দুলাল দে, মারগাঁও: দলের অবস্থান উত্তর মেরু আর দক্ষিণ মেরু নয়। সুপার কাপ খেলতে এসে দুই প্রবল প্রতিপক্ষ শিবিরের আস্তানাও গোয়ার উত্তর আর দক্ষিণ প্রান্তে। এমনকী প্র্যাকটিসের মাঠ পর্যন্ত।
মাণ্ডবি-জুয়ারি পরপর দু'টো নদী পেরিয়ে ইস্টবেঙ্গলের প্র্যাকটিস মাঠ 'সালভাদোর দা মুন্ড।' নাম শুনলে মনে হয় ব্রাজিলে আছি। মাঠের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেও সেটা মনে হতে বাধ্য। একদিকে পাহাড়। একদিকে বিশাল খাদ। আরেকদিকে নদী। একটা সময় এফসি গোয়া নিজেদের প্রাকটিস গ্রাউন্ড হিসাবে অনেক খরচ করে তৈরি করেছিল এই মাঠ। পরে স্থানীয় পঞ্চায়েতের সঙ্গে সমস্যা হওয়ায় ছেড়ে দিতে হয়েছে মাঠটা। লাল-হলুদ কোচ অস্কার ব্রুজোর যখন কিছুতেই প্যাকটিসের মাঠ পছন্দ হচ্ছে না, তখন আর ফেডারেশনের দেওয়া মাঠের উপর ভরসা না করে ক্লাবের গাঁটের কড়ি খরচ করে এই মাঠটিকে খুঁজে বের করা হয়েছে গোয়ায় রাজধানী পানাজির পাশ দিয়ে গিয়ে আরব সাগরে মিশেছে মাণ্ডবি। বলা হয় পানাজির জীবনরেখা। নাইট ক্রুজ, রিভার ক্রুজ, ক্যাসিনো গোয়ার যাবতীয় বিলাসের কেন্দ্রে রয়েছে এই নদী। যেখানে অবস্থান ইস্টবেঙ্গলের।
উলটোদিকে, মোহনবাগান যেখানে প্র্যাকটিস করছে, সেই উতোরদা হচ্ছে দক্ষিণ গোয়ার শান্ত, পরিচ্ছন্ন, কম ভিড়ের সমুদ্রতট। গোয়া এসে যারা নিরিবিলি, পরিষ্কার, পরিবার নিয়ে ব্যক্তিগত পরিসরে সময় কাটাতে ভালোবাসেন তাঁদের জন্য উতোরদা একদম আদর্শ আয়গা। এই জনমানবহীন উতোরদাতেই প্র্যাকটিস গ্রাউন্ড বেছেছে মোহনবাগান। তবে মাঠটা ইস্টবেঙ্গলের ধারেকাছে নয়। পাড়ার মাঠের মতো। বৃষ্টির ফলে আরও এবড়োখেবড়ো হয়ে গিয়েছে।
ইস্টবেঙ্গল আর মোহনবাগান। দু'টো দলের অবস্থানগত পার্থক্য দেখলেই আপনি আরও ভালোভাবে বুঝে যাবেন, দু'দলের কোচের মানসিক গঠন। একটা সময় কোচ করিম বেঞ্চারিফাকে দেখতাম, সকালে উঠেই আগে কোনও ট্রান্সেলটরকে দিয়ে সব সংবাদপত্র পড়াতেন। কে তাঁর পক্ষে লিখেছে। কে বিপক্ষে। একেবারে আপডেট থাকতেন। ইদানীং সেই রোগে রোগাক্রান্ত স্বয়ং অস্কার ব্রুজোও। এরসঙ্গে কোচিংয়ের কোনও সম্পর্ক নেই। এমনকী যিনি তাঁকে ট্রান্সলেট করে ভুল খবরাখবর সরবরাহ করছেন, সেটাও ঠিক না ভুল পালটা চেক করে দেখার বাসনা না নিয়েই, প্রতিপক্ষ হিসেবে এখন সংবাদমাধ্যমকেও দুষতে শুরু করেছেন। 'তাহলে কি সন্দীপ নন্দী এপিসোডের পর ডার্বির আগে তিনি চরম চাপে? কোনও সমালোচনাই আর নিতে পারছেন না। না হলে এত উত্তেজিত কেন! উলটোদিকে ডেম্পো ম্যাচ নিয়ে সমালোচনায় জর্জরিত মোলিনার এসব নিয়ে কোনও মাথাব্যথাই নেই। শান্ত। ধীর। জানেন, তাঁর ভালো থাকা, না থাকা নির্ভর করছে খেলার ফলাফলের উপর। ডার্বি জিতে সেমিফাইনালে গেলে তিনি হিরো। না হলে জিরো। আর সেভাবেই ফুটবলারদের তৈরি করছেন।
