একটু বৃষ্টির পরই আবার গরমে আঁকুপাঁকু অবস্থা। এই বিরক্তিকর আবহাওয়ায় নির্দিষ্ট অসুখের প্রবণতা বাড়ে। সেই লিস্ট বেশ লম্বা। তাই খাওয়া থেকে ঘুরতে যাওয়া বা কাজকর্মের প্রয়োজনে খুব বুঝে পা ফেলুন, বললেন পিয়ারলেস হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. অনুপম মাইতি।
এই প্যাচপ্যাচে গরমে শরীরের প্রতি বিশেষ সতর্কতা জরুরি। কোন কোন উপসর্গ থাকলে সতর্ক হবেন?
ফুসফুসের সংক্রমণ
এই সময় ভাইরাল আপার রেসপিরেটরি ট্রাক ইনফেকশন খুব বেশি হয়। কারণ, এই সময়ে বারবার ঠান্ডা-গরম লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বারবার এসিতে ঢোকা, আবার গরমে বেরনো, বৃষ্টিতে ফিজে ঠান্ডা বা এসিতে ঢোকাতে এই সম্ভাবনা বাড়ে। ঠান্ডা জল পানের ইচ্ছে বা অভ্যাস বাড়ে। শরীরে এমন হঠাৎ তাপমাত্রার কমা-বাড়ার ফলে সংক্রমণের সম্ভাবনা, সর্দি-কাশি, নাক দিয়ে জল পড়ার সমস্যা প্রায়ই হতে থাকে।
পেটের সংক্রমণ
অতিরিক্ত গরমে সাধারণত ভাইরাল ডিজিজ হয়। এই সময় বাইরে যেখানে-সেখানে জলপান একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়। এই অভ্যাস থেকেই গরমে পেটে ইনফেকশন বা ভাইরাল, ব্যাকটিরিয়াল গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বমি, জ্বর, পেটখারাপ অথবা মলের সঙ্গে রক্ত, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এমন হলে ট্রিটমেন্ট দরকার।
[আরও পড়ুন: গ্রাহক টানতে ‘মিস্ট্রি বক্স’ নিয়ে হাজির Netflix, জেনে নিন এই ফিচারের খুঁটিনাটি]
হিট ইডিমা
অনেকেরই গরমে পা ফোলে। এক্ষেত্রে গরমকালে হঠাৎ হাত-পা ফুলতে থাকে। কারণ গরমে শিরা ফুলে গিয়ে ঘাম তৈরি করে শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে রাখে। বিশেষ যাঁরা রক্তচাপের ওষুধ খান, ডায়াবেটিস (ডায়াবেটিস নিউরোপ্যাথি) রয়েছে এদের ক্ষেত্রে শরীরের অটোরেগুলেশন ঠিক মতো হয় না। ফলে এই ইডিমা বা ফোলা ভাব বাড়তে পারে।
নাক দিয়ে রক্ত পড়া
এই গরমের সঙ্গে মানিয়ে চলার জন্য শরীরে ভ্যাসোডাইলেশন হয়। অর্থাৎ শরীরের শিরা ফুলে ওঠে, যাতে করে ঘাম বেশি তৈরি হয়। ঘাম শুকিয়ে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। যেহেতু নাকের ভিতরের শিরাগুলি পেরিফেরাল সার্কুলেশনের মধ্যে পড়ে তাই যাদের রক্তচাপ বেশি কিংবা নাকের কোনওরকম সমস্যা থাকে তাদের ক্ষেত্রে নাক দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে।
হিট স্ট্রেস
সোজা কথায়, হিট স্ট্রোকের প্রাথমিক অবস্থাকেই বলা হয় হিট স্ট্রেস। এক্ষেত্রে অসম্ভব মাথা যন্ত্রণা করবে, বমিভাব বা বমি হতে থাকে, ঝিমুনিভাব প্রকাশ পায়, উঠে দাঁড়ালে বা বসলে মাথা ঘুরতে থাকে, পেশি ক্রাম্প হয়, হার্ট রেট বেড়ে যেতে থাকে, বুক ধড়ফড় করে। খুব চড়া
রোদে বেশিক্ষণ ঘুরলে বা কাজ করলে এমন হতে পারে।
হিট স্ট্রোক
স্ট্রোকের ক্ষেত্রে নিউরোলজিক্যাল সমস্যা প্রগাঢ় হয়। হিট স্ট্রেস বা স্ট্রোক দু’ক্ষেত্রেই দায়ী ব্রেনে ইলোক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স। পরিবেশের তাপমাত্রা বেশি হলে যদি শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যায় তখন আর এই অটোরেগুলেশন পদ্ধতি ঠিক মতো কাজ করে না, অর্থাৎ শরীরে পর্যাপ্ত ঘাম হলে শরীর ঠান্ডা হয় না। শরীরে ঘামের অভাবে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়ে। শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গও ঠিক মতো কাজ করতে পারে না। মাসেল ব্রেক ডাইন শুরু হয়।
রিস্ক ফ্যাক্টর
যাঁদের হার্টের সমস্যা রয়েছে
যাঁরা প্রেশারের ওষুধ খান, ডায়াবেটিস রয়েছে।
কিডনি ডিজিজ থাকলে
হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণে রাখার ওষুধ যারা খান।
বয়স্কদের গরমে নানা রকম অসুস্থতা হওয়া সম্ভাবনা বেশি।
মদ্যপান
কী কী করবেন না
অ্যাক্লিমেশন (Acclimation) এড়াতে হবে। Acclimation হল শরীরের মানানোর পদ্ধতি নতুন পরিবেশে। আজ বৃষ্টিতে একটু ঠান্ডা, কাল আবার ঘামে প্যাচপাচে, আঁকুপাঁকু অবস্থা। হঠাৎ করে গরম বেড়ে গেলে শরীরকে মানিয়ে নেওয়ার সময়টুকু দেওয়া উচিত।
এমনকী, এসি থেকে বেরিয়ে হঠাৎ করে গরমে গেলেও সাবধান। এক্ষেত্রে এসি ঘরে থাকলে প্রথমে এসি বন্ধ করে কিছুক্ষণ থেকে তারপর বাইরের উচ্চ তাপমাত্রায় বের হন। তাতে সমস্যা অনেকটাই এড়ানো যায়।
ঠান্ডা জল পান করা যাবে না। গরম থেকে এসেই ঠান্ডা জলে স্নান করাও ঠিক নয়। একটু জিরিয়ে নিয়ে তারপর।
এইসময় ত্বকের যত্ন নিতে হবে। বেশি রোদ লাগানো যাবে না। শিশু কিংবা বড়দের যাতে র্যাশ না বের হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
কী কী করবেন
হঠাৎ শরীর গরমে হলে, ঠান্ডা করতে সারফেস কুলিং জরুরি। বারবার ভেজা গামছা দিয়ে গা মোছা ও ঠান্ডা হওয়ায় বসে থাকা।
হিট স্ট্রোকের লক্ষণ থাকলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
বেশি ঘাম হলে ORS খান। এছাড়া ডাবের জল, মুড়ি ভেজানো জল, নুন-চিনি-লেবুর জল খেতে পারেন।
রোদে বেরলে ছাতা ও সুতির জামা-কাপড় ব্যবহার করা জরুরি।
এবং বাইরের খাবার ও জল এড়িয়ে চলুন।