পাড়ার কচুরির দোকান থেকে রেস্তোরাঁর মাংসের ঝোল। পার্সেল মানেই প্লাস্টিকের প্যাকেটই ভরসা। সহজলভ্য ও ব্যবহারিক সুবিধালাভে এই উপায়ে অভ্যস্ত হলে বিপদ মারাত্মক। প্লাস্টিকে উপস্থিত বিষাক্ত উপাদান গরম খাবারে মিশে শরীরের কতটা ক্ষতি করছে তা জানুন। সুমিত রায়।
ডাল, ভাত, তারকারি কিংবা মাছ-মাংসের ঝোল! সব কিছুই সহজে বহন করা যায় প্লাস্টিকের ক্যারি ব্যাগে। এদিকে প্ল্যাস্টিকের ব্যবহার কমাতে দোকানে প্লাস্টিক প্যাকেটের উপর অতিরিক্ত কর ধার্য করা হচ্ছে, কোনও কোনও রাজ্যে প্লাস্টিক পুরো ব্যানড। তবু সুযোগ পেলেই আমরা প্লাস্টিকে জিনিস বহন করার পাশাপাশি খাবার জিনিসও বহন করি। এতে একদিকে যেমন খাবার গড়িয়ে পড়ার ভয় থাকে না তেমনই খুব সস্তা ও সহজলভ্য এই প্লাস্টিক। এতো গেল ভাল কথা। চোখে দেখা না গেলেও প্লাস্টিকের ক্ষতির ভাগটা ভালর চেয়ে দ্বিগুণ। কাজেই এই ব্যাপারে ওয়াকিবহাল না হলে ক্ষতি মারাত্মক।
কেন ভয়?
প্লাস্টিক একটি বৃহৎ গঠন যা পলিমার অনুর সমন্বয়ে গঠিত। বিভিন্ন রকমের প্লাস্টিক যেমন পিভিসি, পলিপ্রোপাইলিন, পলিকার্বোনেট ইত্যাদি তৈরী হয় বিভিন্ন অনুপাতে মোনোমার অনুর সংযোজনে। কিন্তু দেখা গিয়েছে অনেক প্লাস্টিক বা পলিমার নিজেরা বিষাক্ত না হলেও সেগুলি যে মোনোমারের সংযোজনে তৈরি হয় তা খুবই বিষাক্ত হয়। প্লাস্টিক পুরনো হলে, শক্ত প্লাস্টিকের পাত্রে ঘষা লাগলে ও সস্তার প্লাস্টিক প্যাকেটে বা পাত্রে গরম খাদ্য দিলে এই বিষাক্ত মোনোমারগুলি প্লাস্টিক থেকে বেরিয়ে খাবারে মেশে। অজান্তেই সুস্বাদু খাবার বিষাক্ত হয়ে যায়। ইউরোপ এবং আমেরিকায় বিভিন্ন প্লাস্টিকে নম্বর দেওয়া থাকে। যার ভিত্তিতে বোঝা সহজ যে কোন প্লাস্টিকটা নিরাপদ। কিন্তু এদেশে সেই সুবিধা নেই, কাজেই সাবধানতাই একমাত্র অস্ত্র।
[ আরও পড়ুন: হৃদরোগের আভাস দেবে বিছানার চাদর! ব্যাপারটা কী? ]
কী মেশে খাবারে?
বিসফেনল এ (বিপিএ)- শক্ত প্লাস্টিকের পাত্রে, বিভিন্ন পাত্রে প্লাস্টিকের লাইনিং (পাতলা স্তর)-এ এই ক্ষতিকর মোনোমার থাকে। এই মোনোমার একটি কৃত্রিম ইস্ট্রোজেন হরমোন, যা শরীরে প্রবেশ করলে শরীরে উপস্থিত ইস্ট্রোজেন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। যাকে বলে হরমোন ডিসরাপ্টার। ফলে মহিলাদের স্তন ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়া বিপিএ গর্ভবতীর ভ্রূণের মস্তিষ্কের উন্নতির উপরও প্রভাব ফেলে। ২০১০ সালে একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে গর্ভবতী মহিলাদের প্রস্রাবে বিপিএ-র মাত্রা বেশি তাদের মধ্যে যারা কন্যাসন্তান প্রসব করেছেন সেই শিশুরা ৩ বছর বয়স থেকে হাইপার অ্যাকটিভিটি, দুশ্চিন্তা এবং অবসাদে আক্রান্ত।
স্টাইরিন- রেস্টোরাঁয় যে ধরনের পাত্র পার্সেলের জন্য ব্যবহার করে, পলিএস্টারের ফোমের কাপে এই ধরনের মোনোমার থাকে। এই মোনোমার আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যার মধ্যে প্রধান লক্ষণগুলি হল- মাথাব্যথা, কমজোরি, অবসন্নতা, অবসাদ, বধিরতা ও পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি ইত্যাদি। এছাড়া এই মোনোমারে কিডনি, গলার ক্যানসার এবং বন্ধ্যত্বের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। সম্প্রতি অন্ধ্রপ্রদেশের কিং জর্জ সরকারি হাসপাতালে এই তিনটি সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে প্লাস্টিকে গরম খাবার খাওয়ার অভ্যেসটাই মূল দায়ী করেন চিকিৎসকরা। এমনই তথ্য মিলেছে। কাজেই প্লাস্টিক মোটেই নিরাপদ নয়।
ফ্যালেটস- প্লাস্টিককে নরম করার জন্য এই উপাদান মেশানো হয়। এটিও হরমোন ডিসরাপ্টার। ডায়াবেটিস, হার্ট এবং লিভারের অসুখের প্রবণতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া DEHP নামক একটি ফ্যালেটসকে সম্ভব্য কর্কট রোগের কারণ হিসেবে ধরা হয়েছে। এই DEHP প্রয়োগশালার পশুদের কর্কট রোগ ঘটিয়েছে।
ডাইঅক্সিনস- প্লাস্টিকের পাত্রে বা প্যাকেটে এটা থাকে না, কিন্তু খুব গরম খাবার পড়লে যখনই প্লাস্টিকটা একটু গলতে শুরু করে তখন ডাইঅক্সিন বেরোয় এবং এটা শরীরে স্নায়ুতন্ত্র, এন্ডোক্রিন সিস্টেম বিনষ্ট করে। শরীরের রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতা কমায় ও প্রজনন তন্ত্রের ক্ষতি করে।
[ আরও পড়ুন: ‘ব্যথা’ বুঝতে কলকাতায় জার্মান তরুণী, দেবেন উপশমের পরামর্শও]
কী করণীয়
- সাধারণ প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে কখনওই খাবার নেবেন না, গরম খাবার তো একেবারেই নয়।
- চেষ্টা করুন মাইক্রোওয়েভে কাচের পাত্র ব্যবহার করতে
খাবারের জন্য কাচ বা স্টেনলেস স্টিলের পাত্র বা থালা ব্যবহার করুন। - দোকান থেকে খাবার কিনতে যাওয়ার সময় ঘর থেকে পাত্র নিয়ে গিয়ে তাতে বহন করুন।
The post গরম খাবার প্লাস্টিকে ভরছেন? হতে পারে মারাত্মক বিপদ appeared first on Sangbad Pratidin.