সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পাকিস্তানের প্রাক্তন সেনাশাসক পারভেজ মুশারফের শারীরিক অবস্থা নিয়ে তুঙ্গে জল্পনা। বেশ কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। শুক্রবার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে তাঁকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়। এদিকে, সংবাদমাধ্যমের একাংশে মুশারফের মৃত্যুর খবর আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে, সেই খবরের সত্যতা স্বীকার করেনি পাক প্রশাসন। এমনকী পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটারদেরও দাবি এই খবর সত্যি নয়। পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটার আসিফ ইকবাল প্রথমে এই খবর শুনে প্রতিক্রিয়া দেন সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে, ”কোনও আন্তর্জাতিক নিউজ এজেন্সি এই খবর করেনি।” তিনি আরও বলেন, ”যতক্ষণ না সরকারি ভাবে ঘোষিত হচ্ছে, ততক্ষণ এই খবরের সত্যতা নেই।” আরেক পাক প্রাক্তন ক্রিকেটার বসিত আলিও বলেন, ”এই খবর সত্যি নয়।” মুশারফের শারীরিক অবস্থা নিয়ে জোর জল্পনা চলছে বিশ্বজুড়ে।
জানা গিয়েছে, কয়েকদিন ধরেই দুবাইয়ের এক মার্কিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন মুশারফ। কিন্তু শুক্রবার তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে তাঁকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়। শেষ পাওয়া খবরের মতে, দুবইয়ের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন মুশারফের পরিবারের লোকজন। ১৯৯৯ সালে নওয়াজ শরিফ সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন পাক সেনার তৎকালীন প্রধান মুশারফ। ২০০৮ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন তিনি।
[আরও পড়ুন: ইউক্রেনের হয়ে লড়াই, ২ ব্রিটিশ যোদ্ধা-সহ তিনজনকে মৃত্যদণ্ড, প্রতিবাদে সরব পশ্চিমী দুনিয়া]
১৯৪৩ সালে মুশারফের জন্ম হয় দিল্লিতে। করাচি ও তুরস্কের ইস্তানবুলে শৈশব কাটে প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্টের। লাহোরের ফরমান ক্রিশ্চিয়ান কলেজে মুশাররফ গণিত নিয়ে ভরতি হলেও পরিবারের অমতে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন ১৯৬১ সালে। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। নব্বইয়ের দশকে মেজর-জেনারেল মুশারফ একটি পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়কত্ব এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডো বাহিনী ‘স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপ’ এর প্রধান হন। তিনি পরে সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে ডেপুটি মিলিটারি সেক্রেটারি এবং ডাইরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশন্স ডাইরেক্টরেট ছিলেন।
১৯৯৮ সালের অক্টোবর মাসে পারভেজ মুশাররফের পদবী লেফটেন্যান্ট-জেনারেল থেকে পূর্ণ জেনারেল পদবীতে উন্নীত করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। পূর্ণ জেনারেল হিসেবে পারভেজ সেনাবাহিনী প্রধান এবং চেয়ারম্যান অব দ্যা জয়েন্ট চীফস অব স্টাফ কমিটির দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালে ভারতে হামলার মূল পরিকল্পনা পারভেজই করেছিলেন যেটা পরে কার্গিল যুদ্ধতে রূপ নেয়। প্রধানমন্ত্রী শরীফের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে পারভেজের তর্কাতর্কি থাকায় শরীফ পারভেজকে সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জেনারেল পারভেজ এর জবাব হিসেবে নওয়াজ শরীফকে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেন ১৯৯৯ সালে; শরীফ গৃহবন্দী হন এবং তাকে রাওয়ালপিন্ডির সেন্ট্রাল জেলে আটকিয়ে রাখা হয়।
১৯৯৮ সালের মুশারফকে পাক সেনার প্রধান পদে বসান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। সেনাপ্রধান হিসেবে ১৯৯৯ সালে ভারতে হামলার মূল পরিকল্পনা তাঁরই ছিল। পরে নওয়াজ শরিফকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন কার্গিল যুদ্ধের কারিগর মুশারফ। শরিফকে গৃহবন্দী করে রাওয়ালপিন্ডির সেন্ট্রাল জেলে রাখা হয়। কিন্তু তারপর পরিস্থিতি পালটাতে শুরু করে। ২০০৭ সালে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কার্যকলাপ ও বেআইনিভাবে জরুরি অবস্থা লগু করার নিয়ে ২০১৩ সালে মুশারফের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তৎকালীন নওয়াজ শরিফ সরকার। তাঁর বিরুদ্ধে দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়। শুনানি শেষে ২০১৪ সালের মার্চ মাসে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। যদিও পরে সেই সাজা মাফ করএ দেওয়া হয়। তবে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন ও অন্যান্য আইনি জটিলতায় সাজা ঘোষণা ক্রমে পিছিয়ে যায়। এহেন পরিস্থিতিতে ২০১৬ সালে দেশ ছাড়েন প্রাক্তন পাক সেনাপ্রধান।