নন্দন দত্ত, সিউড়ি: বীরভূমে মিলল ফাইলেরিয়ার বিরলতম রোগীর সন্ধান। এদিকে বীরভূম স্বাস্থ্য জেলায় সোমবার থেকে চারটি ব্লকে ফাইলেরিয়া রোধে শুরু হয়েছে ‘গণ ওষুধ সেবন’ কর্মসূচি। জেলা প্রকল্প আধিকারিক তথা অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মৃণাল ঘোষ বলেন, ‘‘খয়রাশোল, দুবরাজপুর, সিউড়ি ১ ও রাজনগর ব্লকের প্রতিটি সেন্টার থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফাইলেরিয়ার ওষুধ খাওয়ানো হল।’’

অন্যদিকে, এদিনই সিউড়ি সদর হাসপাতালের নাক-কান-গলার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অর্ণব দত্ত বলেন, ‘‘কানের পাশে প্যারিটেড গ্রন্থিতে ফাইলেরিয়ার সন্ধান আমরা পেয়েছি। যা বিরল থেকে বিরলতম। এখনও তার পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। সেটি দূরীকরণে সফল হলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে একটা অন্যতম সাফল্য হবে।’’ যদিও মৃণাল ঘোষ বলেন, ‘‘সরকারিভাবে আমাদের কাছে প্যারিটেড ফাইলেরিয়ার কোনও তথ্য নেই। আমরা খোঁজ নেব।’’
বীরভূম জেলার চারটি ব্লকে মশাবাহিত ফাইলেরিয়া রোগের জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে রাতে শিবির করে এলাকায় রক্তের নমুনা সমীক্ষা করে এই ফাইলেরিয়া প্রবণ এলাকা চিহ্নিত করেছে বীরভূম জেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা দপ্তর। নমুনা সমীক্ষায় একের বেশি ফাইলেরিয়ার জীবাণু পেলেই সেই ব্লককেই নির্মূলকরণের জন্য ওষুধ খাওয়াবে। সমীক্ষায় সিউড়ি ১ ব্লকের লাঙ্গুলিয়ায় ৩ জনের শরীরে জীবাণু মিলেছে। দুবরাজপুরে ৪ জন। রাজনগরে ৩ জন ও খয়রাশোলে দু'জন মিললেও
ফাইলেরিয়া প্রবণতা বেশি থাকায় ওই ব্লককেই গণ ওষুধ সেবনের আওতায় আনা হয়েছে। ফাইলেরিয়ার লক্ষণ হিসাবে পায়ে গোদ অথবা হাইড্রোসিলের লক্ষণ দেখা দেয়। কিন্তু সিউড়ির ৩২ বছরের এক যুবকের ডান দিকের কানের বাইরের দিকে কিছু গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি লক্ষ্য করেন চিকিৎসকরা। কানের পাশের ওই অংশের বায়োপ্সি করিয়েও তার ভিতর ক্যানসারের জীবাণু মেলেনি।
চিকিৎসক অর্ণব দত্ত বলেন, ‘‘আমরা অণুবিক্ষণ যন্ত্রের তলায় ফেলে ও একইসঙ্গে ইউএসজি করে এই বিরলতম ফাইলেরিয়ার সন্ধান পাই। ওষুধ প্রয়োগে ফাইলেরিয়া জীবাণু নষ্ট হয়েছে। সোমবার ওই রোগীকে বর্ধমানে এই পরিস্থিতিতে অপারেশন সম্ভব কিনা তার পরামর্শ নিতে পাঠানো হয়। বর্ধমানের চিকিৎসক অপারেশন করে কানের পাশের অংশ স্বাভাবিক করা সম্ভব বলে প্রাথমিক ইঙ্গিত দিয়েছেন। আরও পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেটা সফল হলে সেটা জেলার সঙ্গে বাংলার চিকিৎসা বিজ্ঞানে একটা অন্যতম সাফল্য হিসাবে চিহ্নিত হবে।’’