shono
Advertisement
Bishnupur

দুর্গাপুজোর ফ্যাশনে নয়া ট্রেন্ড, বিষ্ণুপুরের ১২ হাতের বালুচরিতে এবার অখণ্ড রামায়ণ

সাবেকিয়ানা থেকে বেরিয়ে বালুচরিতে বৈচিত্র আনার চেষ্টা করছেন নবীন প্রজন্মের শিল্পীরা।
Published By: Suhrid DasPosted: 04:21 PM Aug 18, 2025Updated: 10:37 PM Aug 20, 2025

টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: দুর্গাপুজোয় বালুচরির ফ্যাশন ট্রেন্ডে এবার রামায়ণের কাহিনি। বিষ্ণুপুরের শিল্পী অমিতাভ পাল প্রতি বছরই তাঁর তৈরি শাড়িতে সাহিত্য-সংস্কৃতির রূপ ফুটিয়ে তোলেন। তাঁর বুননে কখনও উঠে এসেছে শকুন্তলার কাহিনি, কখনও বা আদিবাসী নৃত্য। এবছর তাঁর হাতের জাদুতে শাড়ির আঁচল ও জমিতে ফুটে উঠেছে বাল্মীকির রামায়ণ। দাম রাখা হয়েছে দেড় লক্ষ টাকা। তবে এই দাম কেবল সুতোর বা সময়ের নয়, বরং এক মহাকাব্যের কাহিনিকে ধরে রাখা শিল্পেরও। আঁচল থেকে বর্ডার, পল্লু থেকে খোপা, সবখানেই ফুটে উঠেছে মহাকাব্যের ধারাবাহিক ছবি। সেখানে দেখা যাচ্ছে রাবণকে বাধা দিতে আসছে জটায়ু, যজ্ঞের ঘোড়া আটকে রাখা লব-কুশ, আশ্রমে লব-কুশকে বাল্মীকির পড়ানো, রাম, লক্ষ্মণ, সীতার বনবাস যাত্রার মতো ‘সাত কাণ্ড’।

Advertisement

পুরো শাড়িটি যেন এক চলমান চিত্রকাহিনি, যেখানে চোখ বোলাতেই গল্পের ভেতর দিয়ে হেঁটে যেতে পারেন। অমিতাভ পালের কথায়, “বালুচরীর প্রাণই হল গল্প। আমি চাইছিলাম রামায়ণের প্রতিটি মুহূর্ত যেন এই শাড়ির বুননে জীবন্ত হয়ে ওঠে। পরতে পরতে যেন একটি আখ্যান গড়ে ওঠে।” শিল্পী আরও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তন্তুজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রবীন্দ্রনাথ রায়কে। তাঁর উৎসাহ ও আর্থিক সহায়তা ছাড়া এই স্বপ্নপূরণ সম্ভব হত না বলে জানিয়েছেন বালুচরি শিল্পী। অমিতাভ জানালেন, “রবীন্দ্রনাথবাবু আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এই কাজকে শুধু শিল্প নয়, ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ হিসেবেই দেখেছেন।”

শাড়িতে এই নকশা ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

পুজোর বাজারে এই শাড়ি এক বিশেষ দিক নির্দেশ করছে। এবার ক্রেতারা কেবল সাজগোজের পোশাক চাইছেন না, বরং খুঁজছেন গল্পসমৃদ্ধ শিল্পকর্ম। শহরের বুটিক থেকে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম—সবখানেই থিমভিত্তিক হ্যান্ডলুমের চাহিদা বাড়ছে। ফ্যাশন বিশেষজ্ঞদের মতে, পুজোর ফ্যাশনে এবারের বড় প্রবণতা হল ‘ন্যারেটিভ টেক্সটাইল’। অর্থাৎ পোশাককে ক্যানভাস করে গল্প বলা। ঐতিহ্যবাহী বালুচরীর বুননে রামায়ণের পূর্ণ কাহিনি এই প্রবণতারই সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হাতে বোনা ঐতিহ্যবাহী শাড়ির প্রতি ঝোঁক উৎসাহিত করেছে বালুচরি শিল্পকে। ব্যবসায়ীদের কথায়, বিলাসপণ্যের বাজারে মন্দা নেই। বরং যারা কিনছেন, তাঁরা শাড়ির পেছনের গল্প, নকশার আখ্যান ও শিল্পীর নাম জেনে তবেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। বালুচরী শাড়ির উৎপত্তি মুর্শিদাবাদের বালুচর গ্রামে হলেও ১৯ শতকের শেষদিকে সেই শিল্প প্রায় হারিয়ে যায়। পরে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে তাঁতিরা এই বয়নশিল্পকে নতুন করে প্রাণ দেন। এখানে রেশমের উপর সূক্ষ্ম বুননে দেবদেবীর কাহিনি, রামায়ণ-মহাভারতের দৃশ্য ও লোকজ আখ্যান ফুটিয়ে তোলা হয়। ধীরে ধীরে বিষ্ণুপুরই বালুচরীর প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে এবং আজ বালুচরী মানেই বিষ্ণুপুরের সুনাম বিশ্বজোড়া।

কয়েক বছর ধরে সাবেকিয়ানা থেকে বেরিয়ে বালুচরিতে বৈচিত্র আনার চেষ্টা করছেন নবীন প্রজন্মের শিল্পীরা। শাড়িতে উঠে এসেছে মন্দিরের গায়ের টেরাকোটাও। বুনেছেন মুগা, কটকি, এরি, নকসিকাঁথার ডিজাইন। অতীতে বিভিন্ন থিমের উপর বালুচরি, কারুকলা, অরুণিমা, অষ্টমী, তিনলাখি বালুচরিও নজর টেনেছে ভালো। এবার নজর টানবে তুলনায় কমদামী দেড়লাখি এই বালুচরি শাড়ি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • দুর্গাপুজোয় বালুচরির ফ্যাশন ট্রেন্ডে এবার রামায়ণের কাহিনি।
  • বিষ্ণুপুরের শিল্পী অমিতাভ পাল প্রতি বছরই তাঁর তৈরি শাড়িতে সাহিত্য-সংস্কৃতির রূপ ফুটিয়ে তোলেন।
  • তাঁর বুননে কখনও উঠে এসেছে শকুন্তলার কাহিনি, কখনও বা আদিবাসী নৃত্য।
Advertisement