অমিত সিং দেও, মানবাজার: তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে....! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই কবিতা পাঠ্যপুস্তকে থাকলেও বাস্তবের মাটিতে সেই তালগাছ যেন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে গ্রামাঞ্চল থেকে ধীরে ধীরে একপ্রকার উধাও হয়ে যাচ্ছে এই উঁচু গাছ। তাল গাছ কমে যাওয়ার ফলে শুধু জলভরা সন্দেশ বা তালের বড়ার চল যেমন কমেছে। তেমনই প্রকৃতির উপরও পড়েছে কোপ। তাই বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকাতে রাজ্যের পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে তালগাছ লাগানো হবে।
আগামী বর্ষায় দক্ষিণবঙ্গের চার জেলা বর্ধমান, বীরভূম, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলায় ৭৫ হাজার তালগাছের চারা রোপণ করবে বনদপ্তর। এই প্রকল্প সফল হলে আগামী দিনে রাজ্যের সর্বত্র তালগাছ রোপন হবে। ইতিমধ্যেই এই চার জেলায় বীজ সংগ্রহ করে চারা তৈরির কাজ শুরু করেছে বন দফতর। আগামী বছর বর্ষার মরশুমে সেগুলি রোপন হবে। রাজ্যের মুখ্য বনপাল ( দক্ষিণ-পশ্চিম চক্র) বিদ্যুৎ সরকার বলেন, "পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে আগামী বর্ষার মরশুমে তিনটি সার্কেলে ৩০০ কিমি তাল গাছের চারা রোপণের কথা আছে।"
আগে গ্রামের ধান জমি হোক বা মাটি। পুকুর হোক বা মেঠো পথ। সর্বত্রই তাল গাছকে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যেতো। শুধু তাই নয় গ্রামের দিকে সীমানা চিহ্নিত করার জন্যও তাল গাছ লাগানো হতো। তবে বর্তমানে নতুন করে তেমন আর এই গাছ লাগানো হয় না। উপরন্তু হাজার হাজার তাল গাছ নিধন চলছে অবাধে। সম্প্রতি দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায় মারাত্বক ভাবে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটছে। পাশাপশি মৃত্যু ঘটছে গবাদি পশুর। বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, তালগাছকে 'প্রাকৃতিক আর্থিং' ব্যবস্থা হিসাবে কাজে লাগে। কারণ তালগাছের শিকড় অনেক গভীরে যায়। তালগাছের কাণ্ডের ভেতরে পানীয় জল ও আর্দ্রতা বেশি থাকে। এছাড়া ওই গাছের উচ্চতা প্রায় ১০০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে।
ফলে বজ্রপাতের সময় উচ্চ তাপমাত্রায় কিছুটা সহায়ক হয় তাপ ও বিদ্যুৎ প্রবাহকে কম প্রতিরোধ করে পার করতে। এতে তাল গাছ নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিদ্যুৎ প্রবাহ দ্রুত মাটিতে চলে যেতে পারে। তাই রাজ্যের তরফে বনদফতরের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় চক্রের বাঁকুড়া, দক্ষিণ পশ্চিম চক্রের পুরুলিয়া এবং দক্ষিণ -পূর্ব চক্রের বীরভূম ও বর্ধমান জেলায় পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে তাল গাছের চারা রোপণের লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই মর্মে গত ২৩ সেপ্টেম্বর বনদপ্তরের তিনটি চক্রের আধিকারিকদের নিয়ে ভারচুয়ালি একটি বৈঠক করেন রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (অর্থ) তথা এই প্রকল্পের নোডাল অফিসার রাজু দাস। বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, চার মিটার অন্তর অন্তর এক একটি চারা রোপণ করা হবে। মোট ৩০০ কিমি পথে ওই বিপুল সংখ্যক চারা রোপণ করা হবে। যার মধ্যে কেন্দ্রীয় চক্রের বাঁকুড়া জেলায় ১৫০ কিমি, দক্ষিণ- পশ্চিম চক্রে বর্ধমান জেলায় ১০০ কিমি এবং দক্ষিণ-পূর্ব চক্রের বীরভূম ও বর্ধমান জেলায় ৫০ কিমি পথ চিহ্নিত করা হয়েছে। এই প্রকল্পের প্রাথমিক একটি রিপোর্ট গত ৮ অক্টোবর অরণ্য ভবনে জমা পড়েছে। বনভূমি নয় এমন রাস্তার ধারে এই তালের চারা রোপণের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিডিও ও গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গেও বন দফতরে এই মর্মে আলোচনা করে স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে।
