shono
Advertisement

মালদহের বাজার কাঁপাচ্ছে ‘থাই আপেল কুল’, লাভের অঙ্কে মুখে হাসি কৃষকদের

আম ছেড়ে অনেকেই 'থাই আপেল কুল' চাষ করছেন।
Posted: 07:39 PM Mar 03, 2023Updated: 07:40 PM Mar 03, 2023

বাবুল হক, মালদহ: আমের জেলায় এবারও দাপাচ্ছে থাইল্যান্ড প্রজাতির বড় কুল। ‘থাই আপেল কুল’। আমের মুকুল এখন গাছে গাছে। গজাতে আরও সপ্তাহদুয়েক দেরি। কিন্তু মালদহের বাজার দাপাচ্ছে আপেল কুল। এই মরশুমেও প্রচুর ফলন। ব্যাপক চাহিদা। বিক্রিও ভাল হচ্ছে। লাভের অঙ্কটাও হাসি ফুটিয়েছে চাষিদের মুখে।

Advertisement

মালদহের উদ্যান পালন দপ্তরের উপ অধিকর্তা সামন্ত লায়েক বলেন, “মালদহে থাইল্যান্ড প্রজাতির আপেল কুল চাষে সাফল্য পাওয়া গিয়েছে। বহু চাষি এখন এই বড় কুল চাষ করতে মগ্ন। ফি বছর চাষের জমির পরিধি বাড়ছে। ফলন ভাল হচ্ছে। কুল চাষেও বাংলাকে দিশা দেখাচ্ছে মালদহ জেলা।” এক এক করে দীর্ঘ প্রায় পনেরোটি বছর কেটেছে। তারপরই বাজিমাত। প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড়ের একটা অংশে ফজলি, হিমসাগরকেও কার্যত টেক্কা দিচ্ছে থাইল্যান্ডের এই আপেল কুল।

দীর্ঘ প্রায় পনেরো বছর আগে আপেল কুলের চাষ শুরু হয়েছিল আমের জেলা মালদহে। এখন লাভের অঙ্কে আমকেও টেক্কা দিচ্ছে এই কুল, দাবি চাষিদের। কিন্তু একটাই আক্ষেপ, ভিনরাজ‍্যের পাশাপাশি বিদেশে আপেল কুলের রপ্তানির কোনও উদ্যোগ সরকারের তরফে নেওয়া হয়নি। বিদেশে এই কুল রপ্তানি হলে কৃষকরা আরও আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। বিশেষ করে ইংরেজবাজারের অমৃতি, কোতোয়ালি, ফুলবাড়িয়া, নরহাট্টা এলাকায় আপেল কুলের চাষ হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুরের চাষি মন্টু চৌধুরী বলেন, “আমের মতোই সুস্বাদু ফল এটি। এই কুলের ফলন বেড়েছে। বাড়ছে চাহিদাও। শহরের বাজারগুলিতে কুলের দাম প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকা। বাগান থেকে পাইকাররা ৩০-৩৫ টাকা দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।” পুরাতন মালদহের মঙ্গলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার এক পাইকার তপন মণ্ডল বলেন, “থাইল্যান্ডের এই শংকর কুল যদি বিদেশে রপ্তানির ব‍্যবস্থা করা হত তাহলে কৃষকরা কেজি প্রতি ১০০ টাকার বেশি দাম পেতেন। কিন্তু সেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।”

[আরও পড়ুন: বাড়ির সবজি বাগানে কীভাবে সার প্রয়োগ করবেন? জেনে নিন নিয়মকানুন]

তবে এই কুলের চাষ বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে মালদহের উদ্যানপালন দপ্তর। আপেল কুল চাষের জন্য চাষিদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। তাতে মিলেছে ব্যাপক সাফল্য। ফি বছর উৎপাদন বাড়ছে। উদ‍্যানপালন দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, আপেল কুলের চাষ এই জেলায় প্রথম শুরু হয়েছিল ইংলিশবাজার ব্লকের বাগবাড়ি এলাকায়। জৈব পদ্ধতিতে চাষ শুরু করেন আবদুস সালাম নামের এক চাষি। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের বাসিন্দা তিনি।আপেল কুল চাষ করতে মালদহে এসেছিলেন। চাষ ছড়িয়ে পড়তেই বারাসাত ফিরে যান আবদুস সালাম।তাঁর আপেল কুল এখন গোটা জেলায় প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে।

আমচাষ ছেড়ে অনেকেই ঝুঁকেছেন এই চাষে। জেলা উদ্যানপালন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহ জেলায় প্রায় ১২৫০ বিঘা জমিতে এই আপেল কুলের চাষ হচ্ছে। এবার বাজারে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এই প্রজাতির কুল। একেকটি কুলের সাইজ ছোট ছোট আপেলের মতো। ওজন ২৫ থেকে ৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে এই চাষের ক্ষেত্রে কোনও রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। গাছের গোড়ায় গোবর জাতীয় সার দিলেই ফলন বাড়ে। এক বিঘা জমিতে ন্যূনতম ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা খরচ হয়ে থাকে।

সরকারি সহায়তায় চাষিরাও এই আপেল কুল চাষে উদ্যোগী হচ্ছেন। যদি বিদেশে রপ্তানি করার উদ‍্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে চাষিরা আরও উপকৃত হবেন বলে মালদহের উদ্যানপালন দপ্তরের আধিকারিকরাও মনে করছেন। সামন্তবাবু জানান, আপেল  কুলের চাহিদা থাকায় চাষের পরিধি আরও বাড়াতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকেও উদ্যোগী করে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি এটিএম রফিকুল হোসেন বলেন, “আমরা বরাবরই উদ‍্যানপালনের ক্ষেত্রে জোর দিয়ে আসছি। জেলায় আপেল কুলের চাষ বেড়েছে। উৎপাদন বেড়েছে। বিদেশে রপ্তানির বিষয়টি নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করব।”

[আরও পড়ুন: উত্তরের চা বলয়ে ‘রেড স্পাইডারে’র হামলা, ৩০% উৎপাদন কমার আশঙ্কা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement