সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: হারিয়ে যাচ্ছে বাড়ির ঘুলঘুলিগুলো। বাসা বাঁধার জায়গা কই? ‘বিশ্ব চড়ুই দিবসে’ ছোট্ট পাখিদের বাসস্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল বনদপ্তর থেকে পক্ষীপ্রেমীর দল। একসময় সকালের আলো ফুটতে না ফুটতে চড়ুই পাখির (Sparrow) কিচিরমিচিরে কান ঝালাপালা হয়ে যেত। দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে মিশে থাকা এই শব্দগুলো যেন হারিয়ে যাচ্ছে। মূলত কলকাতার মতো মহানগর, শহরতলি ও সদর শহরগুলিতেই কিচিরমিচির আজ অতীত। এর পিছনে অবশ্য রয়েছে বহুবিধ কারণ। যদিও গ্রামাঞ্চলে বা ব্লক সদর গুলিতে কিন্তু এমন ছবি নয়। অন্তত গবেষণাতে সেটাই ধরা পড়েছে।
কিন্তু বনদপ্তর (Forest Department) বলছে অন্য কথা। শুধু শহর নয়, গ্রামাঞ্চলেও উল্লেখযোগ্যভাবে চড়ুই পাখির সংখ্যা কমেছে। এর পিছনে রয়েছে একাধিক কারণ। তাদের পছন্দের বাসস্থানের সেই ঘুলঘুলি নেই। তাদের খাবার খাদ্যশস্যে রাসায়নিক থাকায় তারা খানিকটা সংকটে পড়েছে। এছাড়া তাদের পছন্দের খাবার মিলেট (Millet)জাতীয় শস্যের চাষ কমে গিয়েছে। আরেকটি কারণ মোবাইল টাওয়ারও। মোবাইল টাওয়ার থেকে নির্গত বিকিরণের কবলে পড়ে চড়ুইরা প্রজনন ক্ষমতা হারাচ্ছে, এমন তথ্য উঠে এসেছে। এমনকী তড়িৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্রের মধ্যে পড়ে চড়ুইয়ের ডিমও ফুটতেও সমস্যা হচ্ছে। গবেষকরা দেখেছেন, ৫০ টি চড়ুইয়ের ডিম পরীক্ষামূলকভাবে ৩০ মিনিট ধরে তড়িৎ চুম্বকীয় বিকরণের মধ্যে রাখার ফলে সব কটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দেশের বিভিন্ন শহর, মফস্বল, গ্রাম, বনাঞ্চলে পক্ষীকুলের উপরে তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণের প্রভাব যাচাই করতে ঘরের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়ানো চড়ুইয়ের উপর সমীক্ষা চালিয়েছিলেন গবেষকরা। সেই গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মোবাইল টাওয়ার (Mobile Tower) যত বেড়েছে। ততই কমেছে এই পাখির সংখ্যা। তবে শুধু এদেশে নয়। পশ্চিমের দেশগুলোতেও একই অবস্থা। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সমীক্ষাতেও এই তথ্য উঠে এসেছে।
[আরও পড়ুন: বিবাহিত মহিলাকে নিয়ে পালানোর শাস্তি! যুবককে জুতো চাটিয়ে মূত্রপান করানো হল মধ্যপ্রদেশে]
তবে এই তথ্য মানতে নারাজ সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যার অধ্যাপক তথা চড়ুই পাখি নিয়ে গবেষণা করা বিপ্লবকুমার মোদক। তিনি বলেন, “এই পাখি কমার পিছনে মোবাইল টাওয়ার। এই বিষয়টি ঠিক নয়। আমার গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে। কলকাতার মতো মহানগর বা শহরতলিতে এই পাখির সংখ্যা কমলেও ব্লক সদরের মতো এলাকায় কিন্তু চড়ুই কমেনি।” কিন্তু পুরুলিয়ার কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের ডিএফও অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “চারদিকে ফ্ল্যাট হয়ে যাওয়ায় ওই ঘুলঘুলি না থাকার কারণেই চড়ুই পাখির বাসস্থান সংকটে পড়েছে। এছাড়া তারা যে ধরনের খাদ্যশস্য খেতে পছন্দ করে সেখানে রাসায়নিকের ব্যবহার, মিলেট জাতীয় শস্যের চাষ কম হওয়ায় তারা সঠিকভাবে খাবারও পাচ্ছে না।”
[আরও পড়ুন: এবার কাটবে আইপিএলের খরা? ট্রফি জয়ের লক্ষ্যে কেমন হবে বিরাটদের দল? একনজরে শক্তি-দুর্বলতা]
পুরুলিয়া, বাঁকুড়ায় পাখি নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মকর্তা অনির্বাণ পাত্র বলেন, “বেশ কিছুদিন আগে পর্যন্ত গৃহস্থের এই পরিচিত পাখির সংখ্যা একেবারেই কমে গিয়েছিল। তবে পরিবর্তিত পরিবেশে তারা এখন মানিয়ে নিয়েছেন।” পাখি নিয়ে ছবি তোলা ও কাজ করা আলোকচিত্রী বরুণ রাজগড়িয়ার কথায়, “আমাদের দেশে চড়ুইয়ের ২০টি প্রজাতি দেখা যায়। ২০২০ সাল পর্যন্ত পুরুলিয়ায় আমার ক্যামেরায় বন্দি হয়েছে সাত রকম প্রজাতি। তার পর আর এই পরিচিত পাখির বিভিন্ন প্রজাতির দেখা পাচ্ছি না।”