সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফুটবল মানুষকে বাঁচতে শেখায়, প্রতিকূল পরিবেশে অদম্য লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা জোগায় ফুটবল৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত জার্মানরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল এই ফুটবলের হাত ধরেই৷ ১৯৫৪ বিশ্বকাপে হাঙ্গেরিকে হারানোর গল্প জার্মানিতে রূপকথারই শামিল৷ ক্রোয়েশিয়া আর লুকা মদ্রিচের গল্পও কোনও রূপকথার থেকে কম নয়৷
[ইতিহাস ফেরাতে ব্যর্থ হ্যারি কেনরা, লুঝনিকির রাত দেখল সিংহ শিকারি ক্রোটদের]
দীর্ঘদিন যুগোস্লাভিয়ার অংশ ছিল ক্রোয়েশিয়া৷ ১৯৫০ সালে যখন যুগোস্লাভিয়া ভেঙে সার্বিয়া তৈরি হয় তখন ক্রোয়েশিয়া যুক্ত হয় সার্বিয়ার সঙ্গে৷ ক্রোটদের স্বাধীনতা অর্জনের লড়াই শুরু হয়ে আশির দশকের শেষদিকে৷ নব্বইয়ের দশকের শুরুতেই স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ক্রোয়েশিয়া৷ বিশ্বের দরবারে নিজেদের তুলে ধরার মঞ্চ হিসেবে ফুটবলকেই বেছে নিয়েছেন ক্রোটরা৷ যেমনটা বেছে নিয়েছিলেন তাঁদের অধিনায়ক লুকা মদ্রিচ৷ চারবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী, ক্লাব ফুটবলে বিশ্বের অন্যতম সেরা তারকা মদ্রিচের ছোটবলা কিন্তু মোটেই সুখের ছিল না৷ যুদ্ধবিধ্বস্ত ক্রোয়েশিয়ায় একসময় প্রতিনিয়ত দিন কাটত প্রাণভয়ে, অনাহারে৷ অদম্য লড়াই আর জেদের বশেই আজ বিশ্বকাপ ফাইনালে লুকা মদ্রিচ৷
[ধরাশায়ী ইংল্যান্ড, ব্রিটিশদের হারিয়ে ইতিহাস লড়াকু ক্রোটদের]
মদ্রিচের বয়স তখন মোটে বছর ছয়েক৷ ক্রোয়েশিয়ার উত্তর ডালমিটিয়ায় ভেলেবিট পাহাড়ের কাছে মদরিচি নামে ছোট্ট একটি শহরে থাকতেন তাঁর বাবা-মা৷ ছোট্ট মদরিচিতে মাঝে মাঝেই সাবেক যুগোস্লাভ সেনাবাহিনীর নৃশংস অত্যাচার চলত৷ আসলে সার্বিয়া চাইছিল মদরিচি ছেড়ে চলে যাক ক্রোটরা৷ ১৯৯১-এর ডিসেম্বরে এমনই এক দিন সার্বিয়ার সেনাবাহিনী মদ্রিচের সামনেই নৃশংসভাবে খুন করে তাঁর ঠাকুরদা লুকা মদ্রিচ সিনিয়রকে৷ চোখের সামনে সেই নৃশংসতা দেখতে হবে ৬ বছরের শিশুটিকে৷ গ্রেনেড ছুঁড়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তাঁর বাড়িও৷ বাধ্য হয়ে মদ্রিচের বাবা-মা তাঁকে আর তাঁর ছোট বোনকে নিয়ে আশ্রয় নেন একটি শরণার্থী শিবিরে৷ জাদারের সেই শরণার্থী শিবিরেই বড় হন মদ্রিচ৷ যেখানে ছিল না বিদ্যুৎ, ছিল না আধুনিক কোনও পরিষেবা৷ প্রতিনিয়ত গ্রেনেড আর বুলেটের শব্দ পাওয়া গেলেও খাবার বা পানীয় জল কিছুই মিলত না পর্যাপ্ত৷ এমনকি খেলার জন্য উপযুক্ত মাঠও মেলেনি মদ্রিচের ছোটবেলায়, আসলে শহরের প্রতিটি প্রান্তে ল্যান্ডমাইন পুঁতে রাখত সার্বিয়ানরা৷ তাই ছোট মদ্রিচদের শরণার্থী শিবিরের বাইরে বেরোনোর অনুমতি ছিল না৷ কিন্তু অদম্য জেদ আর ইচ্ছাশক্তিকে বোধ হয় দমিয়ে রাখা যায় না৷ আর সেই জেদকে সঙ্গী করেই আজ দুর্বিষহ শৈশবের স্মৃতি ভুলে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন মদ্রিচ৷ মাত্র ১০ বছর বয়সে যোগ দেন জাদারের স্থানীয় ক্লাবে৷ সেখান থেকে জারগ্রেব, জারগ্রেব থেকে ইংলিশ ক্লাব টটেনহ্যাম৷ আর সেখান থেকে রিয়াল মাদ্রিদ৷ আজ সাফল্যের শীর্ষে মদ্রিচ কিন্তু এর পিছনে যা লড়াইটা তাঁকে করতে হয়েছে তা হয়তো অজানা অনেকেরই৷ আসলে অদম্য সংগ্রামই জীবনযুদ্ধে জয়ী করেছে ক্রোয়েশিয়ার অধিনায়ককে৷
The post অন্ধকার শৈশব ভুলে বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়তে মরিয়া মদ্রিচ appeared first on Sangbad Pratidin.