অরূপ বসাক, মালবাজার: প্রকৃতির তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ডুয়ার্সের একাধিক চা-বাগান। কোথাও সড়ক উড়ে গিয়েছে, কোথাও কালভার্ট ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। নদীর গতিপথ বদলে চা-বাগানের বিস্তীর্ণ জমি ক্ষতিগ্রস্ত। অনেক জায়গায় সীমানা প্রাচীর ধসে গিয়ে ফ্যাক্টরি এলাকা উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন বাগানে মাটি আলগা হয়ে পড়ে গিয়েছে অসংখ্য ছায়াগাছ।
ডুয়ার্সের জিতি চা বাগানের 'নয়া লাইন' শ্রমিক মহল্লার একমাত্র রাস্তায় থাকা কালভার্টটি সম্পূর্ণ ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিপাকে অন্তত ৭০টি পরিবার। একই পরিস্থিতি গাঠিয়া লাইনেও। এখানে ৬০টি পরিবার বিপাকে পড়েছে। শনিবার রাতেই জল ঢুকে পড়ে বাগানের ৮ নম্বর শ্রমিক মহল্লায়। ফলে শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। বাগানের ৩ নম্বর সেকশনেও কালভার্ট ভেঙে গিয়েছে। ফ্যাক্টরির ৭০ মিটার দেওয়াল ভেঙে গিয়েছে প্রবল জলোচ্ছ্বাসে। জিতি চা বাগানের ম্যানেজার নবীন মিশ্র বলেন, "কৃষ্ণা লাইন শ্রমিক মহল্লা গাঠিয়া নদীর একেবারে ধারে। নদী যে কোনও সময় পথ বদলে ঢুকে পড়তে পারে ভিতরে।"
বাগানের শ্রমিক কল্যাণ আধিকারিক পার্থ ভাদুড়ি জানান, "বাগানের ভিতরের রাস্তাগুলি ও কালভার্ট ভেঙে যাওয়ায় এখন কাঁচা পাতা ফ্যাক্টরিতে পৌঁছে দিতে সমস্যা হচ্ছে। ফলে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত।" কারণ, চা-বাগানে ঢোকার একমাত্র রাস্তাও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একাধিক কালভার্ট ভেঙে পড়েছে। বাগানের ম্যানেজার সত্যনারায়ণ সাউ বলেন, "কালভার্টগুলি মেরামত না করলে গোটা কাজ বন্ধ হয়ে যাবে।" হিলা চা-বাগানের একমাত্র রাস্তাও ক্ষতিগ্রস্ত। ম্যানেজার ব্রিজেশ রাই বলেন, "এই অবস্থায় বাগানের মালপত্র কিংবা মানুষ আসা-যাওয়া করতে পারছে না। দ্রুত রাস্তা ঠিক না হলে পুরো উৎপাদন ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়বে।"
মরাঘাট চা-বাগানের অন্তত ৫০ হেক্টর জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলার ক্ষুদ্র চা চাষিরাও এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অনেকেরই ছোট ছোট বাগান জলমগ্ন হয়েছে। চা বণিকসভা আইটিপিএ-র ডুয়ার্স শাখার সম্পাদক রাম অবতার শর্মা বলেন, "এই ভয়াবহ ক্ষতির হাত থেকে চা শিল্পকে রক্ষা করতে হলে রাজ্য সরকারের অবিলম্বে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপের আবেদন জানাচ্ছি। চা উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ সময় শীতের আগের এই পর্যায়ে এমন দুর্যোগ চা শিল্পের উপর বিশাল প্রভাব ফেলবে।"
