shono
Advertisement
Lakshmikantapur Local Review

সীমান্তের সমস্যা, খেটে খাওয়া মানুষের যন্ত্রণার কথা বলে 'লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল', পড়ুন রিভিউ

কেমন হল রামকমল মুখোপাধ্যায়ের পরিচালিত ছবিটি?
Published By: Sandipta BhanjaPosted: 07:21 PM Nov 27, 2025Updated: 07:36 PM Nov 27, 2025

উপাসনা রায়: বাঙালির ড্রয়িংরুম থেকে একবারে মফস্বল বা সীমান্তের কাছাকাছি নিয়ে যায় রামকমল মুখোপাধ্যায়ের ছবি 'লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল'। সরস্বতী, মালতী, কল্যাণী অথবা রুকসানার গল্প বলে। শহর আর মফস্বলের সেতু হয়ে থেকে যায় যারা। দুই বাংলার রেষারেষিতে, সীমান্তের লক্ষ্মণরেখার দরাদরিতে স্বজনহারা যারা। দুই দেশের মধ্যে ধর্ম নিয়ে বিবাদ এবং লোফালুফিতে ভিটেহারা যারা। এই মুহূর্তে এসআইআর প্রসঙ্গে যখন আলোড়িত দেশ, উত্তপ্ত বাংলা তখন 'লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল' আরও অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।

Advertisement

কিছুদিন আগের কথা, সদ্য দিল্লির এক প্রান্ত থেকে মজুর, শ্রমিকদের ধর্ম দিয়ে চিহ্নিত করে বাংলাদেশে পাঠানোর খবর আসতে শুরু করেছে সবে। দক্ষিণ কলকাতার এক চেনা ক্যাফেতে বসে আছি। দুই মহিলার কথোপকথন কানে আসে। তারা সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণির সেটাও তাদের কথাবার্তায় বোঝা যায়। এবং দুজনেই খুব উত্তেজিত একটা বিষয় নিয়ে। সম্প্রতি তাদের একজনের বাড়ির দুজন কাজের লোক 'লাপাতা', শোনা যাচ্ছে তারা নাকি বাংলাদেশি মুসলিম ছিল, ভারতীয় হিন্দু নাগরিক পরিচয় দিয়ে কাজে ঢুকেছিল। এরপর আলোচনা যে ধর্মান্ধতা এবং সাম্প্রদায়িকতার দিকে এগোয় তা বুঝতে খুব একটা অসুবিধে হওয়ার কথা না। এটা আমার নিজের কানে শোনা। কিন্তু তাদের কথার সত্যতা আমার যাচাই করা হয়নি। তারাও যাচাই করেনি সেটা কথা শুনেই বোঝা যায়। ‘লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল’ দেখতে গিয়ে সেই দিনটার কথা হঠাৎ মনে পড়ে গেল। এরপর এসআইআর বিতর্ক ঘিরে অনেক মানুষ ভিটেছাড়া হয়েছেন সেখবর প্রায়ই আসছে। এই কারণেই ছবিটা একটা ছাপ রেখে যায়।

মালতী (চান্দ্রেয়ী ঘোষ) আয়া হিসাবে কাজ করে কলকাতার এক অভিনেত্রী (সংগীতা সিনহা) এবং তার লেখক স্বামীর (ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত) ফ্ল্যাটে। সরস্বতী (সায়নী ঘোষ) রান্নার কাজ করে লিভ টুগেদার করা এক অল্পবয়সি প্রেমিক-যুগলের (জন এবং রাজনন্দিনী) বাড়িতে। আর কল্যাণী (পাওলি দাম) আয়া হিসাবে কাজ করে আরও এক বাঙালি দম্পতি উৎপল এবং লাবণ্যর (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এবং কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় অভিনীত) পরিবারে। এরা তিনজনেই ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে। লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল ধরেই তাদের নিত্যদিনের যাতায়াত। একদিকে এই তিনজনের আশা, আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে শহুরে এই মানুষগুলোর চাওয়া-পাওয়া। কিংবা রয়েছে দুই তরফেরই না পাওয়ার গল্প। মালতী সন্তান চায়, দাদা-বউদির বাড়িতে দত্তক নেওয়া শিশু সন্তান এলে সেও ভাবে যদি তার পক্ষেও দত্তক নেওয়া সম্ভব হত। স্বামী বোঝায়, অর্থাভাব থাকলে এই স্বপ্ন দেখা যায় না। তাই সে এক কুকুরছানা উপহার দেয় মালতীকে, ততদিনে মালতী কাজ ছেড়ে দিয়েছে, কারণ বউদি চায় না তাদের বাচ্চা মালতীর ন্যাওটা হয়ে পড়ুক। সরস্বতী অশিক্ষিত, খেটে খাওয়া হলেও সে স্বপ্ন দেখতে জানে, তার প্রেমটাও বেশ গোছানো। সে দেখে দাদা-দিদির ঝগড়া, দূরে চলে যাওয়া। আর কল্যাণী? সে নিজের পরিচয় গোপন করে কাজ করছে। বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। রুকসানা থেকে সে কল্যাণী হয়েছে তাও পরিস্থিতির চাপে। কিন্তু মন দিয়ে সে কাজ করে, তার যত্নে, স্নেহে কোনও ফাঁকি নেই। উৎপল পক্ষাঘাতের শিকার। মনেপ্রাণে এবং শিকড়ে বাঙাল। স্ত্রী লাবণ্যকে নিয়ে একবার নিজের দেশের বাড়ি যেতে চেয়েছিল। উৎপল ঠিক বুঝতে পেরে যায় কল্যাণীর আসল পরিচয়। উৎপল বাংলাদেশ যেতে না পারলেও, দেশের বাড়ির মানুষ সে পেয়ে যায় কলকাতাতেই। এইভাবেই মানুষের অন্তরের টান, পুরনো অভ্যেস কিংবা স্মৃতির মায়া দুই বাংলার ভেদাভেদ মুছে দিয়ে আমাদের দাঁড় করিয়ে দেয় নো ম্যানস ল্যান্ডে। ভেদাভেদ যে আমাদেরই তৈরি করা ক্ষমতায়নের প্রয়োজনে সেটা আরও একবার মনে করিয়ে দেয়।

'লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল' দর্শকদের ভালো লাগবে আরও একটা কারণে। যতই মেলোড্রামা থাকুক, গানের প্রাচুর্যে ছবির গতি শ্লথ হয়ে আসা থাকুক এই ছবিতে অভিনেতাদের পারফরম্যান্স-ই ইউএসপি। বিশেষ করে বলতে হয় চান্দ্রেয়ী ঘোষের কথা। অনেকদিন পর বড়পর্দায় পাওয়া গেল তাঁকে। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে মন জয় করেন। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বরাবরই পর্দায় খুব জোরালো। পাওলি দাম খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন কল্যাণীর চরিত্রটি। সায়নী ঘোষ তাঁর সরস্বতীকে জীবন্ত করে তুলেছেন। ক্যামিও দৃশ্যে বিধায়ক মদন মিত্রর এন্ট্রি দারুণ চমক। ছবির চিত্র্যনাট্য আরও গতিময় হলে আরও কার্যকরী হত।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • বাঙালির ড্রয়িংরুম থেকে একবারে মফস্বল বা সীমান্তের কাছাকাছি নিয়ে যায় রামকমল মুখোপাধ্যায়ের ছবি 'লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল'।
  • সরস্বতী, মালতী, কল্যাণী অথবা রুকসানার গল্প বলে। শহর আর মফস্বলের সেতু হয়ে থেকে যায় যারা।
  • এই মুহূর্তে এসআইআর প্রসঙ্গে যখন আলোড়িত দেশ, উত্তপ্ত বাংলা তখন 'লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল' আরও অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক।
Advertisement