শম্পালী মৌলিক: বাবা-মেয়ের সম্পর্কের সমীকরণ নিয়ে ছবি ‘হাঁটি হাঁটি পা পা’। ট্রেলার দেখেই বোঝা যায় পারিবারিক ছবি, মূলত আবেগ-নির্ভর। সন্তানের সঙ্গে বাবার বন্ধন, তার ব্যক্তিগত বেদনা, না-বলা ভালোবাসার কথা নিয়েই চিত্রনাট্য (প্রিয়াঙ্কা পোদ্দার)। পরিচালক অর্ণব মিদ্যার ভাবনায় বাড়িতে বয়স্ক বাবা থাকলে, মেয়ের মনের অবস্থা যেমন হয় এবং উল্টোদিকে মাতৃহারা কন্যার জন্য বাবার মনের উচাটন কোন দিকে যায়, সেইসব ধরা হয়েছে। একইসঙ্গে, অত্যন্ত জরুরি একটি প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়েছে, যে সবার জীবনে একজন সঙ্গী দরকার, জীবনের মধ্যাহ্ন অতিক্রান্ত হলেও। প্রধান চরিত্রে চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী এবং রুক্মিণী মৈত্র।
ছবির শুরুতে পাপা দীপক চক্রবর্তী (চিরঞ্জিত) এবং কন্যা মৌ-এর (রুক্মিণী) ছোট ছোট ঝগড়া, হালকা খুনসুটি ‘পিকু’ কিংবা ‘আয় খুকু আয়’ -এর কথা মনে করায় নিশ্চিত ভাবে। বাবা-মেয়ের সংসারে রয়েছেন এক পরিচারিকা (ঈশিকা দে)। মেয়ে চাকরি করে ফলে সে বাড়ির বাইরে গেলে বাবাকে সামলায় পরিচারিকা। মাঝে মাঝেই মেয়ে বলে, পাপার সঙ্গে একবেলা থাকা যায় না! অন্যদিকে পাপা খোঁটা দেয় মেয়ের চাকরি এবং উপার্জন নিয়ে। বোঝাই যায় ছদ্ম এই বিতণ্ডা। বাবার আসল উদ্দেশ্য মেয়ে যাতে বাড়ি ছেড়ে গিয়ে নিজের সংসার পাতে। রয়েছে তার এক প্রবাসী প্রেমিক পোলুয়া (বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়)। এই করতে করতে বাবা এক আশ্চর্য পরিকল্পনা করে, কাগজে ‘পাত্রী চাই’-এর বিজ্ঞাপন দেয়। ব্যস, ছবির দ্বিতীয়ার্ধ থেকে গল্প তখন অন্যদিকে মোড় নেয়।
আবির্ভাব হয় ‘বনলতা সেন’-এর তথা কুট্টি মাসির (অঞ্জনা বসু)। সে এসে জরিপ করে, ‘দীপকের বয়সটা কি কাগজের থেকে একটু বেশি?’ তবুও দুজন প্রবীণ মানুষের বন্ধুত্ব হতে সময় লাগে না। এইখানে একটা সংলাপ বেশ লাগে–‘জীবনের পাতায় বেশিরভাগটাই লেখা হয়ে গেছে, যতটুকু আর বাকি তাতে একটু রং লাগলে ক্ষতি কী!’ এবার প্রশ্ন মৌ-এর মায়ের জায়গায় অন্য কেউ এলে মেয়ে কি মেনে নিতে পারবে?
বাবা তার নব্য বান্ধবীকে বলে, তার শাসন করার একটাই মানুষ-মৌ। এবার তাকে ছেড়ে দিতে হবে। এগিয়ে যেতে হবে। এরপর কী ঘটে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখার। ছবির বিষয় ভাবনা ভালো কিন্তু প্রয়োগ দুর্বল। বাবার সঙ্গে মেয়ের ছদ্ম দূরত্ব তৈরির প্লটটা জমে না। প্রথমার্ধ মন্থর। যদিও রুক্মিণীকে বরাবরের মতোই সুন্দর দেখিয়েছে। তাঁর স্ক্রিন প্রেজেন্স ভালো। মজা লাগে চিরঞ্জিত চক্রবর্তীর মুখে ‘বউ হারালে বউ পাওয়া যায় কিন্তু গাছ হারালে গাছ পাওয়া যায় না’। এইরকম তাঁর বিখ্যাত সব ছবির সংলাপ বুনে দেওয়া হয়েছে চিত্রনাট্যে। তাঁর অভিনয়ে এখনও জং ধরেনি, সবচেয়ে স্বাভাবিক লাগে তাঁকে। অঞ্জনা বসুও সাবলীল। তবে সন্দীপ ভট্টাচার্য ও তুলিকা বসু হতাশ করেছেন। সামান্য উপস্থিতিতে অলোক সান্যাল ও স্বাতী মুখোপাধ্যায় ঠিকঠাক। ঈশিকা, সায়নের বিশেষ কিছু করার ছিল না। ইন্দ্রনাথ মারিকের ক্যামেরা মন্দ নয়। রণজয় ভট্টাচার্য, অনির্বাণ-অজয় দাসের মিউজিক চলনসই। ছবির বার্তা সুন্দর হলেও মেলোড্রামা এড়ানো যেত।
