চোখে জল! চোখ লঙ্কার মতো লাল! চোখের এমন হাল হলে শত রগড়েও চুলকানি কমে না। এমন হলে এক মুহূর্তের জন্যও অবহেলা করলে ক্ষীণ হতে পারে দৃষ্টিশক্তি। সতর্ক করলেন সুশ্রুত আই হসপিটালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ড. জন সরকার। লিখছেন সোমা মজুমদার।
উফ এ কী জ্বালা! প্রায়ই চোখ চুলকাতে চুলকাতে নাজেহাল অবস্থা হয়। হঠাৎই এমন চোখ লাল হয়ে যায় বা এমন জল পড়ে যেন মনে হয় কাঁদছে। আনেকেই আছেন যাঁরা এই ধরনের সমস্যার খুব একটা তোয়াক্কা করেন না! খুব বেশি হলে দোকান থেকে একটা চোখের ড্রপ কিনে সমস্যা মেটাতে চেষ্টা করেন। এতে বিপদ আরও বাড়তে পারে। চোখ বলে কথা! উপেক্ষা না করে সতর্ক হোন। কারণ প্রাথমিকভাবে চোখ চুলকালেও তার প্রকৃত কারণ হল চোখের ভিতরের কোনও সমস্যা। তাই সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করে আপনি নিজেই নিজের অজান্তে চোখের কোনও মারাত্মক রোগ ডেকে আনতে পারেন। যা থেকে সম্পূর্ণরূপে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যেতে পারে।
কেন হয়?
আপাতদৃষ্টিতে চোখ চুলকানোর সমস্যা খুবই সামান্য বলে মনে হতে পারে। সচেতনার অভাবে অনেকেই খুব একটা পাত্তা দেন না। কিন্তু ডাক্তারি মতে, চোখ চুলকানোকে কোনও রোগ না বলে চোখের মধ্যে চলতে থাকা বিভিন্ন অক্যুলার সারফেস রোগের উপসর্গ বলা হয়। সাধারণত চোখের যে সমস্যাগুলির কারণে চোখ চুলকায় সেগুলি হল অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস, অ্যাটোপিক কনজাংটিভাইটিস, ভার্নাল কেরাটো কনজাংটিভাইটিস, মেইবোমিয়ান গ্ল্যান্ড ডিসফাংশন, জায়েন্ট প্যাপিলারি কনজাংটিভাইটিস, ড্রাই আই সিনড্রোম। তাই দীর্ঘদিন ধরে চোখ চুলকানোর সমস্যা হলে অবশ্যই চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
[ধন্বন্তরি মিউজিক, জেনে নিন কোন কোন রোগের ওষুধ সুর]
কীভাবে নির্দিষ্ট রোগ চিহ্নিত করা হয়?
চোখ চুলকানোর সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে প্রাথমিকভাবে রোগীকে কিছু প্রশ্ন করা হয়। অর্থাৎ কতদিন ধরে চোখ চুলকাচ্ছে কিংবা চোখ চুলকানোর পাশাপাশি আর কোনও সমস্যা আছে কি না ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তরের ভিত্তিতে কোন নির্দিষ্ট রোগের জন্য চোখ চুলকাচ্ছে তা শনাক্ত করা হয়। যদি রোগীর সারা বছরই চোখ চুলকায় তাহলে তার অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস রয়েছে। বাতাসের বিষাক্ত ধূলিকণা, কোনও নির্দিষ্ট গন্ধ, কোনও খাবার ইত্যাদি থেকে অ্যালার্জিক অথবা অ্যাটোপিক কনজাংটিভাইটিস হয়। আবার রোগীর অ্যাজমা, একজিমা, সাইনুসাইটিস থাকলেও অ্যালার্জি বা অ্যাটোপিক কনজাংটিভাইটিস হতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগীকে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞেরও মতামত নেওয়া জরুরি। যদি চোখ চুলকানোর পাশাপাশি চোখ জ্বালা করে, চোখ দিয়ে জল পড়ে, চোখে কিছু ঢুকেছে বলে অনুভব হয় তাহলে রোগীর মেইবোমিয়ান গ্ল্যান্ড ডিসফাংশন কিংবা ড্রাই আই সিনড্রোম হয়েছে বলে ধরা হয়। আবার যদি রোগী নিয়মিত কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে লেন্স ঠিকমতো চোখে না বসলে, টানা ৮-১০ ঘণ্টার বেশি লেন্স পরলে কিংবা ঠিকমতো স্বাস্থ্যবিধি না মানলে চোখ চুলকাতে পারে। অনেক সময় কোনও নতুন প্রসাধনী, এমনকী চোখের কোনও ড্রপ ব্যবহার করার জন্যও চোখ চুলকালে পারে। সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে রোগীর ব্লিফারো কনজাংটিভাইটিস হয়েছে। ঋতু পরিবর্তনের সময় অনেকেরই অ্যালার্জির কারণে চোখ চুলকানোর সমস্যা হয়, যাকে ভার্নাল কেরাটো কনজাংটিভাইটিস বলে। বয়ঃসন্ধিকালে অনেক সময় সঠিক পাওয়ারের চশমা ব্যবহার না করার জন্য কিশোর-কিশোরীদের চোখ চুলকায়।
