shono
Advertisement
Durga Puja 2024

নাড়ুর কৌটো নিয়ে ঠাকুমা নিরুদ্দেশ! স্মৃতিতে তবু বাজে মিষ্টিসুখের আবেশ

স্মৃতিতে বাড়িময় ‘ম’ ‘ম’ করা নাডু-মুড়কির গন্ধ!
Published By: Biswadip DeyPosted: 08:38 PM Sep 24, 2024Updated: 02:39 PM Sep 25, 2024

পিয়ালী প্রামাণিক: আমার হারিয়ে যাওয়া পুজো (Durga Puja 2024) মানেই আমার জলঙ্গি... আমার ছোট গ্রাম... আর বারোয়ারি তলার ছোট স্থায়ী পুজো মণ্ডপ। খুব আটপৌরে অথচ জীবনভর জিভে লেগে থাকার মতো কিছু মিষ্টির প্লেট। পুজো মানেই ছিল ঝকঝকে তকতকে মাটির উঠোন জুড়ে আলপনা,দরজার মাথায় মাথায় গিরিমাটির প্রলেপ আর বাড়িময় ‘ম’ ‘ম’ করা নাডু-মুড়কির গন্ধ।

Advertisement

আজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগেকার আমার পুজোর খাওয়া দাওয়ার কথা বলতে গেলে একাধিক খাবারের অনুষঙ্গ মনে আসে। যেমন প্রথমেই মনে উঁকি দেয় ঝুড়ির নাডু আর দুই হল গোকুল পিঠে। এই দুটোই ছিল আমাদের বাড়ির বিজয়ার সিগনেচার সুইট। ঝুড়ির নাডু মানেই ছোট পিসিমা। ষষ্ঠীর দিন প্রতিবছর নদীর ওপারের গ্রাম চাঁদের ঘাট থেকে পিসিমা আসতেন খুশির পোঁটলা নিয়ে। খুব সামান্য উপকরণ আর হাতের জাদুতে বানানো হত এই নাডু। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পাট চুকলে উনুনে নতুন করে আঁচ পড়ত।

উপকরণ বলতে বেসন, সর্ষের তেল আর আখের গুড়। ছোট পিসিমার নাম ছিল লক্ষ্মী। তার ধরন গড়নের সঙ্গে নামেরও বেশ মিল ছিল। সুন্দর শাখাপলা পরিহিত হাত নিপুণ ভাবে জল দিয়ে বেসনের মণ্ড তৈরি করে নিত। খুব শক্তও নয়। নরমও না। তার পর লোহার কড়াইয়ে বাড়ির ঘানির সর্ষের তেল দেওয়া হত। লুচিভাজার বড় ছাঁকনির উপর বেসনের মণ্ড দিয়ে চাপ দিয়ে দিয়ে গরম তেলে ছেড়ে তৈরি হত ঝুড়ি।

সুরভি জর্দা র সৌরভ আর কড়াইতে সদ্য তোলা আখের গুড়ের গন্ধ মিলেমিশে একাকার হত। পাঁচশো বেসনের ঝুড়ির জন্য এক কেজির একটু কম আখের গুড় দেওয়া হত। খুব ভালো করে গুড়ে জ্বাল পড়ত "তাক" না আসা অবধি। তার পর ঝুড়ি গুলো ভেঙে ছোট করে দেওয়া হত ফুটন্ত গুড়ের মধ্যে। পিসিমার চুড়ির রিনরিনে আওয়াজ তুমুল হত নাডুর পাকের তালে তালে।

এবার গোকুল পিঠের কথাতে আসি। পিঠে আর পৌষের মধ্যে যদিও চিরকালের সম্পর্ক তবুও আমাদের বাড়িতে শারদ উৎসবে তার একটা পাকাপাকি জায়গা ছিল। গোয়াল ভরা গরু না থাকলে ও ছিল কয়েকটা দুধেল গরু। দেবীপক্ষের শুরু হতেই মা দুধ জমিয়ে খোয়া ক্ষীর বানাতে শুরু করতেন। এই ক্ষীর ই ছিল গোকুল পিঠের প্রধান উপকরণ।

সামান্য নারকেল কোরা আর চিনি দিয়ে পুর বানিয়ে রাখা হত। তার পর সুজি ,দুধ আর সামান্য চালের গুঁড়ো মিশিয়ে পাতলা গুলুনি তৈরি হত। অন্য দিকে এলাচ-সহ চিনির রস তৈরি করে রাখা হতো। এবার শুরু হত গোকুল পিঠে ভাজা। পুর দিয়ে গোল ছোট ছোট চাকতি তৈরি হত। আর ওই গুলুনিতে ডুবিয়ে ডুবো তেলে ভাজা হত। তার পর চিনির রসে ভেজানো থাকত কিছুক্ষণ। দেখতে যেমন ছিল আর তেমনি খেতেও ছিল একেবারে অমৃততুল্য।

মা দুর্গার ভাসান হত জলঙ্গিতে। দু পারে দুই গ্রামের মানুষ জন মহাসমারোহে বাইচে যোগ দিত। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে জলঙ্গির জলে বিদায় অশ্রু মিশিয়ে মা কৈলাসে যেতেন। পাশের বাড়ির ছোট ঠাকুমার সাদা ধবধবে নারকেল নাড়ু ছাড়া ও আমার পুজো আর 'প্লেট পুজো' অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ঠাকুমা কবেই বিদায় নিয়েছেন নাড়ুর কৌটো নিয়ে। ছোট পিসিমাও সুরভি জর্দা আর আখের গুড়ের সুবাসটুকু রেখে চলে গেলেন। আসলে বিজয়ার প্রণাম গ্রহণ করার আপনজনেরা পায়ে পায়ে পরপারে পাড়ি দিলেন। আমার জীবন জুড়ে থেকে গেল সেই সেদিনের অনুষঙ্গ আর মন ভরানো বিজয়ার মিষ্টি সুখের আবেশ। ফুরায় যা তা ফুরায় শুধু চোখে...।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • পুজো বলতেই মনে পড়ে ছোট গ্রাম, ছোট স্থায়ী পুজো মণ্ডপ।
  • আটপৌরে অথচ জীবনভর জিভে লেগে থাকার মতো কিছু মিষ্টির প্লেট।
  • পুজো মানেই ছিল বাড়িময় ‘ম’ ‘ম’ করা নাডু-মুড়কির গন্ধ।
Advertisement