ভুট্টাকে তণ্ডুল ফসলের রানি বলা হয়। কারণ একক এলাকায় অন্যান্য তণ্ডুল ফসলের চেয়ে ভুট্টার গড় ফলন অনেক বেশি। ভুট্টা সারাবছরই অর্থাৎ গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত সব ঋতুতেই চাষ করা যায়। লাভজনক এই চাষ নিয়ে লিখছেন বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের(Bidhan Chandra Krishi Viswavidyalaya)সহকারী অধ্যাপক ড. শ্যামলী দাস।
বছরভর সারা ভারতে প্রায় ১০ মিলিয়ন হেক্টরের বেশি জমিতে ভূট্টা চাষ করা হয় যার
গড় ফলন মোটামুটি ২৫০০ কেজি প্রতি হেক্টরে(Hector)।বিলম্বিত বৃষ্টিতে যে সকল উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিগুলিতে ধান রোয়া আর সম্ভব নয় বা রোয়া করলে পরের ফসলের জন্য দেরি হবার সম্ভাবনা রয়েছে সেই সকল অঞ্চলে অতি সহজেই কম জলে ও কম দিনে ভুট্টা চাষ সম্ভব। ভুট্টাকে তণ্ডুল ফসলের রানী বলা হয়। কারণ একক এলাকায় অন্যান্য চেয়ে ভুট্টার গড় ফলন অনেক বেশি। ভুট্টা সারাবছরই অর্থাৎ গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত সব ঋতুতেই চাষ করা যায়।
[আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ছে দাম, রাসায়নিক সার বিক্রি নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের]
HQPM বা High Quality Protein Maize ( প্রোটিন সমৃদ্ধ ভূট্টা) জাতগুলির চাষ ক্রমশই বাড়ছে। সব মরশুমেই চাষের উপযোগী। গর্ভকালীন মাতৃত্বে, দৈনন্দিন ছাতু হিসাবে, গবাদি পশুর খাদ্য হিসাবে গরুর দুধ বাড়াতে এবং মুরগীর খাবার হিসাবে এর চাহিদা বাড়ছে। মুরগির খাবারের উপাদান হিসাবে ৬০ শতাংশের বেশি ভুট্টার দানা থাকে। সেই ক্ষেত্রে আমাদের রাজ্যে প্রতিদিন আজকের হিসাবে প্রায় ২০-২৫ লাখ মেট্রিক টন ভুট্টাদানা শুধুমাত্র পোলট্রী খাবার তৈরিতেই প্রয়োজন হয়। ভুট্টার দানার মাধ্যমে মুরগির খাবারের প্রোটিনের পরিমান বাড়াতে পারলে, মাংসেও প্রোটিনের পরিমান বাড়ে। এছাড়া শহর ও শহরতলির বাজারে বেবিকর্ন ও পপকর্ন এর খাদ্যাভ্যাস বাড়ায় । চাষীভাইদের মধ্যে এই জাতগুলির জন্য চাষের আগ্রহ বাড়ছে।
আজ আমরা সাধারণ ভুট্টা চাষ সম্বন্ধে দুই চার কথা আলোচনা করব।
• জমি, মাটি ও জমি তৈরি উঁচু ও মাঝারি জমিতে ভুট্টা ভাল হয়। তবে জলনিকাশী ব্যবস্থা যুক্ত বায়ু চলাচলে সক্ষম এমন হালকা বেলে, দোঁয়াশ এবং কাদা দোঁয়াশ মাটিতে ভুট্টা ভাল হয়। মাটিতে যথাযথ জৈব পদার্থ ও খাদ্যোপাদান থাকা বাঞ্ছনীয়। কারন ভুট্টা প্রচুর পরিমানে মাটির খাবার টেনে নেয়। সামান্য আম্লিক মাটিতে ভুট্টা চাষ ভাল হয়। মাটির অম্লতা ৬.৫ থেকে ৭.৫ হলে ভুট্টাচাষের উপযোগী।
