shono
Advertisement

Breaking News

Durga Puja 2021: সপ্তমীর হোমের আগুন নেভে দশমীতে! ডায়মন্ড হারবারের মণ্ডলবাড়ির পুজোর ইতিহাস জানেন?

জমিদার আমলে সন্ধিপুজোয় হত গানফায়ার।
Posted: 05:33 PM Oct 04, 2021Updated: 11:04 AM Oct 05, 2021

সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: জমিদারি আর নেই। রয়ে গিয়েছে জমিদারের বৈঠকখানা, ঘরদালান, জমিদারি আমলের লোহার সিন্দুক, আরও কত কী! সবই আজ ইতিহাস। সেই ইতিহাসেরই এক নীরব সাক্ষী ডায়মন্ড হারবারের বারদ্রোণ গ্রামের মণ্ডলদের জমিদার বাড়ি। মণ্ডল বাড়িতে জোরকদমে চলছে পুজো (Durga Puja 2021) প্রস্তুতি। 

Advertisement

তৎকালীন হাজিপুরের (অধুনা ডায়মন্ড হারবার) বারদ্রোণ গ্রামের বাসিন্দা অযোধ্যা রামের পৌত্র গোলকচন্দ্র মণ্ডল। সেই সময় মণ্ডল পরিবার ছিল পুরোমাত্রায় ব্যবসায়ী। ধান, চাল, নুন ও সাবানের ব্যবসায় ক্রমেই ফুলেফেঁপে উঠেছিল পরিবারটি। ব্যবসার মুনাফার টাকায় একের পর এক জমি কিনেছিলেন বংশধরেরা। পাশ্ববর্তী সরবেড়িয়া, ঘটকপুর, বাজারবেড়িয়া, তালডাঙা, লালবাটি, বদরতলা, রামচন্দ্রপুর, কালিনগর, বাহাদুরপুর গ্রামে প্রচুর ভূসম্পত্তির মালিক মণ্ডল পরিবার। শুধু তাই নয়, লাট অঞ্চলের ছয়ের ঘেরি, এগারোর ঘেরি, পিঁপড়েখালি-সহ বহু জায়গায় বিস্তার লাভ করে তাঁদের জমিদারী। সেসময় পালকি চেপে লাট অঞ্চলে জমিদারী দেখাশোনা করতে যেতেন তাঁরা। পুকুরঘাট, কাছারিবাড়ি, বিশাল দুর্গাদালান তো ছিলই, তৈরি হয়েছিল জমিদারের নায়েব, গোমস্তাদের কাজের জন্য একাধিক ঘর। ঘরের পুরু দেওয়ালে ছিল রকমারি সব কারুকাজ। সমগ্র বাড়িতে ছিল ৩৩ টি কক্ষ। দারোয়ান, জমিদারের পালকি বাহকদের জন্যও আলাদা ঘরের ব্যবস্থা ছিল।

জমিদারী আমলের সিন্দুক

[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: করোনায় ঘরে ফেরা হয়নি, মার্কিন মুলুকেই পুজোর আয়োজনে প্রবাসী বাঙালিরা]

কাছারিবাড়ির মূল প্রবেশপথের উঁচু তোরণের উপরে দু’পাশে মুখোমুখি দু’টি সিংহমূর্তি। আর ফটকের ঠিক উপরে সিদ্ধিদাতা গণেশের মূর্তি। সদর দরজার পূর্বদিকে লম্বা বারান্দা। জমিদারের কাছারিবাড়িতে ঢোকার মূল ফটকের দু’দিকে থাকত গাদা বন্দুকধারী দুই দারোয়ান। জমিদার বাড়িতে টাকাপয়সা ও সোনাদানা রাখার জন্য ছিল বড় বড় চারটি লোহার সিন্দুক। ওই সিন্দুকের পাশে রাখা থাকত কাতান। ডাকাতির সময় যাতে ওই কাতান সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহার করতে পারা যায়। সে এক রূপকথার গল্প। আজও জমিদার বাড়ির সেসব চিহ্নের কিছু কিছু অবশিষ্ট।

১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে জমিদার গোলকচন্দ্র মণ্ডলের জীবদ্দশায় মণ্ডলবাড়িতে শুরু হয় উমার আরাধনা। প্রথম থেকেই মণ্ডল বাড়িতে একচালা প্রতিমা। আগে মাটির সাজের দেবী দুর্গার আরাধনা হত। সাতের দশক থেকে প্রতিমার ডাকের সাজ শুরু হয়। রথযাত্রাতে হয় কাঠামো পুজো। ষষ্ঠীর দিন বেলতলায় দেবীর বোধন। পরিবারের কুলদেবতা লক্ষ্মীনারায়ণের মন্দির রয়েছে দুর্গাদালানের পাশেই। সেই মন্দির থেকে কুলদেবতাকে সিংহাসনে বসিয়ে দুর্গাদালানে দেবী দুর্গার পাশে আনা হয়। পুজোর চারদিন গৃহদেবতারও পুজো হয়। সপ্তমীর হোমের আগুন নেভে দশমীতে। অষ্টমীতে কুমারী পুজোর রীতি রয়েছে। জমিদার আমলে সন্ধিপুজোয় হত গানফায়ার। বর্তমানে তা আর হয় না। আগে রেওয়াজ ছিল পাঁঠাবলির।

মণ্ডলদের জমিদার বাড়ি

রীতি মেনে পরিবারের সবচেয়ে প্রবীণ দম্পতি পুজোয় উপবাস করেন। প্রশান্ত মণ্ডল ও সবিতা মণ্ডল গত আটবছর ধরে সেই ভূমিকায়। আশির কাছাকাছি বয়সের প্রশান্ত মণ্ডল জানান, আগে সন্ধিপুজোর সময় তিনি বাড়িতে গানফায়ার দেখেছেন। দেখেছেন পাঁঠাবলিও। কিন্তু পঞ্চাশের দশক থেকে পাঁঠাবলিও বন্ধ। পরিবারের সদস্য নচিকেতা মণ্ডল জানান, জমিদারি আমলে নবমীতে নরনারায়ণ সেবায় দই-চিঁড়ে খাওয়ানোর ব্যবস্থা ছিল।

গেঁয়োখালি থেকে হুগলি নদীপথে নৌকায় মণ মণ দই হাঁড়ার ঘাট হয়ে বোলসিদ্ধির খালপথে আসত বারদ্রোণ গ্রামে। বস্তা বস্তা চিঁড়ে তালপুকুরের জলে ভিজিয়ে স্নানের ঘাটে চাটাই বিছিয়ে তাতে রেখে মেশানো হত হাঁড়ির পর হাঁড়ি দই আর চিনি। আজ সেসব ইতিহাস। পরিবারের সদস্যদের অনেকেই এখন কর্মসূত্রে দেশবিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকেন। পুজোর সময় দালানবাড়িতে নিয়ম করে আসতেন সকলেই। কিন্তু করোনার কারণে গত বছর পুজোর চারদিন মণ্ডল বাড়ির সেই মিলনমেলায় পরিবারের সদস্যদের অনেকেই অনুপস্থিত ছিলেন। এ বছর যদিও বাড়ির পুজোয় যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে অনেকেরই।

[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: ‘ব্রহ্মদত্যির ঘরে’ উমা আরাধনা! হুগলির ঘোষ বাড়িতে তুঙ্গে পুজো প্রস্তুতি]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement