নিবাস যদি হয় গঙ্গাপাড়ের রাজ্যে, তাহলে গলব্লাডারের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি থাকে বেশি। একাধিক সমীক্ষায় বেরিয়ে এসেছে এই তথ্যই। কিন্তু কেন? এর থেকে পরিত্রাণই বা মিলবে কীভাবে? বিস্তারিত জানালেন মেডিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট ডা. তন্ময় মণ্ডল। শুনলেন কোয়েল মুখোপাধ্যায়।
এমনিতে সেটি চার ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের, নাশপাতির মতো আকৃতিবিশিষ্ট অঙ্গ, যার অবস্থান লিভারের ঠিক নিচে। কিন্তু এই গলব্লাডারেও ক্যানসারের (Cancer) সংক্রমণ হয়। আর অন্যান্য ক্যানসারের তুলনায় তা অত্যন্ত বেশি আক্রমণাত্মক এবং বিপজ্জনক। মৃত্যুও হতে পারে। তবে তার থেকেও বড় কথা, যদি আপনি হন উত্তর তথা উত্তর-পূর্ব ভারতের বাসিন্দা এবং আপনার নিবাস হয় গঙ্গা নদীর তীরস্থ কোনও রাজ্য যেমন উত্তরপ্রদেশ, হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, হরিয়ানা, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, বিহার, দিল্লি এবং পশ্চিমবঙ্গ, তাহলে আপনার গলব্লাডার ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি, দক্ষিণ ভারতের কোনও রাজ্যের (নন গঙ্গা-বেল্ট) তুলনায় দশ গুণ বেশি। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটা সত্য। কারণ একাধিক সমীক্ষায় এই তথ্যই ধরা পড়েছে।
জলেই রয়েছে জীবাণু
এখনও পর্যন্ত তিনটি কারণ সামনে এসেছে। প্রথমত, সালমোনেলা টাইফি। এই ব্যাকটিরিয়া থেকে ডিসেন্ট্রি, টাইফয়েড হয়। গঙ্গার (Ganga) জলে এর আধিক্য থাকায়, এর তীরস্থ বাসিন্দাদের গলব্লাডারের ক্যানসার বেশি হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। দ্বিতীয় সম্ভাব্য কারণ এইচ ফাইলোরি (হেলিটোব্যাক্টর ফাইলোরি)। তৃতীয়, জলের দূষণ। গঙ্গার জলে শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য, তেজস্ক্রিয় পদার্থ, কৃষিজ বর্জ্য এসে মেশে। দূষিত জল শরীরে যাওয়ার ফলে সংক্রমণ হতে পারে। পাহাড় ছাড়িয়ে গঙ্গার জল যত নিচে তথা দক্ষিণে নামছে, ততই সেখানে ব্যাকটেরিয়া, বর্জ্য ও দূষণের পরিমাণ বাড়ছে। অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশে গঙ্গার জলে দূষণ তথা জীবাণুর যা পরিমাণ ছিল, বিহার বা পশ্চিমবঙ্গে তা আরও বাড়ছে। এছাড়াও বিশেষজ্ঞদের একাংশ এটাও মনে করছে, উত্তর ভারতের অধিবাসীদের রান্নায় সরষের তেল ব্যবহার করাও একটি কারণ। সরষের তেলের একটা ‘ইরিটেটিং প্রপার্টি’ আছে। তুলনায় নারকেল তেল অনেক কম ঝাঁজালো। আর দক্ষিণ ভারতীয় রান্নায় নারকেল তেলেরই ব্যবহার বেশি। তবে এই সব কারণের কোনওটিই স্বীকৃত নয়। গঙ্গোত্রী থেকে শুরু করে বিহার, পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গার জলের স্যাম্পেল টেস্টিং করা হয়েছে, রেডিওঅ্যাক্টিভিটি পরীক্ষা করা হয়েছে। এমনকী, মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়ালে এই নিয়ে গবেষণা চলছে। গবেষণার ফলই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে।
[আরও পড়ুন: হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হলেও নেই মুক্তি, প্রতি ঋতুতেই আসবে করোনা, দাবি গবেষণায়]
স্টোন থেকে ক্যানসার
গলব্লাডারে স্টোন হলেই যে গলব্লাডারের ক্যানসার হবে, তা নয়। যদিও গলব্লাডারে স্টোন হলে গলব্লাডারের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অনেক সময় দেখা গিয়েছে, হয়তো কারও গলব্লাডারে স্টোন হয়েছে। অস্ত্রোপচার করে তাঁর দেহ থেকে পাথর বের করে পরীক্ষা (বায়োপসি) করে দেখা গেল, যে তাতে ক্যানসার (ইনসিডেন্টাল গলব্লাডার ক্যানসার) আছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এর প্রকোপও দক্ষিণের তুলনায় উত্তর ভারতেই বেশি। শুধু তাই নয়। সাধারণত গলব্লাডারে স্টোন ৫০ থেকে ৬০ বছর বা তারও বেশি বয়সিদের হয়। কিন্তু উত্তর ভারতে ৩০-৩৫ বছর বয়সিদেরও এর প্রবণতা দেখা যায়।
জল ফুটিয়ে খান
জল ফুটিয়ে খেতে হবে। তবে উন্নত মানের আরও, ইউভি ওয়াটার পিউরিফায়ার ব্যবহার করলেও ভাল।কেউ কেউ মনে করেন, ৩০ বছর বয়সের পর গলব্লাডার অপারেশন করে নিলে আর ক্যানসারের ভয় থাকবে না। কিন্তু এটা কোনও সুরাহা নয়। ওষুধ দিয়ে তখনই নিরাময় করা সম্ভব, যদি তা প্রথম কিংবা দ্বিতীয় স্টেজে থাকে। চতুর্থ স্টেজে ধরা পড়লে আর কিছু করার থাকে না।
[আরও পড়ুন: যোগাসন, প্রাণায়াম, চবনপ্রাশ! সুস্থ থাকতে করোনাজয়ীদের জন্য নয়া নির্দেশিকা কেন্দ্রের]
The post গঙ্গাপাড়ের বাসিন্দাদের ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি! নয়া সমীক্ষায় দাবি চিকিৎসকদের appeared first on Sangbad Pratidin.