দুলাল দে: এতদিন আইএসএল ক্লাবদের চিঠির পর চিঠিতে ঘুম উড়েছিল ফেডারেশন কর্তাদের। এবার আই লিগের ক্লাবগুলি যা পদক্ষেপ নিতে চলেছে, তাতে ঘুমের কথাই ভুলে যেতে হবে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের। আইএসএল আয়োজন নিয়ে যখন ল্যাজেগোবরে অবস্থা ভারতীয় ফুটবল কর্তাদের, তখন মোটামুটি বিদ্রোহ করে বসল আই লিগের ক্লাবগুলি। পরিস্থিতি বুঝে ঠান্ডা করার জন্য তড়িঘড়ি করে চিঠি পাঠিয়ে আই লিগের ক্লাবগুলির সঙ্গে বুধবার রাতে জুম কলে মিটিং করতে চেয়েছিলেন ফেডারেশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল সত্যনারায়ণ। কিন্তু আই লিগের ক্লাবগুলি ফেডারেশনের উপর এতটাই বিরক্ত যে, ফেডারেশনের মিটিংকে বাইপাস করে বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রীর মনসুখ মান্ডব্যর সঙ্গে দিল্লিতে আলোচনায় বসছেন ক্লাব প্রতিনিধিরা। ঠিক করেছেন, কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রীকে আই লিগ আয়োজন নিয়ে তাদের সমস্যা তুলে ধরার পর ফেডারেশনের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
কিন্তু আই লিগ ক্লাবগুলি কেন ফেডারেশনকে বাইপাস করে সরাসরি কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাইল? এর উত্তরও এদিন আই লিগের ক্লাবগুলি সরাসরি ফেডারেশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেলকে পাঠিয়েছে। এদিন বিকেলে আই লিগের ক্লাবগুলিকে চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়, রাত ৮টায় ক্লাবগুলির সঙ্গে জুম মিটিং হবে। ক্লাবগুলি সঙ্গে চিঠি পাঠিয়ে জানায়, গত কয়েক মাস ধরে আই লিগ শুরুর জন্য ক্লাবগুলি বারবার চিঠি পাঠিয়ে মিটিং চাইলেও সাড়া দেয়নি ফেডারেশন। আর এদিন মাত্র তিন ঘণ্টার নোটিশে মিটিং করতে চাইছে ফেডারেশন, যখন ক্লাবগুলির প্রতিনিধিরা কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে মিটিং করার জন্য দিল্লি পৌঁছে গিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই আই লিগের ক্লাবগুলি ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবের সঙ্গে আর মিটিংয়ে বসেননি। তবে চিঠির মাধ্যমে আই লিগ নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব ক্লাবগুলি দিয়েছে। বলা হয়েছে, যারা আইএসএলে করবে, তারাই যেন আই লিগের আয়োজন করে। সঙ্গে জিও-হটস্টার, বা সোনির মতো চ্যানেলে যেন আই লিগ দেখানো হয়।
এদিন, বুধবার সকাল থেকেই ফেডারেশনের পক্ষে চিঠিচাপাটি পর্ব শুরু হয়। তিন বছর ধরে পরিকল্পনা করার সুযোগ পেয়েও কিছুই করা সম্ভব হয়নি। আর এদিন দুপুরে সব কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের চিঠি পাঠিয়ে সত্যনারায়ণ জানান, বিকেল ৫টার মধ্যে লিগ নিয়ে তাদের পরিকল্পনা জানাতে। ফেডারেশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেলের তরফে এই চিঠি পেয়ে অবাক হয়ে যান সদস্যরা। কয়েকজন চিঠির উত্তরে জানান, এর আগে আইএসএলের টেন্ডার নিয়ে কার্যনির্বাহী কমিটিতে আলোচনা শুরু হলেও তা সম্পূর্ণ হয়নি। কিন্তু তারপর সদস্যদের আর কিছুই না জানিয়ে সব কিছু করে নেওয়া হয়। তাহলে এই সময় আর পরিকল্পনা জানিয়ে কী হবে?
এরপরেই আইএসএলের ক্লাবগুলিকে চিঠি পাঠিয়ে ফেডারেশনের তরফে অনুরোধ করা হয়, সন্ধ্যা ৭টার সময় জুম কলে উপস্থিত থাকতে। ইস্টবেঙ্গল-সহ আইএসএলের বেশিরভাগ ক্লাবগুলিই মিটিংকে এড়িয়ে যান। ছিল নর্থইস্ট ইউনাইটেড, এফসি গোয়ার মতো কিছু ক্লাব। তাতে মিটিংয়ে উপস্থিত ক্লাবরা দ্রততার সঙ্গে আইএসএল শুরুর অনুরোধ জানান ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবেকে। তাতে কল্যাণ জানান, পুরো বিষয়টি এই মুহূর্তে আদালতের বিচারাধীন বিষয়। ফলে তিনি নিশ্চিত করে কিছু কথা দিতে পারছেন না। সব কিছু আদালতে জানাবেন। তবে বেশ কিছু ক্লাব প্রস্তাব দেন, আইএসএল হলে, তার সম্প্রচারের খরচ ক্লাবগুলি নিজেরাই দিতে রাজি রয়েছে। তবে পাশাপাশি ক্লাবগুলি রীতিমতো বিরক্ত ফেডারেশন সভাপতির আচরণে। আইএসএলের ক্লাবগুলিকে এড়িয়ে ফুটবলারদের এজেন্টদের ধরে বিভিন্ন ক্লাবের অধিনায়কদের সঙ্গে মিটিং করেন কল্যাণ চৌবে। আর এতেই বিরক্ত হয়েছে ক্লাবগুলি। তাদের বক্তব্য হল, ক্লাব অফিসিয়ালদের না জানিয়ে ফেডারেশন কীভাবে আলাদা করে তাদের ফুটবলারদের সঙ্গে মিটিং করতে পারে? এদিকে, সুপার কাপের বাইরে আইএসএলের বেশিরভাগ ক্লাবগুলিই তাদের প্র্যাকটিস বন্ধ করে বসে আছে। পাশাপাশি আইএসএলের টেন্ডার ব্যর্থ হওয়ার পর ফেডারেশন জানিয়েছিল, পুরো বিষয়টি আদালতে তুলে ধরা হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হয়নি। মনে করা হচ্ছে, সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলার পর এবার রিপোর্ট দেবে ফেডারেশন।
