অভিরূপ দাস: চালানি মাছের প্রয়োজন কমছে। পশ্চিমবঙ্গের বাজার দখল করছে বাংলার নিজস্ব পুকুরের রুই-কাতলা-মৃগেল। আর তা চাষ করছেন মহিলারা। জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি মহিলাদের আত্মনির্ভর করতে বিশেষ পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার। পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়, ভেটেরিনারি কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে চালু করেছে এক প্রকল্প। জৈব প্রযুক্তি বিভাগের সে প্রকল্পের নাম 'বায়োটেক কিষান হাব।' এই প্রকল্পে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বাংলার পাঁচ জেলাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
রাজ্য প্রাণী এবং মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরেক্টরেট অফ রিসার্চ এক্সটেনশন অ্যান্ড ফার্মসের ডেপুটি ডিরেক্টর ড. কেশবচন্দ্র ধাড়া জানিয়েছেন, নীতি আয়োগ, রাজ্যের বেশ কিছু জেলা সম্ভাবনাময় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পর্যবেক্ষণ করে দেখা গিয়েছে, এই সব অঞ্চলে সামান্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে বদলে যেতে পারে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। সেইমতো বাংলার পাঁচটি জেলা বীরভূম, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুরে বিশেষ সাহায্য করছে রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পে যে সমস্ত কৃষকদের সাহায্য করা হচ্ছে তার আশি শতাংশই মহিলা।
ড. কেশবচন্দ্র ধাড়া জানিয়েছেন, "বাঙালিদের মধ্যে মাছের চাহিদা বিপুল। গ্রামের গরিব কৃষক মহিলার নিজস্ব পুকুর নেই। কিন্তু রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তরের হাতে খাল-বিল রয়েছে। ওই পাঁচ জেলায় দশ-পনেরো জন যৌথভাবে একসঙ্গে মাছ চাষ করছে। সেখানে পঞ্চায়েত আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে। আপাতত যে রুই-কাতলা-মৃগেল চাষ হচ্ছে তা জেলার বাজারেই বিক্রি হচ্ছে। এই উৎপাদন আরও বাড়লে গোটা বাংলায় ছড়িয়ে পড়বে। তখন অন্ধ্রের দিকে আর তাকিয়ে থাকতে হবে না।" শুধু মাছের চারা নয়, পাঁচ জেলায় মহিলাদের আত্মনির্ভর করতে মূলত তিনটে জিনিসের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, মাছ-মুরগি এবং ছাগল। গ্রামের মহিলা কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে মাছের চারা-মুরগির বাচ্চা, কালো ছাগল বা ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট।
চাষ করতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হলে সমাধান কোন পথে? তার জন্যেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি প্রাণী মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই পাঁচ জেলার তিনশো কৃষককে ডাকা হয়েছিল। তাঁদের সঙ্গে চাষবাসের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন বিজ্ঞানী বিনীতা চৌধুরি, ড. হেমা ত্রিপাঠী। উপস্থিত ছিলেন প্রাণী মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাস, বর্তমান উপাচার্য ড. তীর্থকুমার দত্ত। উৎসাহ দেওয়ার জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছে পাঁচজন মহিলা কৃষিজীবীকে। যাঁর মধ্যে রয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের বাবলি মুর্মু, মালদহের কবিতা প্রামাণিক, বীরভূমের অর্চনা মাল, মুর্শিদাবাদের শ্যামলী রাজমল্ল, নদিয়ার হরিণঘাটার সুস্মিতা দাস।