• বোনার সময় বছরের প্রায় সকল সময়েই ভুট্টা চাষ করা যায়। খারিফ, রবি, গ্রীষ্মকালীন ফসল হিসাবে বিভিন্ন জাতের ভুট্টা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় চাষ হয়। খারিফ চাষের জন্য ১৫ জুন-১৫ জুলাই (আষাঢ়), রবি চাষের জন্য ১৫ অক্টোবর(October)- ১৫ নভেম্বর(November) ( কার্ত্তিক) এবং গ্রীষ্মে সেচের জলে চাষের জন্য ১৫ ফেব্রুয়ারী(February) – ১৫ মার্চ(March) (ফাল্গুন) মাসে ভুট্টা জমির অবস্থান ও আগের পরের ফসলের কথা ভেবে লাগানো হয়।
• বীজের হার সারিতে বুনলে ৩ কেজি/ বিঘা এবং ছিটিয়ে বুনলে ৪-৫ কেজি/ বিঘা। সাধারণত ৮০০০- ৮৫০০ গাছ প্রতি বিঘায় রাখা হয়।
• বীজ শোধন বোনার আগে প্রতি কেজি বীজের সঙ্গে ২.০ গ্রাম কার্বেডাজিম বা ম্যানকোজেব জাতীয় ওষুধ মাখিয়ে ভাল করে শোধন করে নিতে হবে।
• বোনার দূরত্ব ছিটিয়ে বুনলে ৬-৭ টি গাছ প্রতি বর্গমিটারে এবং সারিতে বুনলে সারি থেকে সারি ও গাছ থেকে গাছ ২ ফুট x ৮ ইঞ্চি – ১ ফুট দূরত্বে লাগানো হয়।
• বোনার পদ্ধতি বোনার সময় বা ছিটিয়ে লাগানোর সময় একক এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমান গাছ যাতে থাকে সেই কথা মাথায় রাখতে হবে। বেশি গাছে যেমন ভুট্টা ছোট হয় ও পুষ্ট বীজের অভাব থাকে তেমনি কম পরিমান গাছ থেকে ফলন কম পাওয়া যায়।
সাধারণত ২ ফুট x ১ ফুট দূরত্বে ২-৩ টি করে বীজ ভুরোতে/ মাদায় লাগান হয় ১ ইঞ্চি গভীরে। বীজটি ভুরোর ডান দিকে ফেলা হয়। চারা বেরোনোর পর সব থেকে সবল চারাটি রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলা হয়। ছিটিয়ে লাগান জমিতে ১০ দিন পর নিড়ান দিয়ে গাছের সংখ্যা বিঘা প্রতি ৮০০০- ৮৫০০ এর মধ্যে রাখা হয়।
• জাত নির্বাচন ভুট্টার দুই ধরনের জাতের চাষ করা হয় কম্পোজিট ও হাইব্রিড। কম্পোজিট জাতের শংসিত বীজ কিনে বপন করলে ৩-৪ বছর পর পর চাষ করা যায় । কিন্তু হাইব্রিড জাতের ক্ষেত্রে প্রতি বছর বাজার থেকে নতুন বীজ কিনে লাগাতে হয়। সাধারণত পশ্চিমবঙ্গে ভুট্টার যে জাত গুলি চাষ করা হয় তা নিচে লেখা হল
• সার প্রয়োগ সর্বদা মাটি পরীক্ষা করার পর সুপারিশ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করা উচিত। জাতীয় ফসলের মধ্যে ভুট্টা সর্বাধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ফলন দিতে পারে, সেই অনুযায়ী ভুট্টার যথোপযুক্ত খাদ্যোপাদান ও মাটিতে থাকা উচিত। উর্বর দোঁয়াশ পলিমাটিতে সর্বাধিক ফলন পাওয়া যায়। অন্যান্য জমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগে ভাল ফলন পাওয়া সম্ভব। পর্যাপ্ত পরিমানে জৈবসার প্রয়োগে গাছ ও ফলন দুইই ভাল হয়।বিঘা প্রতি মোটামুটি ১-১.৫ টন পচাসার ( অথবা পাওয়া গেলে ৬-৭ কুইন্টাল গোবরসার) বর্ষায় শেষ চাষের ১০-১৫ দিন আগে জমিতে দিলে ভাল। রাসায়নিক সার ৪০-৪৫ কেজি ইউরিয়া, ৫৫-৬০ কেজি সি. সু. ফ., ১৫ -২০ কেজি পটাশ এবং ২৫ কেজি জিঙ্ক- সালফেট মুল চাষের সময় মাটিতে দিলে ভালো। ইউরিয়া সার ৫ ভাগে দিলে যেমন ফলন বাড়ে তেমনি সারের ব্যবহার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। ৪০-৪৫ কেজি ইউরিয়া কে নিন্মলিখিত ভাবে ভাগ করা যায়-
