এক কামড়েই কাত আট থেকে আশি। তাই মশা মারতে সবাই সচেতন।
তবে এইসব উপকরণ মোটেই স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়। মশার কামড় ও
অস্বাস্থ্যকর ধূপের ধোঁয়া থেকে বাঁচতে অন্য কোন উপায়ে রেহাই মিলবে
জানা জরুরি। লিখছেন সুমিত রায়।
ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। মশাবাহিত রোগ রোধ করতে মশা মারার পথ সবদিক থেকে খোলা রাখাই আসল প্রতিকার। সন্ধের সন্ধিক্ষণে এই সব রক্ত চোষকদের আনাগোনা বৃদ্ধি পায়। তাই সন্ধে থেকেই তাঁদের উপর আক্রমণ হানতে ধূপ থেকে মশা মারার তেল সবই ঘরে ঘরে জ্বলতে শুরু করে। এতে মশা কমে ঠিকই। কিন্তু তা থেকে অন্য রোগের আশঙ্কাও ঘনিয়ে আসতে পারে। এক ক্ষতি আটকাতে গিয়ে অন্য ক্ষতির কবলে পড়লে বিপদ। তাই এমন উপায়ে মশা তাড়ান যাতে মশাও মরে আর আপনিও নিরাপদ থাকেন।
সহজে বিপদ বেশি
বাজারে অনেক রকম উপায় উপলব্ধ যা দিয়ে এই মশা মারা বা তাড়ানো যেতে পারে। মশার ধূপ, মশার তেল বা ভেপারাইজার, স্প্রে ইত্যাদি। ডিমের পেটি জ্বালিয়ে অনেক জায়গায় মশা তাড়ানো হয়। যদিও খুব সহজ এই পদ্ধতিগুলি স্বাস্থ্যকর একেবারেই নয়। যা অনেক রোগের কারণও।
মশার ধূপে বিপদ
এর মূল উপাদান হল পাইরেথ্রম যেটা চন্দ্রমল্লিকা ফুলের নির্যাসে পাওয়া যায়। কিন্তু এটার রাসায়নিক বিকল্প অনেক রকমের হয়। যেমন প্রলেথ্রিন যার সঙ্গে থাকে ফর্মালডিহাইড (যেটা ফর্মালিন এবং জল মিশিয়ে তৈরি করা হয়)। ঘরে জ্বালানোর পর এতে প্রচুর পরিমাণে ধোঁয়া বের হতে থাকে ও একরকম গন্ধ থাকে যা মশা সহ্য করতে পারে না। এতে মশার সঙ্গে ক্ষতি মানুষেরও হয়। একটি মশার ধূপের ধোঁয়া বায়ুতে পি এম বা পার্টিকুলেট ম্যাটার (বায়ু দূষণের সূচক) ২ .৫ বাড়িয়ে দেয়, সেটা ৭৫-১৩৭ টি সিগারেটের ধোঁয়ার সমান। একটা কয়েল জ্বালিয়ে রাখার অর্থ ৫০ টি সিগারেট খাওয়ার সমান। সুতরাং ক্ষতির পরিমাপ আন্দাজ করাই যায়। এই ধোঁয়ায় থাকার ফলে যে লক্ষণগুলি দেখা দেয় তা হল- মাথা ধরা বা ঝিমঝিম ভাব, হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট, চোখজ্বালার সমস্যা প্রকাশ পায়। এছাড়া স্নায়ুর ক্ষতি করে, মানসিক চাপ বাড়ায় এবং অনিদ্রা ঘটায়। ৭-৮ বছর টানা প্রতিদিন এই ধোঁয়াভরা ঘরে থাকলে ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।
তেলও নিরাপদ নয়
মশার তেলের মূল উপাদান হল ট্রান্সফলুথরিন। যা স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে ও রক্তের শ্বেত এবং লাল কণিকার সমস্যা ডেকে আনে। যা নিরাময়ে উপযোগী ওষুধ বা ডোজ বেরোয়নি।
ক্ষতির স্প্রে
বাজারে প্রচলিত মশা তাড়ানোর স্প্রেতে থাকে ট্রান্সএলেথ্রিন, যেটা সিওপিডি এবং লিভারের সমস্যা ঘটাতে পারে। ২০১০ সালে সেপ্টেম্বর মাসে গুরগাওঁতে এক ইঞ্জিনিয়ার এই স্প্রে অত্যধিক ব্যবহার করে ঘর বন্ধ করে শুয়ে পড়েন। এই বিষাক্ত স্প্রেতে থাকার ফলে তাঁর মৃত্যু হয়। কাজেই সাবধান।
[আরও পড়ুন: অজান্তেই নিয়মিত শরীরে ঢুকছে প্লাস্টিক, জানেন কী বিপদ অপেক্ষা করছে আপনার জন্য?]
