লালটিব্বায় হিমালয় দর্শন৷ নির্জন হিলস্টেশন আধুনিক হলেও সাহেবিয়ানার ছাপ রয়েছে আজও। আজ ভ্রমণ আড্ডায় থাকল মুসৌরির কথা। লিখছেন প্রসূন চক্রবর্তী৷
নির্জন নিরালা পাহাড়ভূমি। নির্জন হলেও মোটামুটি আধুনিক হিলস্টেশন। সাহেবি আমলে গড়ে উঠেছিল বলে সে ছাপ আজও রয়েছে। নানারকম বিনোদনের ব্যবস্থাও আকর্ষণীয়। ঝকমকে ম্যাল, সুন্দর রোপওয়ে, গানহিলের মাথায় চড়া কিংবা মিউনিসিপ্যাল গার্ডেনের থেকে বোটিং-এর ব্যবস্থা প্রভৃতি সব কিছুই মজাদার। কেমটি ফলসের অতলস্পর্শী সিঁড়ি ভেঙে নিচে নেমে প্রপাতের জলে স্নান করে দিন কাটানোর আনন্দই আলাদা। কেমটি ফলসের সৌন্দর্য অপরূপ। দূরদূরান্ত থেকে বহু লোক এখানে আসে। মুসৌরির অন্যতম আকর্ষণ লালটিব্বা। পায়ে হেঁটে কিংবা ঘোড়ায় চড়ে লালটিব্বার উপরে এসে দর্শনলাভ হবে হিমালয়ের অপার সৌন্দর্য। এখানকার সূর্যাস্ত দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। এদিকে এলে জঙ্গলের ভিতর ঝারিপানি ফলসটিকে দেখে নেওয়া যায়।
[বছর শেষে পাড়ি দিন ‘অন্য গ্রিসে’]
ঝকঝকে পাহাড়ি শহর মুসৌরিতে আছে নানা দ্রষ্টব্য। গান্ধীচকের দিকে পথের মাঝামাঝি রোপওয়ে। পাহাড়ি শহরটিতে রোপওয়ে চেপে ওঠা এক অন্যরকম ভাললাগার কথা বলবে। রোপওয়ে থেকে উত্তরদিকে চোখ রাখলে, সবুজ ঘেরা পাহাড়ের মাথা তুষারাবৃত। কখনও মেঘে ঢেকে যায় নিমেষে, আবার মেঘ সরে গেলে তুষারাবৃত পাহাড়ের মাথায় রোদের কারিকুরি। ভাললাগার নেশা পেয়ে যাবে। দক্ষিণ দিকে বহু নিচে দুন উপত্যকা। গানহিলের পূর্বদিকে কুলরি বাজার। পশ্চিমে লাইব্রেরি বাজার। একদিকে ব্যস্ত ম্যালরোড। অপরদিকে নির্জন কামেলস ব্যাক। দুর্গামন্দিরের পাশ দিয়ে কিছুটা গিয়ে আকাশের দিকে তাকালে, অবিকল একটা উটের পিঠের আকার নিয়ে পাহাড়। ক্যামেলস, ব্যাক রোড ধরে নিরিবিলি পথ। দু’পাশে পাইন। একপাশে ব্রিটিশ যুগের কিছু বাংলো। অন্য পথে দূরে সোনায় সোহাগা নানা পাহাড়ের তুষারশৃঙ্গ।
গান্ধীচক হয়ে আরও এগিয়ে চলা মিউনিসিপ্যাল গার্ডেনের দিকে। চড়ুইভাতির মনোরম পরিবেশ। চড়ুইভাতি তো আশপাশ এলাকার মজার ব্যাপার। অনেকদূর থেকে এলে ভাবনাটা অন্যরকম হয়। এখানে সাজানো বাগানের মধ্যে একটা ছোট্ট কৃত্রিম লেক আছে। আছে বোটিং-এর ব্যবস্থাও। হাতে সময় থাকলে বেড়িয়ে পড়ুন গান্ধীচক থেকে ৮ কিমি দূরে দেরাদুনের পথে মুসৌরি লেক। প্রবেশের জন্য দক্ষিণা লাগে সামান্য। ডাইনোসর ও আদিবাসী মূর্তি এখানকার সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। লেকের জলে বোটিং করা যায়। পাহাড়ের কোলে এই লেকটি অতি মনোরম। এখানে পাশেই আছে টয়ট্রেন। দোলনা, স্লিপ ও ঢেঁকিও রয়েছে। কেমটি ফলসের পথে পড়ে সান্তরা মায়ের মন্দির। মন্দিরটি একদম পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। মন্দিরের দেওয়াল শ্বেতশুভ্র। দুই সাদা রং-এর উপর সূর্যালোক পড়লে, সে দৃশ্য বর্ণনার অতীত। মন্দিরের গঠনশৈলীও চমৎকার। মন্দির দর্শন সাঙ্গ করে নেমে ১ কিমি সংকীর্ণ পথে দেখে নিন লেক মিস্ট। ছোট গাড়ি যেতে পারে। গাড়ি নিয়ে গেলে দেখে নিতে পারবেন ধনোলটি ও সুরখণ্ডা দেবী মন্দির।
[ম্যালের পর চৌরাস্তা, পাহাড়ে বিনোদনের নয়া ঠিকানা]
যাবেন কীভাবে
কলকাতা থেকে সরাসরি হরিদ্বার বা দেরাদুন পৌঁছাবার ট্রেন দুন এক্সপ্রেস। এছাড়া আছে প্রতি মঙ্গলবারের উপাসনা এক্সপ্রেস। এছাড়া নিজেদের পছন্দমতো দিল্লি গিয়ে সেখান থেকে প্রায় ৫ ঘণ্টার বাস পথে হরিদ্বার যাওয়া যেতে পারে। কিংবা ট্রেনে সরাসরি দেরাদুন পৌঁছে যান। দুন থকে মুসৌরি।
থাকবেন কোথায়
প্রচুর থাকার জায়গা মুসৌরিতে। মুসৌরির বিভিন্ন জায়গায় হোটেলগুলি অবস্থিত। ম্যাল, গান্ধীচক, কুলরি বাজার, লাইব্রেরি বাজার, ল্যান্ডোর বাজার ও ক্যামেলস ব্যাক রোডে হোটেলগুলি মূলত সাজানো। পছন্দ অনুযায়ী হোটেলগুলি খুঁজবেন। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হোটেলের নাম দেওয়া হল। হোটেল ক্লাসিক হাইট, শিলটন হোটেল, হোটেল বিষ্ণু প্যালেস, হোটেল মনার্ক, হোটেল ইম্পিরিয়াল, হোটেল ময়ূর, হোটেল সিলভার রক, হোটেল হিল কুইন, হোটেল মিনার্ভা, হোটেল নিশিমা, হোটেল মিডলটন, ভ্যালি ভিউ হোটেল, হোটেল ব্রেন্টউড, হোটেল অমর, হোটেল অভিনন্দন।
The post পাহাড়ের কোলে নিরালার খোঁজে পাড়ি জমান লালটিব্বায় appeared first on Sangbad Pratidin.