১) মুল সার শেষ চাষের সময়- ১০-১২ কেজি
২) চার থেকে ছয় পাতা দশায় – ১০ কেজি
৩) আট পাতা দশায়- ১০-১২ কেজি
৪) পুরুষ ফুল আসার সময়- ৮ কেজি
( গাছের মাথায় ঝালর ফুল)
৫) বীজ পরিপুষ্ট হবার সময়- ২-৩ কেজি
নীচের দুটি সার প্রয়োগ সেতু- নালা (রীজ- ফারো) পদ্ধতিতে ভুট্টা লাগালে সম্ভব। অন্যথায় এই সারের পরিমান মুল সারের সাথে দেওয়া ভালো।
জলসেচ ব্যবস্থাপনা
খারিফ বা বর্ষাকালীন চাষে আলাদা করে জলসেচ দেবার প্রয়োজন থাকে না। বিশেষ ক্ষেত্রে জলনিকাশির ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন হয়। কৃষকবন্ধুরা জানেন যে ভুট্টা জমিতে দাড়িয়ে থাকা জল সহ্য করতে পারে না, হয় গাছ পচে যায় নয় ব্যাপক রোগ পোকার আক্রমনে গাছের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তেমনি আবার জমিতে জলটান থাকলেও ভুট্টা পরিপুষ্ট হয় না ফলে বাজার জাতকরনের সমস্যা থাকে।
গ্রীষ্ম ও রবি মরসুমে চাষের জন্য মোটামুটি ৬-১০ টি সেচের প্রয়োজন হয়। নিচু জমিতে জল থাকলে ৪ টি সেচেও স্বল্পমেয়াদি ভুট্টা চাষ করা যায়। ভুট্টার সবথেকে সংকটময় দশা হল চারা বেরোনোর ৪৫-৬৫ দিন অবধি। এই সময় জলটান থাকলে ভুট্টার ফলন মার খায়। জমিতে জল পরিদর্শনের সময় নিন্মলিখিত সময়গুলো বেছে নিয়ে কৃষকবন্ধুরা নিশ্চিত হতে পারেন যে জমিতে পর্যাপ্ত জল বা ভিজে ভাব রয়েছে, যেমন-
১) ভুট্টার ৬ পাতা দশা (বীজ বোনার ১৪-১৬ দিন পর)
২) গাছের হাঁটু সমান উচ্চতা (৩০-৩৫ দিন বোনার পর)
৩) ভুট্টার জমিতে ৫০% স্ত্রী ফুল এসেছে (প্রায় বীজ বোনার ৭৫-৮০ দিন পর)
৪) ভুট্টার বীজের ভিতরের রস শক্ত বা কঠিন হতে শুরু করেছে। ( বীজ বোনার ১০৫-১১০ দিন পর)
উপরের সঙ্কটকালীন দশার যেকোনও একসময় মাটিতে জলের ঘাটতি থাকলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না।
• অন্তর্বর্তী পরিচর্যা খারিফ চাষে ভুট্টার খেতে আগাছার উপদ্রব বেশি হয়। এক্ষেত্রে ৩০-৩৫ দিন পর্যন্ত জমির আগাছা নিয়ন্ত্রন করতে পারলে গাছের বৃদ্ধি আশানুরূপ হয় ও ফলন বৃদ্ধি পায়। ২০-২২ দিনের মাথায় সেচ দিয়ে নিড়ানি দিতে পারলে ভাল। ছিটিয়ে বোনার ক্ষেত্রে একটি নিড়ানি ও চারা পাতলা করার প্রয়োজন তো থাকেই। সম্ভব না হলে চাষি ভাইয়েরা চারা বেরনোর আগেই অর্থাৎ বীজ বোনার সাথে সাথেই আগাছানাশক অ্যাট্রাজিন বিঘা প্রতি ২.৫ – ৩ গ্রাম প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ লিটার জলের সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন। এতে ১০- ১৫ দিন আগাছা নিয়ন্ত্রনে থাকে।