ডার্বির আগে অস্কারের ইস্টবেঙ্গল যেখানে সকালে প্র্যাকটিস করল, মোলিনার মোহনবাগান সেখানে বিকেলে। সকালের প্র্যাকটিসে অস্কার যেরকম প্রথম দল দেখাতে চাইলেন না, সেরকম বিকেলের প্র্যাকটিসে মোলিনাও তাই। সালভাদের দা মুন্ড-তে পুরো দলটা মূলত সহকারী কোচ আর ফিটনেস ট্রেনারের কাছেই প্র্যাকটিস করল। মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে অস্কারের সেদিকে সতর্ক নজর। বিকেলে উতোরদাতে প্র্যাকটিসের সময় সহকারী কোচের কাছে ডিফেন্স ভার্সেস অফেন্স ভার্সেস মিডফিল্ড করে বল চোর চোর খেলালেন। সতর্ক নজরে সবটাই দেখলেন মোলিনা। কখনও বিভিন্ন সিচুয়েশন তৈরি করে গোলে শট। সেখানে ডার্বির আগে প্র্যাকটিসে যে চারজন ডিফেন্ডারকে এক জার্সিতে মোলিনা রাখলেন, তাঁরা হলেন, মেহতাব, আলড্রেড, আলবার্তো এবং শুভাশিস। সেই একই জার্সিতে রইলেন সাহাল, রবসন এবং ম্যাকলারেন। দলের বাকিরা লিস্টন কোলাসো, মনবীর এবং আপুইয়া হবেন না কি, মনবীরের জায়গায় সাহালকে ডানদিক থেকে ব্যবহার করে কামিংসকে শুরুতে রাখবেন, তা অবশ্য এদিন প্র্যাকটিসে খোলসা করেননি মোলিনা। তবে লাল-হলুদ যে প্রথম একাদশ নিয়ে অস্কার শুরু করেছিলেন, সেটাই রাখতে চাইছেন শুক্রবার মোহনবাগানের বিরুদ্ধেও।
আগের দিন যেরকম বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছিল গোয়া। এদিন সকাল থেকে কাঠফাটা রোদ্দুর। কলকাতা থেকে দুই প্রধানের সমর্থকরাই মারগাঁওতে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন। সুপার কাপের ডার্বি নিয়ে স্থানীয় গোয়ানিজদের মধ্যে সামান্য কারও উৎসাহ আছে বলে মনে হল না। এখানে যে সুপার কাপ হচ্ছে, সেটাই হয়তো অনেকে জানেন না। শুক্রবার রাতে ফতোরদার গ্যালারিতে যাদের দেখা যাবে, তারা বেশিরভাগই কলকাতা, বেঙ্গালুরু, মুম্বই থেকে আসা সমর্থকরা। কিছু লাল-হলুদ সমর্থক তো এদিন ইস্টবেঙ্গল প্র্যাকটিসেও গিয়েছিলেন। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, ডার্বির জন্য মাঠে টাকা দিয়ে টিকিট কিনে খেলা দেখার ব্যবস্থা হয়নি। অথচ, আইএসএলে যে বছর গোয়ায় ফাইনাল খেলতে দলবল নিয়ে এসেছিলেন হাবাস। সেই বছর ফাইনালের একটা টিকিট পাওয়ার জন্য কালোবাজারি পর্যন্ত হয়েছিল। তারপর যে কী হয়ে গেল...।
