অভিরূপ দাস: ইচ্ছেমতো বেড ভাড়া বাড়ানো যাবে না। ওষুধে দিতে হবে ছাড়। বেসরকারি হাসপাতালগুলির জন্য এমনই নির্দেশিকা জারি করেছিল স্বাস্থ্য কমিশন। সেই নির্দেশ না মেনেই বিপাকে শিলিগুড়ির (Siliguri) মাটিগাড়ার অ্যাভালান হাসপাতাল। রোগীর পরিবারকে ২ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা ফেরত দিতে হবে হাসপাতালকে। দার্জিলিংয়ের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দেখতে।
এই তদন্তের নেপথ্যে কিশোর তামাং নামে এক ব্যক্তির একটি অভিযোগ। দার্জিলিংয়ের (Darjeeling) বাসিন্দা কিশোর তাঁর করোনা আক্রান্ত স্ত্রী বিজয়া রাইকে ভরতি করেছিলেন শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার পরিবহন নগরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে। গত ২২ মে থেকে টানা ২০ দিন ওই হাসপাতালে ভরতি ছিলেন বিজয়া। ২০ দিনের করোনা চিকিৎসায় বিল হয় ৮ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা। সেই বিল খতিয়ে দেখতে গিয়েই কমিশনের চক্ষু চড়কগাছ। শুধুমাত্র প্যাথোলজিকাল টেস্টের জন্য হাসপাতাল বিল করেছে ৪২ হাজার টাকা। কী কী টেস্ট হয়েছে তার কোনও বিস্তারিত তথ্য নেই বিলে। মেডিসিন বাবদ হাসপাতাল বিল করেছে ৩ লক্ষ টাকা। চিকিৎসকের ফি বাবদ ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “আমাদের কোনও অ্যাডভাইসরি মানেনি হাসপাতাল।”
[আরও পড়ুন: বৃহস্পতিবার থেকে পূর্ণসময় খোলা থাকবে ব্যাংক, রাজ্যবাসীর স্বার্থে বড়সড় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর]
কোভিড চিকিৎসার জন্য অ্যাডভাইসরি জারি করেছিল রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। যেখানে বলা হয়েছিল ২০২০ সালের ১লা মার্চের আগে অর্থাৎ করোনা আবহের আগে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে যে বেড চার্জ ছিল করোনা চিকিৎসায় সেই চার্জই নিতে হবে। ওষুধে দিতে হবে ১০% ছাড়। আক্রান্তের পরিবার চাইলে বাইরে থেকেও ওষুধ আনতে পারেন। তুলো, ব্যান্ডেজ, গ্লাভস, পিপিই-সহ অন্যান্য জিনিসে ২০% ছাড় দিতে হবে বেসরকারি হাসপাতালকে। ডাক্তারদের দৈনিক ভিজিট হাজার টাকার বেশি হবে না। ক্রিটিক্যাল কেয়ারে একাধিকবার ভিজিটের ক্ষেত্রে আরও ১ হাজার টাকা অতিরিক্ত নেওয়া যাবে।
এমন কোনও নির্দেশিকাই মানেনি অ্যাভালন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কমিশনের জরিপ, ২০ দিনের জন্য সর্বোচ্চ ৬ লক্ষ টাকা নিতে পারে হাসপাতাল। সেই হিসেবে অবিলম্বে রোগীর পরিবারকে ২ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা ফেরত দিতে হবে হাসপাতালকে। তিন কিস্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে রোগীর পরিবারকে টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। কমিশন চেয়ারম্যানের কথায়, ২ সেপ্টেম্বর প্রথম কিস্তিতে ৬০ হাজার টাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬০ হাজার টাকা এবং ৩০ সেপ্টেম্বর তৃতীয় কিস্তিতে ৭৪ হাজার টাকা ফেরত দিতে হবে হাসপাতালকে। এছাড়াও অন্যান্য করোনা রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও অ্যাডভাইসরি মেনে বিল করা হয়েছে কী না তা দেখার জন্য দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।