মোহনবাগান: ৩ (জেমি ২, আলবার্তো)
কেরালা ব্লাস্টার্স: ০
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দল গোল করলে কবে মোহনবাগান কোচ হোসে মোলিনাকে এত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে? এদিন দেখা গেল। কোচির মাঠে কেরালা ব্লাস্টার্সের জালে যখন জেমি ম্যাকলারেন বল জড়াচ্ছেন, তখন সাইড লাইনের ধারে রীতিমতো গর্জন করে উঠলেন মোলিনা। টের পাচ্ছেন যে লিগ শিল্ডের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছে দল। কেরালাকে ৩-০ হারাল সবুজ-মেরুন বাহিনী। জোড়া গোল জেমি ম্যাকলারেনের। একটি আলবার্তোর। গোয়ার থেকে দশ পয়েন্টের ব্যবধান। আর মাত্র একটি জয়, তাহলেই টানা দ্বিতীয়বার লিগ শিল্ড জয়ী হবে মোহনবাগান। সেই সঙ্গে প্রথম দুইয়ে থাকা নিশ্চিত করে আইএসএলের সেমিফাইনালেও উঠে গেল সবুজ-মেরুন বাহিনী।
ম্যাচের আগে মোলিনা বলেছিলেন, পয়েন্ট টেবিলের দিকে তাকিয়ে বাড়তি চাপ নিতে চান না। কিন্তু দলের ভিতরে যে বাড়তি তাগিদ কাজ করছে, সেটা ম্যাচের ২০ মিনিটের পরই টের পাওয়া গেল। অ্যাওয়ে ম্যাচে শুরুতে একটু সমস্যাতেই পড়েছিল মোহনবাগান রক্ষণ। তখন আদ্রিয়ান লুনাদের লাগাতার আক্রমণ আছড়ে পড়ছে। কিন্তু ফুটবল মাঠের প্রচলিত প্রবাদ, 'অ্যাটাক ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স'। সেই পথই ধরল মোহনবাগান। যার শুরুটা করলেন লিস্টন কোলাসো। বাঁ প্রান্ত দিয়ে গতিতে তিনি ছিটকে বেরিয়ে যেতেই, গুটিয়ে যেতে বাধ্য হল কেরালা। ২৮ মিনিটে দুজন ডিফেন্ডারকে মাটি ধরিয়ে অনায়াসে ঢুকে গেলেন বিপক্ষের বক্সে। সেখান থেকে জেমিকে যে পাসটা দিলেন, সেখান থেকে গোল মিস করা কার্যত অসম্ভব। জেমি অবশ্য সেই ভুলটাই করতে যাচ্ছিলেন প্রথমবারে ঠিকভাবে রিসিভ না করতে পেরে। কিন্তু পরক্ষণেই জালে বল জড়িয়ে দিলেন।
মোহনবাগানের দ্বিতীয় গোলটি এল ৪০ মিনিটে। কেরালার গোলকিপার সুরেশের মাথার উপর দিয়ে যেভাবে জেমি বলটা ভাসিয়ে দিলেন, তা বহুদিন মনে থাকবে ভক্তদের। একই ভাবে মনে থাকা উচিত, কামিন্সের বিশ্বমানের অ্যাসিস্টও। প্রথমার্ধে ২-০ গোলের ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ায় কেরালার প্রত্যাবর্তনের কাজটি প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে সেই দাপটটাই বজায় রাখলেন শুভাশিসরা। রক্ষণে তিনি অধিনায়কের মতো সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন। যেখানে বিপদ, সেখানেই কোথা থেকে যেন ঝাঁপিয়ে পড়ে গড় রক্ষা করছিলেন শুভাশিস। এই ম্যাচে তিনি যেন সাহস, দক্ষতা ও সঠিক সময়ে-সঠিক জায়গায় থাকার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিলেন।
এবং অবশ্যই আলবার্তো রদ্রিগেজ। ম্যাচের তৃতীয় গোলটি এল সবুজ-মেরুনের ডিফেন্ডারের পা থেকে। ৬৬ মিনিটে যে জায়গা থেকে তিনি গোল করলেন তা যে কোনও স্ট্রাইকারের ফিনিশিং দক্ষতার সঙ্গে টক্কর দিতে পারবে। মোলিনা বার বার বলেন, তাঁর দলে সবাই গোল করবেন, সবাই রক্ষণ করবেন। সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে লিগ শিল্ডের খুব কাছে এসে সেটা যেন আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন সবুজ-মেরুনের ফুটবলাররা।
এই জয়ের ফলে গোয়ার থেকে এক ম্যাচ বেশি খেলে মোহনবাগানের পয়েন্ট দাঁড়াল ৪৯। তাদের হাতে আর তিনটি ম্যাচ। গোয়ার ২০ ম্যাচে পয়েন্ট ৩৯। অর্থাৎ, মোহনবাগান যদি আর তিন পয়েন্ট অর্জন করে, তাহলে নিজেদের বাকি চারটি ম্যাচ জিতেও তাদের কাছে পৌঁছতে পারবে না গোয়া। অন্যদিকে তৃতীয় স্থানে থাকা জামশেদপুরের পয়েন্ট ৩৪। অর্থাৎ, প্রথম দুইয়ে থাকাও নিশ্চিত মোলিনার দলের। আর আইএসএলের নিয়ম অনুযায়ী সরাসরি সেমিফাইনালে খেলার ছাড়পত্রও পেয়ে গেল তারা।