দুলাল দে: আইএসএল চালাতে রাজি আছে এফএসডিএল। কিন্তু টাকা দেবে তারা। আর আইএসএলের যাবতীয় নীতি নির্ধারণ ঠিক করবে গভর্নিং কাউন্সিল, এই ব্যাপারটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না। সঙ্গে বছরে ৩৭.৫ কোটি টাকা দেওয়া নিয়েও সমস্যা ছিল। শেষে যখন দেখা গেল, এফএসডিএল-সহ কোনও সংস্থাই আইএসএলের বিড করতে এগিয়ে এল না, পুরো বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও। যেখানে তিনি মতামত দিয়েছেন, গভর্নিং কাউন্সিলের গঠন পুনর্বিবেচনা করতে হবে। আইএসএলের যারা বাণিজ্যিক অংশীদার হবে, তারা যেন গভর্নিং কাউন্সিলে সমান প্রতিনিধিত্ব পায় এবং কার্যকর শাসন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, সেটা দেখতে হবে।
আসলে গভর্নিং কাউন্সিলে ফেডারেশনের ছিল ২ জন প্রতিনিধি। আর কোম্পানির তরফে একজন। এটাই মনে নিতে পারছিলেন না এফএসডিএল কর্তারা। এখন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নাগেশ্বর রাও নিজেই জানালেন কোম্পানির প্রতিনিধি বাড়ানোর কথা। নাগেশ্বর রাও তার রিপোর্টে বলেছেন, এমনভাবে নিয়মাবলী করতে হবে যাতে, ফেডারেশনের নিয়ন্ত্রণমূলক ভূমিকা বজায় থাকে, একইসঙ্গে বাণিজ্যিক কাঠামোকে আরও কার্যকর ও আকর্ষণীয় করা যায়। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নাগেশ্বর রাওয়ের রিপোর্টে ফেডারেশনকে দেওয়া নূন্যতম গ্যারান্টি পেমেন্ট দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ফেডারেশনকে দেওয়া বার্ষিক গ্যারান্টি পেমেন্ট পুনর্গঠন অথবা যুক্তিসঙ্গত ভাবে কমানো যেতে পারে। এর ফলে সম্ভাব্য অংশীদারদের জন্য ব্যবসা করা সহজ হয় এবং তা ফেডারেশনেরও স্বার্থ রক্ষা হয়।
এই প্রস্তাব থেকে একটা কথাই বোঝা যাচ্ছে, এই যে আইএসএলের বিডে বলা হয়েছিল, ফেডারেশনকে বছরে ৩৭.৫ কোটি টাকা দিতে হবে। সেটাই কমানোর কথা বলা হয়েছে। এর বাইরে তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন, গভর্নিং কাউন্সিলে ফেডারেশনের সিনিয়র প্রতিনিধির ভেটো দানের ক্ষমতা না থাকলেই ভালো। এতে সময়মতো বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত নেওয়া কোনও কোম্পানির জন্য কঠিন হবে। তাছাড়া লিগ পরিচালন ক্ষমতা হাতে থাকবে ফেডারেশনের। এই পয়েন্টটি নিয়েও তিনি বলেছেন, ধারাটি এমনভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে যাতে, ফেডারেশনের নীতি নির্ধারণের ক্ষমতা অটুট থাকে এবং আইএসএলের দৈনন্দিন বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপ না থাকে। এখন দেখার সুপ্রিম কোর্ট কী রায় দেয়।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট থেকে ভারতীয় ফুটবলের যে সংবিধান তৈরি করে দেওয়া হয়েছে, তাতে স্পষ্ট রয়েছে, একজন ব্যক্তি একই সঙ্গে ফেডারেশন এবং রাজ্য ফুটবল সংস্থায় থাকতে পারবেন না। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন জানিয়ে বলা হয়, সংবিধানের এই ধারাটি এখনই প্রয়োগ হলে সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে নতুনভাবে নির্বাচন হয়ে সেপ্টেম্বর মাস থেকে প্রয়োগ হলে ভালো হয়। সুপ্রিম কোর্ট ফেডারেশনের প্রস্তাব মেনে নিয়ে জানায়, ফেডারেশন যা বলছে, তা এফিডেভিট করে জমা দিতে হবে। এদিকে, কোনও সদস্যই হলফনামায় সই করতে রাজি হচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে সব রাজ্য সংস্থার কাছে মতামত জানতে চায় ফেডারেশন। বেশিরভাগ রাজ্য সংস্থাই প্রস্তাবে অসম্মতি জানায়। তারপরেই এদিন রাজ্য সংস্থাগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসা হয়। সেখানে মূলত বাংলার প্রতিনিধি অনির্বাণ দত্ত এবং ওড়িশার প্রতিনিধি অভিজিৎ পাল প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে দেন ফেডারেশন কর্তাদের। উভয়েই বলেন, রাজ্যর স্বার্থ সবার আগে দেখতে হবে। একজন প্রতিনিধি যদি রাজ্যসংস্থার সমস্যাই না বোঝেন, তাহলে তিনি ফেডারেশন চালাবেন কী করে? ঠিক হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে এফিডেভিট জমা দেওয়ার আগে তার বয়ান রাজ্য সংস্থাদের দেখিয়ে নেওয়া হবে। গড়া হয়েছে তিন সদস্যর কমিটি। অনির্বাণ দত্ত ছাড়াও রয়েছেন মিজোরাম এবং গোয়ার প্রতিনিধি।
