শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: হানি ট্র্যাপে ধরা পড়ল শতাধিক ভল্লুক! গত তিন সপ্তাহ ধরে ভল্লুকের সংখ্যা জানতে সমীক্ষা চালায় বন দপ্তর। সেই সমীক্ষায় উঠে আসা বিভিন্ন তথ্য ও নমুনা যাচাই করে বেশ ভাল সংখ্যায় ভল্লুকের উপস্থিতির আন্দাজ করছেন উত্তরবঙ্গের বন ও বন্যপ্রানী বিভাগের কর্তারা। প্রকৃত সংখ্যা জানতে সংগ্রহ করা নমুনা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য হায়দরাবাদে পাঠানো হচ্ছে বলে উত্তরবঙ্গ বন্যপ্রানী বিভাগের প্রধান বনপাল রাজেন্দ্র জাখর জানিয়েছেন।
উত্তরবঙ্গের পাহাড় এবং জঙ্গল এলাকায় মূলত হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার প্রজাতির ভল্লুকের দেখা মেলে। যা কালো ভল্লুক নামে পরিচিত। গত এক বছর ধরে পাহাড় সংলগ্ন গ্রাম এবং সমতলে ভল্লুকের উপস্থিতি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় বন দপ্তরের। এতদিন কোন জঙ্গলে কতো সংখ্যায় ভল্লুক রয়েছে তার কোনও তথ্য ছিলো না বন দপ্তরের হাতে। তার উপর আচকা আগমনের কারণ কী তা বুঝতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল বন কর্তাদের। উত্তরবঙ্গ বন্য প্রাণী বিভাগের প্রধান বনপাল রাজেন্দ্র জাখর জানান, গত বছর নভেম্বর মাসে প্রথম সমতলে ভল্লুকের উপস্থিতি নজরে আসে। ভল্লুকের হামলায় একজনের মৃত্যু হয়। আবার জনরোষে প্রান হারায় একটি ভল্লুক। পাশাপাশি জঙ্গল সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা থেকে তেরোটি ভল্লুক কে উদ্ধার করেন তারা। এই বছর ও নভেম্বর মাসে বক্সা, জলদাপাড়া, গরুমারার জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় ভল্লুকের উপস্থিতি নজরে আসে। উদ্ধার হয়েছে আটটি ভল্লুক।
[আরও পড়ুন: রাজ্য পুলিশের আরজি খারিজ, খুনের চেষ্টার মামলায় জামিন পেলেন অনুব্রত মণ্ডল]
মূলত সমতল থেকে দশ হাজার ফিট উঁচু পাহাড়ি জঙ্গল এলাকাই ভল্লুকের পছন্দের বাসস্থান। বক্সার পাহাড়ি জঙ্গল এলাকা, গরুমারার নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যান। দার্জিলিং পাহাড়ের সিঞ্চুলার জঙ্গলে বেশ ভাল সংখ্যায় ভল্লুক রয়েছে বলে অনুমান বন দপ্তরের। বনপাল রাজেন্দ্র জাখর জানান, নিজস্ব বাসস্থান ছেড়ে বারবার কেনও ইন্ডিয়ান ব্ল্যাক বিয়ার প্রজাতির এই ভল্লুক সমতলে নেমে আসছে তার কারণ খুঁজতে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পাহাড়ি এই জঙ্গলগুলোয় কত সংখ্যায় ভল্লুক রয়েছে তা জানতে সমীক্ষা চালান তারা। ডিসেম্বরের তিন তারিখ থেকে শুরু হয়ে একুশ দিন ধরে এই সমীক্ষা চলে। মূলত পরোক্ষ পদ্ধতিতে সমীক্ষা চালায় বন দপ্তর। ভল্লুকের সংখ্যা জানতে হেয়ার কোরাল পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যে সকল এলাকায় ভল্লুকের যাতায়াত রয়েছে সেই এলাকায় হানিট্র্যাপ বসানো হয়। সেই ট্র্যাপের তিন দিকে লাগানো ছিলো সরু তার। পছন্দের খাবার মধুর লোভে ভল্লুক ট্র্যাপে পা দিলে ভল্লুকের শরীরের লোম বা চুল যাতে ট্র্যাপে আটকে যায় তার জন্যই এই ব্যবস্থা।
বনপাল রাজেন্দ্র জাখর জানান, বক্সা, জলদাপাড়া, গরুমারা, নেওড়া, সিঞ্চুলার জঙ্গল ও সংলগ্ন এলাকা ধরে দুই শতাধিক পয়েন্ট তৈরি করা হয়েছিল। যেখানে ভল্লুকের পছন্দের খাবার রাখা ছিল। গরুমারা জাতীয় উদ্যান থেকে নিয়ে নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যান পর্যন্ত ৫৭ টি পয়েন্ট তৈরি করা হয়। গত ২৪ তারিখ থেকে প্রতিটি পয়েন্ট থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তাতে এক শতাধিক ভল্লুকের চুলের নমুনা পাওয়া গিয়েছে। বনপাল রাজেন্দ্র জাখর জানান, সংগ্রহ করা নমুনা একটি ভল্লুকের, নাকি একাধিক ভল্লুকের তা ফরেনসিক পরীক্ষা করে দেখা হবে। আর তার জন্য সংগ্রহ করা ভল্লুকের চুলের নমুনা হায়দরাবাদের একটি ল্যাবরেটরিতে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠাচ্ছেন তারা। পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে ভল্লুকের সংখ্যা, মেল, ফিমেল, বয়স সবটাই জানা যাবে। আর সেই রিপোর্ট থেকে কোন জঙ্গলে কতো সংখ্যায় ভল্লুক রয়েছে তার ও একটা হিসেবে পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।