দুলাল দে, মারগাঁও: সকাল থেকেই গোায়ার আকাশ শুধু মুখ ভার করেই ক্ষান্ত নয়। সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি। গোয়ার আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, গোয়ার দক্ষিণ দিকে, মানে মারগাঁওয়ের ফাতোরদা স্টেডিয়ামে যেখানে শুক্রবার ডার্বি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে, সেখানেও বৃহস্পতিবার হালকা বৃষ্টির উল্লেখ রয়েছে। তবে বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা উত্তরে। পানজিমের দিকে।
এমনিতে শুধু ডার্বি খেলা দক্ষিণেই নয়। মোহনবাগানের টিম হোটেলও গোয়ার দক্ষিণ দিকে। এদিন সকালে থেকেই এমন প্রবল বেগে বৃষ্টি নেমেছে যে, একটা সময় মনে হচ্ছিল বিকেল সারে চারটেয়, উতোরদাতে নির্দিষ্ট প্র্যাকটিস হয়তো বন্ধই রাখবে মোহনবাগান। কিন্তু সবুজ-মেরুন শিবিরের এই মুহূর্তে যা দমবন্ধ করা পরিবেশ তাতে, ডর্বির আগে চুপচাপ ঘরে বসে থেকে বিলাসিতা করার সময় বোধহয় আর নেই। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই ফুটবলারদের প্র্যাকটিস করাতে নেমে পড়লেন কোচ হোসে মোলিনা।
উতোরদার মাঠে বৃষ্টির মধ্যে তাঁদেরই প্র্যাকটিস করানো হল, যাঁরা মঙ্গলবার ডেম্পোর বিরুদ্ধে শুরুতে দলে ছিলেন না। যাঁরা ম্যাচটা শুরু থেকে খেলেছেন, সেই টম আলড্রেড, দিমিত্রিরা জার্সি-প্যান্ট পরে মাঠের ধারে ছোট্ট গ্যালারিতে বসে ছিলেন। সাহালরা ব্যস্ত ছিলেন ‘আইস বাথে’। দীপক টাংরি সাধারণ পোশাকেই বসে রইলেন গ্যালারিতে। টম আলড্রেডের বাঁ-পায়ে গোড়ালির উপরে দেখা গেল গভীর ক্ষত। আগের দিন ম্যাচে ডেম্পো ফুটবলারদের বুটের স্টাডে ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন। বলছিলেন, ‘‘অনেকবার রেফারিকে বলেছি। কোনও লাভ হয়নি।’’
সুপার কাপ শুরুর মুখে রীতিমতো ফুরফুরে মেজাজে ছিল মোহনবাগান। চাপে ছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু একটা ডেম্পো ম্যাচ ড্র করতেই ঘুরে গিয়েছে পুরো পরিস্থিতি। এখন সুপার কাপের সেমিফাইনালে যেতে হলে হারাতেই হবে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গলকে। ফলে কিছুটা পিছিয়ে থেকে শুক্রবার ডার্বি খেলতে নামতে হবে মোহনবাগানকে। টম আলড্রেডের তাতে কিছু অসুবিধা হবে বলে মনে হচ্ছে না। বলছিলেন, ‘‘যে অবস্থাতেই থাকি, আমরা ডার্বি খেলতে নামব জেতার মানসিকতা নিয়ে। গ্রুপে কী পজিশনে রয়েছি, ম্যাচে নামার আগে সেগুলি খুব একটা কিছু গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে হয় না।’’
কিন্তু দিমিত্রি, কামিংস, ম্যাকলারেনের মতো বিশ্বকাপার সমৃদ্ধ ফরোয়ার্ড লাইন, বিদেশিহীন ডেম্পোর ডিফেন্স ভেদ করে গোল করতে পারল না। এটা তো অবশ্যই ভাবনার বিষয়। মোহনবাগানের নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার এই তথ্যেও খুব একটা ঘাবড়ালেন বলে মনে হল না। বললেন, ‘‘ডেম্পো গোল বাঁচানোর জন্য সারাক্ষণ ডিফেন্স করে গিয়েছে। বড় দলের বিরুদ্ধে ছোট দলগুলি অনেক সময় গোল বাঁচানোর জন্য এরকম স্ট্র্যাটেজি নেয়। ইংল্যান্ডের ফুটবলেও এরকম দেখেছি। এগুলি ডার্বি ম্যাচে কোনও প্রভাব ফেলবে বলেই মনে হচ্ছে না।’’ মাঠের ভিতরের টেকনিক্যাল কোনও বিষয় ডার্বিতে প্রভাব ফেলার মতো না হলেও, ডার্বিতে মাঠের বাইরের গ্যালারির পরিস্থিতি নিয়ে কিন্তু চিন্তিত মোহনবাগান ডিফেন্ডার। বলছিলেন, ‘‘এরকম বড় ম্যাচে গ্যালারি ফাঁকা থাকলে সত্যিই ভাল লাগে না। তবে মোহনবাগান সমর্থকরা নিশ্চয়ই টিভিতে ম্যাচ চলাকালীন আমাদের সমর্থন জানাবেন।’’
টম আলড্রেড যাই বলুন, কোচ মোলিনা কিন্তু ডেম্পোর বিরুদ্ধে ড্র করাটা একদমই ভালোভাবে নেননি। তবে দল ব্যর্থ হওয়ার জন্য শুধুই ফুটবলারদের নন। নিজেকেও সমানভাবে দায়ী করছেন কোচ হোসে মোলিনা। বলছিলেন, ‘‘আমি দলের কোচ। ব্যর্থতার দায়ভার তো আমাকেই নিতে হবে।’’ কিন্তু মোহনবাগানের মতো হেভিওয়েট দল ডেম্পোর মতো দলের বিরুদ্ধে একটা গোল করবে না? মোলিনা বললেন, ‘‘প্রচুর গোল নষ্ট হয়েছে আমাদের। আর সেই জন্যই তো বললাম, এই গোল না হওয়ার জন্য আমিও ব্যর্থতার সঙ্গী। আশা করছি, ডার্বিতে সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে। গ্রুপ ম্যাচের প্রভাব ডার্বিতে পড়বে না।’’
