নিজের আয়ের বাড়তি অর্থকে কাজে লাগান বুদ্ধি করে। বিনিয়োগ করুন এমন অ্যাসেটে, যার লাভ আপনি ঘরে তুলতে পারবেন নিজের প্রয়োজনে। সাহায্য নিতে পারেন পেশাদার বিশেষজ্ঞদের। জানাচ্ছেন কৃষ্ণেন্দু বসু
নিম্ন তথা মধ্যবিত্ত মানুষদের জন্য যে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ একান্তভাবে জরুরি, যে কথা আর দু’বার বলতে হয় না। সাধারণ খেটে উপার্জন করা মানুষ চিরকালই সঞ্চয়ী এবং সাশ্রয়ী, তাই তাঁরা আমার বক্তব্যের সঙ্গে সহমত হবেন, আশা করি। ভারতবর্ষের আমজনতা টাকা বাঁচিয়ে সম্পদ গঠনের চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেন না। আজ এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমার এতদিনের অভিজ্ঞতা আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। শুরু করছি, সঞ্চয় কোন অ্যাসেট ক্লাসের মাধ্যমে সবথেকে ভাল করে করা হয়?-এই প্রশ্নের উত্তর বিশ্লেষণ করে। যে কোনও ইনভেস্টর, তাঁর যাত্রার শুরুতে এই প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজেন, তাই না?
দেখুন, প্রধানত ইকুইটি আর ডেটের কথাই বলি। দুইয়ের ক্ষেত্রেই রিস্ক, তবে ঝুঁকির ধ্যানধারণা ভিন্ন প্রকৃতির। ইকুইটি সত্যিই অনিশ্চিত, সেখানে ওঠাপড়াই নিয়ম। তাই স্টক মার্কেটে লগ্নি চালাতে হলে সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে, চোখের আড়ালে রাখার পক্ষপাতী নই আমি। দীর্ঘমেয়াদী ইনভেস্টরকেও সতর্ক থাকতে হয়। অনেকে ভাবেন ডেট তো চিরকালীন, সেখানে রিস্ক তো ইকুইটির তুলনায় কম, আমি অনর্থক চিন্তা তা নিয়ে কেন করব? এই ধারণা যে আংশিকভাবে সত্যি, তা অস্বীকার করছি না। তবে ডেট মার্কেটে ইন্টারেস্ট রেট সম্পর্কিত রিস্ক আছে। একই সঙ্গে আছে ক্রেডিট রিস্কও। আরও একটা কথা-ডেট মার্কেটে অনেক জটিল শর্ত থাকতে পারে, সাধারণ মানুষের পক্ষে সেইসব শক্ত নিয়মনীতি চট করে বোঝা সম্ভব না-ও হতে পারে। তাই এখানেও সাবধানে বিচরণ করাই কাম্য।
এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে মনে হয় রেট আর কমবে না, এখনকার মতো ‘স্টেবল’ থাকবে। আর তাই যদি হয়, সাধারণ মানুষ তো উচ্চ হারে ডিপোজিট রেটের সুবিধা নিতে চাইবেনই। নির্দিষ্ট হারে টাকা বাড়বে, তাতে অন্তত কিছু সঞ্চয়ী মানুষ সোয়াস্তি পাবেন। মুদ্রাস্ফীতি ইদানীং কমলেও, সমস্ত ধরনের পণ্যের সার্বিক দাম বাড়া নিয়ে তাঁরা সকলেই চিন্তিত রয়েছেন। আর এই প্রসঙ্গের রেশ ধরেই একটি সম্ভাব্য স্ট্র্যাটেজির কথা বলছি।
ধরুন আপনি নিজের উদ্বৃত্তের একটি বড় মাপের অংশ উচ্চ হার সম্পন্ন ডিপোজিট প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছেন। এও ধরা যাক, সেই ইন্টারেস্ট সম্বল করে সংসারযাত্রা নির্বাহ করছেন, আর তার পরেও কিছু টাকা আপনার হাতে পড়ে থাকছে। এমন তো হয়েই থাকে আমাদের চারপাশে। এই যে ‘সারপ্লাস’ তথা বাড়তি টাকা আপনার হাতে জমছে, সেই টাকা আপনি নিয়মিতভাবে স্টক মার্কেটে লগ্নি করতে পারেন। তা যদি বেশ কয়েক বছর ধরে করেন, তাহলে কালক্রমে আপনার শেয়ার মার্কেটে ইনভেস্টমেন্টের পরিমাণ বেশ ভালই হবে, এমন আশা করা যায়।
তবে হ্যাঁ, লগ্নি করতে হবে ভাল স্টকে, আর যখন সেগুলির দাম কম থাকবে বিশেষ করে, তখন। দেখবেন আপনার ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে বাছাই করা কিছু স্টক চলে এসেছে, একটি সুন্দর পোর্টফোলিও তৈরি হয়েছে। যদি নিজে সরাসরি তা না করেন, তিন চারটে ইকুইটি ফান্ডের মাধ্যমে করুন না! উদ্দেশ্য তো একই-ভাল কর্পাস তৈরি, সম্পদ সৃষ্টি।
আমার বক্তব্য পরিষ্কার। ডেট এবং ইকুইটি, দুই-ই কৌশলী উপায়ে কাজে লাগান। ‘বেস্ট অফ বোথ ওয়াল্ডর্স’ বলে একটি কথা আমরা প্রায়শই বলে থাকি। কেবল একটির উপর নির্ভর করবেন কেন? যখন দু’টি নিয়ে আপনার কৌশল আরও কার্যকরী করে তুলতে পারেন? ভেবে দেখুন।
(‘সঞ্চয়’-এর জন্য প্রথম বার কলম ধরলাম। পেশাদার লেখক আমি নই, তবে লিখে আনন্দ পেলাম। নিজের মনের কথা ‘সঞ্চয়’-এর একনিষ্ঠ পাঠকদের সঙ্গে ভাগ করতে পেরে ভাল লাগছে।লেখক লগ্নি বিশেষজ্ঞ)