আগাছা নিয়ন্ত্রণ
সারাবছরই বিশেষ করে বর্ষায় চাষের সময় আগাছা ভুট্টা চাষে সমস্যা সৃষ্টি করে। বর্ষাকালীন চাষে আগাছার নিয়ন্ত্রণ জরুরি, আগাছার উপস্থিতি প্রায় ৩০-৩৫ % ভুট্টার ফলন কমিয়ে দেয়।
গ্রীষ্মের শেষে মাটিতে গভীর চাষের পাশাপাশি কিছু আগাছানাশক ওষুধ স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে বীজ বোনার সাথে সাথেই অ্যাট্রাজিন (অ্যাট্র্রাট্রাফ 50 WP, জেসাপ্রিম 500 FW) ১-১.৫ কেজি প্রতি হেক্টরে অথবা অ্যালাক্লোর (ল্যাসো) ২-২.৫ কেজি প্রতি হেক্টরে বা মেটালাক্লোর ( ডুয়াল) ১.৫- ২ কেজি প্রতি হেক্টরে বা পেন্ডিমিথালিন ( স্টম্প) ১- ১.৫ কেজি প্রতি হেক্টরে প্রায় ৪০০-৬০০ লিটার জলেগুলে স্প্রে করলে ১৫-২০ দিনআগাছা নিয়ন্ত্রনে থাকে ও ভুট্টার ফলন বৃদ্ধি পায়।
বিনা বর্ষণের চাষে অনির্বাচিত আগাছানাশক যেমন গ্লাইফোসেট ১ কেজি/ হেক্টর বা প্যারাকোয়াট ০.৫ কেজি/ হেক্টর প্রায় ৫০০-৬০০ লি জলে গুলে বীজ বসানোর ১০-১৫ দিন আগে স্প্রে করলে সবরকম আগাছা দমন করা যায়।
গাছ বেরনোর পর যদি আগাছার বাড়বাড়ন্ত বেশি থাকে তবে প্যারাকোয়াট স্প্রে নজেলের সামনে হুড বা টুপি ব্যবহার করে স্প্রে করা যেতে পারে। এছাড়া অ্যাসিটাক্লোর + সেফনার / অ্যালাক্লোর + অ্যাট্রাজিন (atrazin) / মেটালাক্লোর +ট্রাইফ্লরালিন এর মিশ্রন আলাদা আলাদা ভাবে জমির সমস্যা বুঝে স্প্রে করা যেতে পারে।
• ফসল চক্র ও সাথী ফসল: বিলম্বিত বৃষ্টিতে যেখানে উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিগুলিতে ধান রোয়া আর সম্ভব হয় নি, চাষি ভাইরা অন্যান্য ফসলের পরিবর্তন না করে খারিফ ভুট্টা-আলু(Potato) /সরষে–তিল /বাদাম বা খরিফ ভুট্টা-সব্জি যেমন জলদি ফুলকপি/ বাঁধাকপি/ টমেটো- গম -সবুজ সার বা ধইঞ্চা বা মুগ শস্য পর্যায়ে নিতে পারেন।
• ফসল কাটা, ঝাড়াই ও মাড়াই: বিভিন্ন জাত অনুযায়ী ভুট্টা বিভিন্ন সময়ে পাকে। পশ্চিমবঙ্গে জমি অনুযায়ী সাধারণত জলদি জাতগুলিই চাষ করা হয়। গাছের পাতা হলুদ হতে শুরু করলে ও ভুট্টার খোসাটি শুকোতে শুরু করলে ৮০ শতাংশ ভুট্টা পেকে গেছে বলে ধরা হয়। বীজ করার জন্য ভুট্টাকে এই অবস্থায় তুলে নিতে হয় ও শুকোতে হয়। ভুট্টার ঝাড়াই করার জন্য একটি ছোট হাত যন্ত্র রয়েছে যার নাম মেইজ শেলার / ভুট্টার বীজ ছাড়ানোর যন্ত্র, ৩০/৪০ টাকা প্রতিটির দাম । এছাড়াও মোটর/ ট্র্যাক্টর চালিত বড় যন্ত্রের সাহায্যে ঘণ্টায় প্রায় ১ টন পর্যন্ত বীজ ছাড়ানো যায়। বীজ গুলোকে বাছাই করে বিভিন্ন আকার ওজন হিসাবে আলাদা করে রাখতে হয়। এছাড়াও বাজারে পোড়া ভুট্টা খাবার প্রচলন এখন খুব বেড়েছে। সেক্ষেত্রে ভুট্টাকে কচি অবস্থায় কেটে বিক্রি করতে পারলে বেশি লাভ পাওয়া যায়।
