থিতিতে চা পর্ষদ নভেম্বরে চা পাতা তোলা ও উৎপাদন বন্ধ করলে আগামী মরশুমে পাতা তোলার মতো ক্ষমতা চাষিদের অনেকেরই থাকবে না।