উপকারী উপায়ে মশা বধ
• সূর্যাস্তের আগে থেকেই দরজা জানলা বন্ধ করে রাখুন। পুরোপুরি অন্ধকার হওয়ার পর দরজা জানলা খুলে দিন। জানলায় জাল/নেট লাগিয়ে রাখুন। তাহলে জানলা খোলা থাকলে মশা প্রবেশ করতে পারবে না। প্রয়োজনে দরজাতেও এই জাল লাগিয়ে রাখতে পারেন। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত দরজা থাকলে ভাল। মেন দরজা খুলে এই জাল দেওয়া দরজা বন্ধ রাখলে হাওয়াও আসবে, মশা প্রবেশও রোধ হবে।
• সিট্রোনেলা অয়েল যা সাইট্রোনেলা গাছের নির্যাস থেকে তৈরি। এটা ঘরে, গায়ে কিংবা জামা কাপড়ে লাগিয়ে রাখলে মশা আসে না।
• সন্ধেবেলা ঘরে ধুনোর ধোঁয়া দিন, নারকেল ছোবড়া আর ধুনো মিশিয়ে জ্বালালে তা শরীরের ক্ষতি করে না আর মশাও তাড়ায়।
• বাড়িতে লেমনগ্রাস বা সিট্রোনেলা, পুদিনা এবং ল্যাভেন্ডার গাছ লাগান। যা মশা আসতে দেয় না।
• ভেপারাইজার মেশিনে নারকেল তেল, নিমতেল, ইউক্যালিপ্টাস তেল, সিট্রোনেলা তেল, লবঙ্গের তেল মিশিয়ে সেটা জ্বালালে উপকার। মেশিনের উপরে যে ছিদ্র তাতে কর্পূর রেখে দিন, মশা দূরে পালাবে।
• লেবু চার টুকরো করে তাতে কয়েকটা লবঙ্গ আটকে ঘরের কোণেতে ৪-৫ জায়গায় রেখে দিন।
• সিট্রোনেলা তেল, নিমতেল, লবঙ্গের তেল, ইউক্যালিপ্টাস তেল, সর্ষের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখুন এটাও মশা তাড়াতে ভাল কাজ দেয়।
• মশা মারার ইলেকট্রিক ব্যাট দিয়ে মশা মারুন।
• রাতে মশারি টানিয়ে ঘুমান। এরচেয়ে সহজ ও নিরাপদ আর কিছুই নয়।
• নারকেল বা সরষের তেলের সঙ্গে ৫ শতাংশ নিমতেল মিশিয়ে গায়ে মাখলে মশার কামড় থেকে বাঁচা সম্ভব
• সিট্রোনেলা গাছের শুকনো পাতা পোড়ালেও মশা দূর হয়।
• এলাকার ওয়ার্ড কিংবা পঞ্চায়েত দপ্তর এমনিতেই তৎপর মশা মারতে। প্রয়োজনে দরখাস্ত করে আরও বেশি স্প্রে করার ব্যবস্থা জরুরি। এটাও কার্যকর।
The post মশা তাড়াতে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনছেন না তো? এখনই সাবধান হোন appeared first on Sangbad Pratidin.