রাজকুমার, আলিপুরদুয়ার: কোজাগরী পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় মশাল জ্বালিয়ে চা পাতা তুলল আলিপুরদুয়ারের মাঝের ডাবরি চা বাগান কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার ১০০ চা শ্রমিককে পূর্নিমার রাতে চা পাতা তোলার কাজে লাগিয়েছিল সমতলের এই চাবাগান কর্তৃ পক্ষ। এদিন সন্ধ্যা ৫ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত চাপাতা তোলা হয়েছে। প্রায় ২০০০ কেজি চা পাতা তুলেছেন ১০০ মহিলা চা শ্রমিক।
কিন্তু হঠাৎ করে কেন পূর্ণিমার রাতে চা গাছের দুটি পাতা ও একটি কুঁড়ি তোলার উদ্যোগ? চা বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সূর্য ডুবে যাওয়ার পর অন্যান্য গাছের মতো চা পাতায় তার খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। এই সময় চা পাতায় নাইট্রোজেন ও ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায়। আর ভরা পূর্ণিমায় চা গাছের পাতায় অন্যান্য গুণাগুণও বেড়ে যায়। ফলে এই সময় চা গাছ থেকে ছিঁড়ে আনা চা পাতা থেকে তৈরি চা স্বাদে, গন্ধে ও গুণে অতুলনীয়। সে কারণে ভরা পূর্ণিমায় চা পাতা তুলে তা থেকে চা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে আলিপুরদুয়ারের মাঝের ডাবরি চা বাগান কর্তৃপক্ষ।
[আরও পড়ুন: চোলাইয়ের ঘাঁটি ভাঙতে অভিযান বর্ধমানে, পুলিশকে দেখেই ক্যানালে ঝাঁপ মদ বিক্রেতার]
এই সময় তোলা চা পাতা থেকে তৈরি চা বাজারে ‘ফুল মুন টি’ নামে পরিচিত। স্বাদে, গন্ধে ও গুণাগুণে এই চায়ের নাকি কোনও তুলনা হয় না। মাঝের ডাবরি চা বাগানের ম্যানেজার চিন্ময় ধর বলেন, “যে কোনও ফুলের গন্ধ দিনের থেকে রাতেই পাওয়া যায় বেশি। অর্থাৎ রাতে গাছের পাতা ও ফুলের গুণাগুণ বেশি থাকে। পাহাড়ে বিভিন্ন চা বাগান পূর্ণিমার রাতে চা পাতা তুলে চা তৈরি করে। এই চা ‘ফুল মুন টি’ নামে পরিচিত। সমতলে আমরাই প্রথম এই চা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। চার বছর থেকে এই চা তৈরি করছি আমরা। ভোর পাঁচটা থেকে সকাল ৮ টার মধ্যে কাঁচা চা পাতা থেকে চা তৈরির প্রক্রিয়া শেষ করে প্যাকেটজাত করে ফেলা হবে। এই চায়ের বাজারে দারুণ কদর।”
‘ফুল মুন টি’ তৈরি উপলক্ষে মাঝের ডাবরি চাবাগানে ছিল একেবারে সাজ সাজ রব। ডাবরি টি লাউঞ্জে ধামসা মাদলের তালে আদিবাসী রমণীরা নৃত্য পরিবেশন করেন। সেই তালে মশাল জ্বালিয়ে কপালে সার্চ লাইট লাগিয়ে পূর্ণিমার আলোতে চা পাতা তোলেন শ্রমিকরা। এক অনাবিল সুন্দর দৃশ্য তৈরি হয়েছিল মাঝের ডাবরি চা বাগানে। যা দেখতে ভিড় জমান অনেকেই। আলিপুরদুয়ার চেচাখাতার বাসিন্দা সঞ্চিতা দত্তও এদিন ছেলেকে নিয়ে এই দৃশ্য দেখার জন্য চা বাগানে হাজির হন। তিনি বলেন, “সকালে হাঁটতে এসে রাতে চাঁদের আলোতে চা পাতা তোলার কথা শুনি। ছেলেকে নিয়ে এই দৃশ্য উপভোগ করতে চলে এসেছি। শুনেছি এই চায়ের খুব দাম। ১৫০০ টাকা কেজি। এই চা কিনে খাওয়া আর আমাদের পক্ষে সম্ভব? তবে এই অসাধারণ সুন্দর এক দৃশ্যের সাক্ষী থাকতে পারলাম আমরা।” জানা গিয়েছে, গত বৌদ্ধ পূর্ণিমাতে এই চা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল মাঝের ডাবরি চা বাগান কর্তৃপক্ষ। এবার কোজাগরী পূর্ণিমাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সমতলের একমাত্র মাঝের ডাবরি চা বাগান কর্তৃপক্ষই এই চা তৈরি করে।
দেখুন ভিডিও: