শম্পালী মৌলিক: ‘দি অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’ মুক্তির আগে থেকেই খবরে। কারণ, রিলিজ পিছিয়ে যাওয়া, প্রযোজকের সমস্যা, ফেডারেশনের নিয়ম লঙ্ঘন ইত্যাদি নানাবিধ বিষয়ে। অবশেষে ছবি মুক্তি পায় জট কাটিয়ে। ততদিনে হাইপ তৈরি হয়ে গিয়েছে। এবং ট্রেলার জানান দিয়েছিল হাইভোল্টেজ হিংস্রতা থাকবে।
রবিবারে সাউথ সিটির মাল্টিপ্লেক্সে গিয়ে দেখলাম প্রবল হইহই এবং হাউসফুল। পাল্প ফিকশনের ধাঁচের মেকিং, পোস্টারটাও তেমন। কায়দা-সমৃদ্ধ ছবি বানিয়েছেন জয়ব্রত। তবে এক্ষেত্রে ফিকশনের ভাগ কিছুটা কম। একটা কুড়ি কোটি টাকার অ্যান্টিক মদের বোতল চুরি করা নিয়ে গল্প এগোয়। কাহিনি কয়েকটা গোলমেলে ছেলে, দুটি মেয়ে আর এক পোষ্যকে নিয়ে প্রধানত। খুনখারাপি, মেজাজের সুনামি, ননসেন্সের পথ ধরে ডার্ক কমেডি গতি বৃদ্ধি করে। প্রথম দৃশ্য থেকেই ইতর শব্দের এমন তোড় বেশ বাড়াবাড়ি মনে হয়। অপরাধীদের অবস্থান বোঝা গেল এতে ঠিকই, কিন্তু সাধারণ বাঙালির মুখ কি এতটাই তিতকুটে! ট্যারান্টিনোকে ট্রিবিউট দেওয়া, স্টাইলাইজড ইত্যাদি মেনে নিয়েও বলতে হচ্ছে– থ্রিলটা দারুণ হলেও এত নৃশংসতার প্রদর্শন শেষ কবে দেখেছি মনে পড়ে না। ‘অ্যানিম্যাল’ও পিছিয়ে থাকবে। শুধুই হল ভর্তি করাই কি মুখ্য?
চিত্রনাট্য অনুযায়ী কেউ ঠান্ডা মাথার হিটম্যান, দুর্ধর্ষ চোর, কেউ বা লক খুলতে ওস্তাদ, অর্থাৎ সকলেই বিশেষ শিল্পী। তাদের বেঁচে থাকার লড়াইটা ধরা হয়েছে ছবিতে। তাদের প্রেম, অপ্রেম, ঈর্ষা, আস্থা, বিশ্বাসঘাতকতা, বন্ধুত্ব সবটা জড়িয়ে র-ফিল দেওয়া হয়েছে ছবিজুড়ে। সিনেমা যখন বাস্তব সেঁচে তৈরি, যৌনতাও আছে। অস্থির এবং ঝাঁকুনি দেওয়ার মতো। কিন্তু আদর কোথায়? ঘনিষ্ঠতার দৃশ্যগুলো আরও পরিপক্বতার দাবি রাখে। ফোর্থ ওয়াল ভেঙে রুদ্রনীলের কথোপকথন মন্দ লাগে না। তবে তার মাত্রা কম হলে ভালো হত।
অভিনেতারা প্রত্যেকেই বিশ্বাসযোগ্য। সবার প্রথমে সৌরভ দাসের নাম করতে হয়, যে ‘জীবন’ নেয়। যেমন সুন্দর তেমন ভয়ংকর। রুদ্রনীল ঘোষের ‘দীনু’ তাঁর ম্যানারিজম ঝেড়ে ফেলে আদ্যন্ত স্বাভাবিক। ভালো লেগেছে তাঁকে। ঋষভ বসুর ‘শচীন’ এই দলে যেন ছিপছিপে কমবয়সি ময়ূর। অমিত সাহা খুব ভালো অভিনেতা, তাঁর ‘বীরেশ্বর’কে জোকারের মতো ব্যবহার না করলেই ভালো হত। রাহুল অরুণোদয় ছবিতে মোটেই ‘রাখাল’ বালক নন, এক কথায় অনবদ্য। পায়েল সরকারের ‘রিচা’ স্ক্রিনে এলে তার দিকেই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছিল। অনুরাধা মুখোপাধ্যায়, দীনুর প্রতিবেশী ‘এষা’র চরিত্রে, তাঁর অভিনয়গুণে পরিচ্ছন্নতার অবসেশন সংক্রামক হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। মনে থাকে তার সঙ্গী ‘কৃষ্ণেন্দু’কে।
‘কিমলিং’ নামক এক অদ্ভুত বসের চরিত্রে সুদীপ মুখোপাধ্যায় মজাদার। হালকা সেক্স, তুমুল রক্তারক্তি, ‘ভাইবোন’-এর প্রেম, বলিউডের নস্টালজিয়া, ট্যারান্টিনো-রডরিগেজ-কোরিয়ান ড্রামার আদল– সব মিলিয়ে বক্স অফিস ধরার ক্ষেত্রে ঠিকঠাক। তবে চরিত্রদের ব্যাকস্টোরি স্পষ্ট নয়। সৌম্য ঋতের মিউজিক একদম ছবির মেজাজ বের করে আনতে পেরেছে। অর্ণব লাহার সিনেমাটোগ্রাফি বেশ লাগল। ছবির দৈর্ঘ্য কম হতে পারত। তবে তার জন্য অধৈর্য লাগবে না। কিন্তু এসবের পরেও সিনেমার গল্পটা জোরালো হতে হয়। আশা করি জয়ব্রত এ বিষয়ে ভাববেন পরে। তবে বক্স অফিস যদি সব ভুলিয়ে দেয় তাহলে মুশকিল।