[আরও পড়ুন: গ্রীষ্মকালে পোকার হানা, জেনে নিন কীভাবে ধ্বংস হবে ডালের কীটশত্রু]
• লাভ- ক্ষতি: ১ বিঘা ভুট্টা চাষে মুনীষ/ মজুর খরচ ধরে মোট ৮০০০-৯০০০ টাকা খরচ করলে ২৪০০০-২৬০০০ টাকা আস্ত ভুট্টা বিক্রি করে পাওয়া যায় এবং দানা হিসাবে বিক্রি করলে ৪০০ কেজি ভুট্টার দাম ৩৫ টাকা প্রতি কেজি হিসাবে প্রায় ১৪০০০ টাকা পাওয়া যায় মোটামুটি বিঘা প্রতি ৫০০০-৬০০০ টাকা খরচা করে। এছাড়াও ভুট্টার কাণ্ডটিকে গোবর মেখে রোদে শুকিয়ে অতি উৎকৃষ্ট মানের বছরভর জ্বালানি করা হয় যার চলতি বাজার দর কমপক্ষে ৬০০০-৭০০০ টাকা। ভুট্টার কাণ্ডটিকে কুমড়ো বা লাউ এর লতার মাচা হিসাবে ব্যবহার করলে বিঘা প্রতি প্রায় ২০০০-২৫০০ টাকা সাশ্রয় হয়।
• ভুট্টা, পোলট্রি খাবারের উত্তম উপাদান।
হরিয়ানার পরেই পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুরগির মাংস উৎপাদক রাজ্য, বছরে প্রায় ৩২৮০০০ মেট্রিক টন মাংস গড় উৎপাদন করে এই রাজ্য। অর্থাৎ সেই পরিমান মুরগির খাবার তৈরি করার জন্য পাশ্ববর্তী রাজ্য বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে প্রচুর পরিমান ভুট্টা বীজের আমদানি করতে হয় পশ্চিমবঙ্গকে। মুরগির খাবারের প্রায় ৬০ শতাংশই ভুট্টার দানা থাকে।
২০১৯ সালেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার ভুট্টাচাষ বাড়ানোর জন্য চাষিদের উৎসাহ দেন। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হয়, প্রয়োজন আরো বেশি পরিমান। দু বছরে ৩৩% উৎপাদন বাড়িয়ে ২০ লাখ মেট্রিক টন ভুট্টার দানা তৈরি ও পোলট্রি ফিড বা মুরগির খাবার তৈরিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবার লক্ষ্যে সরকার চাষিদের উৎসাহ প্রদান করেন। ভুট্টা চাষের এলাকা বৃদ্ধির সাথে সাথে একর প্রতি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে ও চাষিদের উৎসাহ প্রদান করা হয়। মুরগী পালনের মোট খরচের দুই- তৃতীয়াংশ ব্যয় হয় খাবার খরচে এবং খাবারের মধ্যে ৬০% ভুট্টার দানা শক্তিবর্ধক উপাদান হওয়ায়, মুরগীর খাবার খরচ কমাতে রাজ্যে ভুট্টার দানা উৎপাদনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। দেশে পশ্চিমবঙ্গ দ্বিতীয় বৃহত্তম মুরগীর মাংস উৎপাদক রাজ্য । ২০২৫ সাল নাগাদ সারা ভারতে ১১২ মিলিয়ন টন ভুট্টাদানার প্রয়োজন যার প্রায় ২৫% উৎপাদন আমাদের রাজ্য থেকে আশা করা হচ্ছে । সুতরাং কৃষকবন্ধরা ভুট্টাচাষের এলাকা ও একক পরিমান জমিতে উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে কৃষক গোষ্ঠীর মাধ্যমে মুরগীর খাবার তৈরিতে উৎসাহিত হলে ভুট্টাচাষে আয় বাড়ানো সম্ভব।