মাসুদ আহমেদ, শ্রীনগর: দীর্ঘ সাত মাস পর বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেলেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুখ আবদুল্লা। আজ তাঁর মুক্তির খবর জানিয়েছেন কেন্দ্রশাসিত জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যসচিব রোহিত কানসাল। গত বছর জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর তাঁকে বন্দি করেছিল কেন্দ্র। একইসঙ্গে বন্দি রাজ্যের আরও দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুখপুত্র ওমর আবদুল্লা ও মেহবুবা মুফতিকে। তাঁদের মুক্তি নিয়ে এখনও কোনও ইঙ্গিত নেই।
গত বছরের ৫ আগস্ট, জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা অর্থাৎ বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে উত্তরের রাজ্যটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করে দেয় কেন্দ্র। একটি জম্মু-কাশ্মীর, অপরটি লাদাখ। ভূস্বর্গের উন্নয়নের স্বার্থেই কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ বলে জানানো হয়। দুটি অঞ্চলের জন্য বিশেষ প্যাকেজও ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তবে এর বিরোধিতায় সরব হয়েছিলেন একদল রাজনীতিবিদ। জম্মু-কাশ্মীরের প্রধান দল ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং পিডিপি – উভয়েই কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে। দলের নেতাদের সেই বিরোধিতা নবগঠিত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের শান্তি লঙ্ঘন করতে পারে, এই আশঙ্কায় এনসি নেতা ফারুখ আবদুল্লা, ওমর আবদুল্লা এবং পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতিকে আটক করে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। এক মাস পর তাঁদের বিরুদ্ধে জনসুরক্ষা আইনের ধারা (PSA) প্রয়োগ করা হয়। তিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুক্তির দাবিতে সরব হয়েছিলেন কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন বিরোধী দলগুলি। প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও।
[আরও পড়ুন: রাজনৈতিক প্রতিহিংসা! জ্যোতিরাদিত্যর বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগের পুনর্তদন্ত শুরু]
এই ঘটনার পরবর্তী সময়ে সংসদের বিভিন্ন অধিবেশনে বারবার জম্মু-কাশ্মীরের নেতাদের মুক্তির দাবি উঠেছে। চলতি অধিবেশনেও বিক্ষোভ দেখান সমমনোনভাবাপন্ন দলের সাংসদরা। যাতে অংশ নেন তৃণমূল সাংসদরাও। ফারুখ আবদুল্লা নিজেও চিঠি লিখে আবেদন করেন যে তিনি কোনও ‘অপরাধী’ নন। তাহলে তাঁকে এভাবে কেন বন্দি রাখা হয়েছে? মুক্তি দেওয়া হোক। তাঁকে সমর্থন করে কংগ্রেস-সহ অন্যান্য দলের নেতৃত্ব। চাপ বাড়তে থাকে কেন্দ্রের উপর। সেই চাপে পড়েই আজ ফারুখ আবদুল্লাকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। শিগগিরই তিনি শ্রীনগরে নিজের বাড়িতে ফিরতে পারবেন। টুইটারে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। পাশাপাশি ওমর আবদুল্লাদের মুক্তি নিয়েও আশাপ্রকাশ করেছেন।
ফারুখ আবদুল্লার মাথার উপর থেকে জনসুরক্ষা আইনের খাঁড়া সরে গেলেও, বাকি দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এবং মেহবুবা মুফতিকে কবে ছাড়া হবে, সে বিষয়ে এখনও কোনও খবর নেই। দীর্ঘদিন ধরে বন্দি থেকে ওমরের চেহারার অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। মাস খানেক আগে তাঁর সেই পরিবর্তিত চেহারা দেখে চমকে গিয়েছিলেন রাজনৈতিক মহলের প্রায় সকলেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে তা নিয়ে টুইট করে কেন্দ্রবিরোধী বার্তা দিয়েছিলেন। মেহবুবা মুফতির মেয়েও মায়ের পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন। এখন ফারুখ আবদুল্লার মুক্তি তাঁদের মনেও আশা জাগাচ্ছে।
[আরও পড়ুন: করোনার প্রকোপ ওষুধের বাজারেও, আকাশছোঁয়া দামে নাকাল হবে মধ্যবিত্ত]
The post উঠল জনসুরক্ষা আইনের খাঁড়া, ৭ মাস পর মুক্তি পেলেন ফারুখ আবদুল্লা appeared first on Sangbad Pratidin.