কখন সতর্ক হবেন
যদি আপনার অনেকক্ষণ মোবাইল কিংবা কম্পিউটারে কাজ করার জন্য চোখ চুলকায় তাহলে বুঝতে হবে দীর্ঘক্ষণ চোখের পলক না ফেলার জন্যই অস্বস্তি হচ্ছে। কিন্তু যদি চোখ চুলকানোর জন্য দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটছে তবে অবশ্যই সতর্ক হোন। এতে চোখের ভিতরে কোনও সমস্যা হলে তার বিশেষ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন চোখ বা চোখের পাতা ফুলতে থাকে, চোখের পাতা ঝরে যায় ও আঁশের মতো চামড়া উঠতে থাকে, চোখ লাল হয়ে যায়, চোখ দিয়ে জল পড়ে। তাই কয়েকদিনের মধ্যে এই ধরনের সমস্যা না কমলে অবশ্যই চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
কী করবেন না
১. চোখ চুলকালে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনও আই ড্রপ ব্যবহার করবেন না।
২. পরিচিত কারও চোখের কোনও সমস্যায় ডাক্তারের সুপারিশ করা স্টেরয়েড গোত্রীয় আই ড্রপ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজের ক্ষেত্রে পুনরায় ব্যবহার করবেন না।
৩. কোনওরকম অস্বস্তি হলে সরাসরি চোখে জলের ঝাপটা দেবেন না। বরং যদি চোখ খুব চুলকায়, শুকনো লাগে, জ্বালা করে তাহলে চটজলদি আরাম পেতে ঠান্ডা জলে পরিষ্কার রুমাল ভিজিয়ে তা চোখ বন্ধ করে দিন।
৪. একনাগাড়ে অনেকক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করতে হলে আধ ঘণ্টা অন্তর বিরতি নেওয়ার চেষ্টা করুন।
[সপ্তাহান্তে বাড়তি নিদ্রায় সমাধান নেই, বলছে সাম্প্রতিক রিপোর্ট]
রিস্ক ফ্যাক্টর
চোখ চুলকাতে বারবার হাত দিয়ে চোখ রগড়ানোর ফলে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যা ধীরে ধীরে রোগীর দৃষ্টিশক্তির উপর প্রভাব ফেলে এবং বাড়াবাড়ি অবস্থায় কর্নিয়ার আলসার হতে পারে। যা থেকে পরবর্তীকালে রোগীর স্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন ভার্নাল কেরাটো কনজাংটিভাইটিস খুব গুরুতর হলে রোগীর চোখের মণির মধ্যে আলসার দেখা দেয়। এক্ষেত্রে সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না হলে রোগী পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন। যাদের অত্যন্ত ড্রাই আই থাকে তাদের কর্নিয়ার চামড়া রুক্ষ হয়ে যায় এবং ঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে এতটাই মারাত্মক আকার ধারণ করে যে, কর্নিয়ার মধ্যে ক্ষত হয়ে স্থায়ীভাবে রোগীর দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যায়।
চিকিৎসা
প্রাথমিকভাবে চোখ চুলকানো বন্ধ করতে অ্যান্টি অ্যালার্জিক বা লুব্রিকেটিক আইড্রপ দেওয়া হয়। ক্রণিক অ্যালার্জিক রোগীদের ইমিউনো মডিউলেটর আইড্রপ দেওয়া হয় যা স্টেরয়েড আইড্রপের মতো কাজ করে তবে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তারপর যে নির্দিষ্ট রোগের জন্য চোখ চুলকানোর সমস্যা হচ্ছে তা নির্ধারণ করতে প্রয়োজনীয় টেস্ট করা হয়।
পরামর্শের জন্য ফোন করতে পারেন:
০৩৩ ৪০৫০৬৫০০
The post চোখ চুলকে লাল? নিরাময়ের উপায় বাতলালেন বিশেষজ্ঞ appeared first on Sangbad Pratidin.