সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে জনজীবন যখন ওষ্ঠাগত, তখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে থাকে বাড়ির শিশুরা। বিশেষ করে নবজাতকরা। প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। কারণ তাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তুলনামূলক অনেক কম। শিশুদের শরীরের ওজনের অনুপাতে ত্বকের উপরিভাগ বেশি হওয়ায় দ্রুত জল বাষ্পীভূত হয়। এ বিষয়ে অভিভাবকদের পরামর্শ দিতে গিয়ে দিল্লির এইমস (AIIMS)-এর নবজাতক বিশেষজ্ঞ ডাঃ রমেশ আগরওয়াল জানান, সদ্যোজাত শিশুদের সবসময় নরম কাপড়ে মুড়িয়ে রাখার একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। অনেক বাবা-মা গরমেও শিশুদের নরম কম্বলে মুড়ে রাখেন। এর ফলে শিশুর শরীর থেকে তাপ বের হতে পারে না। ফলে দেহের তাপমাত্রা বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যায়, যা হিট স্ট্রোকের অন্যতম কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। ডাঃ আগরওয়াল জোর দিয়ে বলেন, ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপমাত্রায় শিশুদের অবশ্যই শীতল পরিবেশে রাখতে হবে। প্রয়োজনে কুলার বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রক ব্যবহার করতে দ্বিধা করা উচিত নয়।
শিশুদের সুস্থ রাখতে কিছু মৌলিক বিষয় মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি:
দিনের নির্দিষ্ট সময়ে শিশুকে ঘরের ভিতরে রাখুন: দিনের উষ্ণতম সময়ে, অর্থাৎ সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৫টা বা ৬টা পর্যন্ত শিশুদের ঘরের বাইরে না বের করাই ভালো। রোদ এড়াতে তাদের বাড়ির ভেতরে রাখাই নিরাপদ।
দিনের বেলায় ঘরের সমস্ত পর্দা দিয়ে রাখুন: এতে সরাসরি সূর্যের আলো জানলা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না। সন্ধ্যা ৬টার পর যখন তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসবে, তখন জানালা খুলে ঘর ঠান্ডা হতে দিন। প্রয়োজনে ফ্যান বা এসি ব্যবহার করুন।
ছ'মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের শুধুমাত্র মায়ের দুধ পান করান: তাদের যখনই তৃষ্ণা পাবে, স্তন্যপান করান। দুই বছর বয়েসের শিশুকে মায়ের দুধের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে জল, ফলের রস বা ডাবের জল দিতে পারেন।
শিশুকে কোনওভাবেই অতিরিক্ত গরমে পোশাক পরাবেন না: হালকা সুতির কাপড় পরানোই সবচেয়ে ভালো।
মধুকার রেইনবো চিলড্রেনস হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক্স বিভাগের পরিচালক ডাঃ নীতীন বলেন, "প্রাপ্তবয়স্কদের শরীর থেকে ৫০০ মিলি জল বিয়োগ ঘটলে তা সামলানো তাদের পক্ষে সহজ। কিন্তু একটি ছোট শিশু যার ওজন ১২ কেজি, তার শরীর থেকে ২৫০ মিলি জল বেরিয়ে গেলে তা যথেষ্ট বিপজ্জনক অবস্থায় পর্যবসিত হবে।"
একেবারে ছোট শিশুরা অনেক সময় তৃষ্ণা অনুভব করলেও তা মুখ ফুটে বলতে পারে না, তাই অভিভাবকদেরই তাদের জল পানের বিষয়ে সর্বদা নজর দিতে হবে। শুধু জল নয়, শিশুদের ডাবের জল, লেবুর শিকঞ্জি, ঘোল, লস্যি এবং টাটকা ফলের রস দিন। চিনিযুক্ত ঠান্ডা পানীয় সর্বদা এড়িয়ে চলুন। কারণ এতে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে যা উলটে তৃষ্ণা বাড়াতে পারে।
ডাঃ আগরওয়াল-এর মতে, বাইরে বের হলে শিশুদের জন্য এক বোতল জল ও এক বোতল ওআরএস(ORS) সঙ্গে রাখা জরুরি। ঘামলে শিশুদের শরীর থেকে জলের সঙ্গে প্রয়োজনীয় লবণ ও চিনিও বেরিয়ে যায়। ওআরএস সেই ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে।
ডাঃ বর্মার মতে, ২ বছরের কম বয়সি শিশুদের দিনে প্রায় ১ লিটার জল পান করা উচিত। ২ বছরের অধিক বয়েসের বড় শিশুদের ক্ষেত্রে ২ লিটার বা তার বেশি জল পান করা উচিত। যারা খেলাধুলোয় অংশ নেয় তাদের আরও বেশি জল পান করা উচিত।
এই গরমে প্রতিটি শিশুর প্রতি বাড়তি যত্ন ও সচেতনতা হিট স্ট্রোকের মতো মারাত্মক বিপদ থেকে তাদের রক্ষা করতে পারে।