করোনার পরে সারা বিশ্বজুড়ে মানসিক রোগীর সংখ্যা হু হু করে বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশনে আক্রান্তের সংখ্যা। ২০২০-২০২৪ সালের মধ্যে মানসিক অসুখ বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে অ্যান্টি ডিপ্রেস্যান্ট ওষুধের বিক্রিও।
২০২০ সালে মানসিক অসুখের ওষুধের মার্কেট ভ্যালু ছিল ১ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের নভেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রায় ৬৪ শতাংশ মার্কেট বৃদ্ধি পেয়েছে। কম্পাউন্ড অ্যানুয়াল গ্রোথ রেট ১৩ শতাংশ। এসিটালোগ্রাম ও ক্রোনাজেপাম কম্বিনেশনের ওষুধের বিক্রি ২০২০ থেকে ৫৯.৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এসিটালোগ্রাম ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার, মস্তিস্কে সেরোটিনিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
ক্লোনাজেপাম উদ্বেগ কমাতে, প্যানিক অ্যাটাক, খিঁচুনি, সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমকে শান্ত রাখতে ব্যবহার করা হয়। সার্ট্রালাইনের বিক্রিও এই সময়ের মধ্যে বেড়েছে ৪৮.২ শতাংশ। ডিপ্রেশন, ওসিডি, ট্রমা পরবর্তী স্ট্রেস কমায়।
এ প্রসঙ্গে সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. দেবাঞ্জন পান জানান এসিটালোগ্রাম ও ক্লোনাজেপাম ওষুধ ভারতে বিক্রি বাড়ার কারণ, অর্থোপেডিক, দীর্ঘদিন গ্যাস-অম্বলে ভোগা রোগীকে অন্য ডাক্তাররাও এগুলি প্রেসক্রাইব করেন। তাছাড়া মানুষ এখন মানসিক অবসাদ নিয়ে আগের চেয়ে বেশি সচেতন হয়ে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন। করোনার সময় গ্রামীণ ভারতে যে অর্থনৈতিক মন্দা হয়েছিল সেই পরিস্থিতি এখনও পুরো ঠিক হয়নি। প্রান্তিক মানুষের মধ্যে অবসাদ বেড়েছে। শহরে আবার ডিজিটাল নির্ভর লাইফস্টাইল বাড়ায় কায়িক পরিশ্রম কমেছে। সোশ্যাল মিডিয়া ও স্ক্রিনটাইম বাড়ার জন্যও পরোক্ষে বাড়ছে অবসাদ।
আরেক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রদীপ সাহা বলেন, "করোনার ডিপ্রেশন, অবসেসিভ অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার, বাইপোলার ডিসঅর্ডার, স্কিৎজোফ্রেনিয়া বেড়েছে। এমনকী করোনায় প্রিয়জনকে হারানোর শোক থেকেও অবসাদ মারাত্মকভাবে বেড়েছে। অনেকেই করোনায় মৃত আত্মীয়কে ঠিকমতো সৎকার করতে না পেবে ট্রমায় চলে যান, অনটনের সাক্ষী হয়ে অস্থির হয়ে পড়েন। আবালবৃদ্ধবনিতার মধ্যে অবসাদ বেড়ে গিয়েছে। কোভিড ও ভবিষ্যতের আতঙ্কে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টাও করেছেন বহু মানুষ। ওষুধের মাধ্যমে এদের চিকিৎসা সম্ভব হয়েছে।
তবে মানসিক অসুখের ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে দীর্ঘদিন খেলে সাউন্ড এফেক্ট দেখা দেয়। গ্যাস, অম্বল, পুরুষদের সেক্সুয়াল ডিসঅর্ডার হতে পারে।
তথ্য ও অলংকরণ: পৌষালী দে কুণ্ডু