দুলাল দে, মারগাঁও: বিদেশি ছাড়া ডেম্পোর কাছে আটকে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। এবার প্রতিপক্ষ বিদেশিহীন চেন্নাই। কাকতালীয়ভাবে ইস্টবেঙ্গলের প্রথম দুই প্রতিপক্ষ দলের কোচই একটা সময় একসঙ্গে একই দলে খেলতেন। সমীর নায়েক আর ক্লিফোর্ড মিরান্ডা। দু'জনেই জাতীয় দলের পাশাপাশি একসঙ্গে খেলেছেন ডেম্পোর হয়ে। এখন সমীর কোচ ডেম্পোর। আর ক্লিফোর্ড চেন্নাইয়ের। প্রথম ম্যাচে ডেম্পোর কাছে পয়েন্ট হারানোর পর এবার ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোর সামনে ক্লিফোর্ডের চেন্নাই। যারা ইতিমধ্যে মোহনবাগানের কাছে প্রথম ম্যাচে হেরে 'ডু অর ডাই' পরিস্থিতির সামনে রয়েছে।
গোয়া আসা থেকেই প্র্যাকটিসের মাঠ সমস্যায় জেরবার অস্কার ব্রুজোর ইস্টবেঙ্গল। তবে সালভাদোর দো মুন্ডর মাঠে প্র্যাকটিস করতে নেমে দিল খুশ স্প্যানিশ কোচের। সকালে প্র্যাকটিসের পর বলছিলেনও সেই কথা, 'যেভাবে মাঠ নিয়ে সমস্যায় ছিলাম। ক্লাব ম্যানেজমেন্ট অবশেষে সমস্যার সমাধান করেছে।' মাঠ নিয়ে না হয় খুশ। কিন্তু পরিস্থিতি কি আদৌ খুশি রাখতে পারছে ইস্টবেঙ্গল কোচকে? যেখানে পরের রাউন্ডে যাওয়ার জন্য ডার্বির আগে চেন্নাই ম্যাচটা তাঁর জন্য ডু অর ডাই পরিস্থিতি। প্রথম ম্যাচে ডেম্পোর বিরুদ্ধে ড্র করে পরিস্থিতিটা নিজেরাই এরকম করে ফেলেছেন ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা। তাহলে এই পরিস্থিতি থেকে বার হওয়ার উপায়?
চাপের পরিস্থিতি থেকে বার হওয়ার জন্য পৃথিবী জুড়ে ম্যাচের উদাহরণ তুলে আনছেন তিনি। যেখানে শুরুতে পয়েন্ট হারিয়েও শেষ পর্যন্ত মুখে হাসি ফুটেছে পরের ম্যাচগুলি জিতে। আর এক্ষেত্রে অস্কারের হাতে সবচেয়ে বড় উদাহরণটা হল তাঁর নিজের দেশ স্পেন। সেই উদাহরণ দিয়েই ২০১০ বিশ্বকাপের উদাহরণ দিয়ে বলছেন, "সেবার শুরুতে সুইজারল্যান্ডের কাছে স্পেন হেরে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিন্তু আমাদের দেশই বিশ্বকাপটা জিতেছিল। রিয়াল মাদ্রিদ কতবার এরকম শুরুতে পয়েন্ট নষ্ট করে ম্যাচ জিতেছে।" এরপরেই অস্কার উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন নিজেদের এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের কথা। বললেন, "ভুললে চলবে না, সেই সময়ও কিন্তু আমরা শুরুর ম্যাচটা ড্র করে ফেলেছিলাম। তারপর কিন্তু পরের রাউন্ডে আমরা চলে যাই। বিশ্বফুটবলে এরকম ভুরি ভুরি উদারণ রয়েছে। তাই আমরা এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারব না বিশ্বাস করি না। ফুটবলারদের আজকে সবরকম পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলা হয়েছে।"
কোচ অস্কার ব্রুজো যাই বলুন না কেন, ডেম্পো ম্যাচ ড্র করে মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশ ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিংরুমে। সেখানে থেকে আলোকোজ্জ্বল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে কেবলমাত্র চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে একটা জয়। অস্কার বলছিলেন, "চেন্নাই ৫-৪-১ সিস্টেমে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলছিল। যে দেখেছি, কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবল খেলে। মোহনবাগানের কাছে হারলেও খারাপ খেলেনি দলটা। ফল যাই হোক আমরাও কিন্তু ম্যাচটা খারাপ খেলেনি। ম্যাচের ফল আর পারফরম্যান্স কিন্তু সব সময় এক কথা বলে না। অনেক সময় ম্যাচের ফল পারফরমান্সকে চাপা দিয়ে দেয়। তবে ফুটবলাররা পরিস্থিতি বুঝতে পারছে। নিশ্চয়ই আমরা ঘুরে দাঁড়াব।"
সেই ডুরান্ডের ডার্বি থেকে প্রশ্ন উঠছে, মিগুয়েলের মতো ফুটবলার থাকার পরেও কেন তাঁকে শুরু থেকে নামানো হচ্ছে না? এদিন খোলাখুলি মিগুয়েলকে শুরুতে না খেলানোর যুক্তি দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। বললেন, "আমি চাই নব্বই মিনিট আমার দল একই রকম পারফর্ম করুক। শুরুর ৩০ মিনিট করবে, তারপর শেষে পারবে না, এরকম নয়। তাই যখন যে ফুটবলারকে মাঠে নামালে খেলার গতি একই রকম থাকবে, আমি সেভাবে দল গঠন করি। ডুরান্ড ফাইনালটা ছিল ১২০ মিনিটের ম্যাচ। মিগুয়েল পরে নেমে খেলাটা ধরে রেখেছিল বলেই ১২০ মিনিট পর্যন্ত আমরা ভালো ফুটবল খেলতে পেরেছি। তবে এখানে আমাদের কিছু ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি থেকে গোল খেতে হচ্ছে। ফুটবলারদের বুঝিয়েছি, আশা করছি, চেন্নাই ম্যাচ থেকে দলটা ঘুরে দাঁড়াবে।"
