বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: কেনিয়া ও নেপাল থেকে সস্তায় চা আমদানি বেড়েই চলেছে। বিপাকে উত্তরের চা শিল্প! চা বণিকসভাগুলির সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৪ সালের তুলনায় চলতি বছরে বিদেশ থেকে চায়ের আমদানি বেড়েছে প্রায় ৩ মিলিয়ন কেজি। বিদেশ থেকে সস্তায় চায়ের আমদানি বেড়ে চলায় দেশের চায়ের আভ্যন্তরীণ চায়ের বাজারে খারাপ প্রভাব পড়ছে।
কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে ভারতে আমদানির পরিমাণ ছিল ২৫.৭১ মিলিয়ন কেজি। ২০২৪ সালে একই সময়ে বিদেশ থেকে চা আমদানির পরিমাণ ছিল ২২.৬৭ মিলিয়ন কেজি। কেনিয়া ও নেপাল থেকে সস্তা চা আমদানি বেড়েছে। উত্তরের গড় উৎপাদন খরচের চেয়ে কমে সেখানে নিম্নমানের চা তৈরি হয়। বিদেশ থেকে সস্তায় চা আমদানি দেশের চায়ের আভ্যন্তরীণ বাজারে খারাপ প্রভাব ফেলছে।
দেশের অভ্যন্তরে দেশীয় চায়ের চাহিদা কমে যাওয়ায় কাঁচা চা পাতার দাম ক্রমশ কমছে। ফলে লোকসানের মুখে পড়ছেন উত্তরের চা চাষিরা। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, "আমরা দীর্ঘদিন নেপাল ও কেনিয়া থেকে নিম্নমানের চা আমদানি নিয়ে প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। কেন্দ্রীয় সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও দরবার করেছি। কিন্তু লাভ হয়নি।" একমত কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান সতীশ মিত্রকার। ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফোরাম অব স্মল টি গ্রোয়ার্স'-এর চেয়ারম্যান রজত কার্জি অভিযোগ করেন, নেপালের নিম্নমানের চায়ের জন্য দার্জিলিং চায়ের পাশাপাশি ডুয়ার্সের অর্থডক্স চায়ের বদনাম হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার দেখেও না দেখার ভান করছে। চা বণিকসভাগুলো সূত্রে জানা গিয়েছে, নেপাল সরকার ভারতীয় চা রপ্তানির ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ হারে শুল্ক লাগু করেছে। অথচ নেপাল থেকে ভারতে শুল্ক ছাড়াই বছরে ১১ মিলিয়ন কেজি সিটিসি এবং ৫ মিলিয়ন কেজি অর্থডক্স চা ভারতে ঢুকছে। নেপালের সস্তা এবং গুণমানে খারাপ। চা শিলিগুড়ির বাজারে ঢোকার পর এক শ্রেণির ব্যবসায়ী দার্জিলিং চা হিসেবেও বিক্রি করছেন।
ফলে একদিকে যেমন দার্জিলিং চায়ের গৌরব ক্ষুন্ন হচ্ছে, অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের ২১০টি বটলিফ কারখানায় উৎপাদিত সিটিসি এবং অর্থডক্স চায়ের বাজারে সংকট ঘনিয়েছে। অভিযোগ, ৯০ টাকা কেজি দামেও চা বিক্রি হচ্ছে না। লোকসানের কারণে অনেক কারখানা ইতিমধ্যে চা উৎপাদন কমিয়েছে। উত্তরের প্রায় ৫০ হাজার ছোট চা বাগানের ১ হাজার ২৫০ মিলিয়ন কেজি কাচা চা পাতা থেকে বটলিফ কারখানাগুলোতে বছরে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়ে থাকে। কেনিয়া ও নেপালের চা বাজারের ভারসাম্য নষ্ট করায় বটলিফ কারখানাগুলো উৎপাদন কমাতে কাচা চা পাতার চাহিদায় টান পড়েছে!
এদিকে শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্য চা পাতার বাড়ে না। গত বছর চা পর্ষদ তাড়াতাড়ি চা পাতা তোলা ও উৎপাদন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুটি কারণে, প্রথমত চায়ের উৎপাদনের পরিমাণ কমানো এবং গুণমান বজায় রাখা। চা চাষিরা আশা করেছিলেন, কম উৎপাদনের ফলে ভালো দাম পাওয়া যাবে। কিন্তু সেটা হয়নি। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে উত্তর ভারতে চা উৎপাদন ৯৯ মিলিয়ন কেজি কম হলেও চায়ের দাম কমেছে। ২০২৪ সালের শেষের দিকে আমদানি বৃদ্ধি এই দাম কমে যাওয়ার কারণ বলেই মনে করছেন চা বণিকসভার কর্তারা।
