নন্দন দত্ত, সিউড়ি: পোকার আক্রমণে ক্ষতির মুখে ময়ূরেশ্বরের দু'টি ব্লকের চাষিরা। বিভাগীয় কৃষি অধিকর্তা সূর্যনারায়ণ ঘোষ জানান, "পেকে যাওয়া ধানের গোড়ায় এই পোকার আক্রমণ শুরু হয়েছে। এই সময় কিছু পরামর্শ দেওয়ার নেই। দ্রুত ধান কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নলহাটির কৃষি বিশেষজ্ঞ দলকে ইতিমধ্যে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।" দিনে চড়া রোদ, রাতে ঠান্ডা হাওয়া, এমন পরিবেশে ধানের শত্রু পোকা দ্রুত ছড়িয়ে পরে। ময়ূরেশ্বরের সাতটি পঞ্চায়েতে বোরো ধান চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মাজরা পোকার আক্রমণে। তার মধ্যে ময়ূরেশ্বর, কুন্ডলা, দাসপলশার মাঠে ধান কাটার জন্য মাঠে কাস্তে চালানোর পরিস্থিতি নেই। এছাড়াও কলেশ্বর, উলকুন্ডা, ঢেকা ষাটপলশার মাঠে ক্ষতি হলেও চাষের খরচা উঠবে।
জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়ূরেশ্বর দুই ব্লক থেকে ১৫০০ হেক্টর জমিতে মাজরা পোকার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন চাষিরা। ব্লক কৃষি দপ্তর সূত্রে খবর এই রিপোর্ট পাঠান হয়েছে জেলায়। ব্লকের কৃষি আধিকারিক উজ্জ্বল রায় জানান, "যাঁরা সরকারিভাবে বিমার আওতায় আছেন তাঁরা ধানের ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। জেলায় সেই মর্মে রিপোর্ট পাঠান হয়েছে। জেলার তরফে আর্থিক ক্ষতির জন্য আবেদন করবেন আধিকারিকেরা।" জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে খবর, ময়ূরেশ্বর এক ব্লকের ঝিকড্ডা, বাজিতপুর, বড়তুরিগ্রাম, ডাবুক, তালোয়া-সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার গ্রামের চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এক নম্বর ব্লকের চাষি হরিরঞ্জন সাহা ও সুবোধ বাগদি জানান, "সাধারণত ধান গাছে যখন ফুল আসে তখন গোড়ায় এই পোকা দেখে আমরা প্রতিকার করি। কিন্তু ধান পেকে যখন পুষ্ট হচ্ছে তখন পোকায় গাছের গোড়া কেটে দিচ্ছে। তাতে ধানের ফলন হতে হতে শুকিয়ে যাচ্ছে। চরম অসহায় পরিস্থিতি।”
ময়ূরেশ্বর দুই ব্লকের চাষি বিশ্বনাথ ধীবর, দিলীপ মণ্ডল জানান, "জমিতে জল থাকলে সেখান থেকে মাজরা পোকা ছড়িয়ে পরে। তাই জমির জল কেটে দিয়েছিলাম। রাতে ধান গাছে লুকিয়ে থাকা পোকা গাছের গোড়ায় গিয়ে তার রস চুষে খেয়ে নিচ্ছে। ফলে কিছুদিনের মধ্যে ফুলে ওঠা ধান শুকিয়ে ঝড়ে পরছে। চোখের সামনে ফলন্ত ধানকে মরতে দেখতে হচ্ছে।" কৃষি অধিকর্তা সূর্য নারায়ণ ঘোষ জানান, "ময়ূরেশ্বর-সহ জেলার কয়েকটি জায়গা থেকে খবর পেয়েছি। কিন্তু এখনও রিপোর্ট হাতে পায়নি। আংশিকভাবে বিমার টাকা পাওয়া যায় কিনা তা দেখতে হবে। তবে এমন সময় ধানে আক্রমণ হয়েছে যখন আর কিছু করার নেই। দ্রুত ধান কেটে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই কোনও।"
