অমিতলাল সিংদেও, মানবাজার: লোকালয়ে শিকার ধরে দিব্যি ঘুরছে হায়না, বেজি। এমনকী বনরুই থেকে সোনালি শেয়ালও প্রায় নিয়মিতভাবে ধরা দিচ্ছে চোখে। তাই এই প্রথম পুরুলিয়ায় সেই সমস্ত ছোট ও মাঝারি স্তন্যপায়ীদের গণনা শুরু করল বনদপ্তর। আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার থেকে জেলার তিনটি বিভাগের ১৯টি রেঞ্জ এলাকার জঙ্গলে প্রায় ১০০টি ট্রানজিট লাইনে পায়ে হেঁটে নমুনা সংগ্রহ করছে বনদপ্তর।
কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের ডিএফও অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “হাতি ও বাঘ ছাড়া জঙ্গলে থাকা যে কোনও বন্যপ্রাণের নমুনা পাওয়া গেলে সেগুলি সংগ্রহ করা হবে। প্রত্যেকটি রেঞ্জ এলাকায় তিনদিন করে এই জিপিএস সমীক্ষা চলবে।” মূলত সংরক্ষণ প্রকল্পের ভাবনা নিয়েই রাজ্যের বিভিন্ন বনাঞ্চলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি বন্যপ্রাণের গণনা করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য বনবিভাগের বন্যপ্রাণ শাখা। সেই মোতাবেক পশ্চিম চক্রের মেদিনীপুর, কেন্দ্রীয় চক্রের বাঁকুড়াতে এই সমীক্ষা মাস খানেক আগেই করে ফেলেছে বনদপ্তর। এবার দক্ষিণ-পশ্চিম চক্রের পুরুলিয়া কংসাবতী উত্তর ও কংসাবতী দক্ষিণ বিভাগের ১৯টি রেঞ্জে এই গণনা শুরু করছে দপ্তর।
[আরও পড়ুন: ‘বেআইনি হলে আমার বাড়িও বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিন’, বিস্ফোরক বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়]
কীভাবে জঙ্গল থেকে ওই বন্যপ্রাণগুলির নমুনা সংগ্রহ করা হবে সেই বিষয়ে এক সপ্তাহ আগে পুরুলিয়ার তিনটি বিভাগের রেঞ্জার, বিট অফিসারদের নিয়ে একটি কর্মশালা করা হয়। সেখানে হাতে কলমে সেই সমস্ত পদ্ধতি বুঝিয়ে দেন বন্যপ্রাণ সম্পর্কে অভিজ্ঞ দুর্গাপুর গভর্নমেন্ট কলেজের এক প্রফেসর। বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত পুরুলিয়ার এই বনাঞ্চলে চিতা,ভল্লুক, হায়না, নেকড়ে, চিতল, কাকর হরিণ, ভাম, শেয়াল, সজারু,বনরুই, বেজি, বন বিড়াল থেকে খরগোশ দেখতে পাওয়া যায়। তবে ঠিক কোন জঙ্গলে কত পরিমাণে ওই বন্যপ্রাণ রয়েছে তার কোনও তথ্য নেই দপ্তরের কাছে। কারণ অতীতে এই সমস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি বন্যপ্রাণের কোনও গণনা হয়নি। জেলার এই সমীক্ষা আজ বুধবার থেকে টানা তিনদিন ধরে চলবে কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের ৬টি রেঞ্জ এলাকায়। তারপর পুরুলিয়া ডিভিশনের ৮ রেঞ্জ। সর্বশেষ কংসাবতী উত্তর বনবিভাগের ৫ রেঞ্জে এই নমুনা সংগ্রহের কাজ চলবে।
দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনটি ধাপে এই সমীক্ষা হচ্ছে। প্রথমত হিট ম্যাপ। অর্থাৎ যে সমস্ত জঙ্গল থেকে অতীতে বন্যপ্রাণের পায়ের ছাপ দেখা গিয়েছে অথবা উদ্ধার হয়েছে কিংবা বনকর্মীদের চোখে পড়েছে। এই ম্যাপ তৈরির পর প্রত্যেকটি রেঞ্জের বিট এলাকায় আড়াই থেকে ৩ কিমি করে তিন থেকে চারটি করে পথ চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে সকাল সাড়ে ৬ টা থেকে দুঘণ্টা স্থানীয় যৌথ বন পরিচালন সমিতির সদস্যদের নিয়ে চার জন বনকর্মীর একটি দল এই কাজ করবে। প্রত্যেক দলের হতে থাকবে জিপিএস ডিভাইস, মোবাইল অথবা ক্যামেরা, গ্লাভস, ফিতে, প্লাস্টার অফ প্যারিস। জঙ্গলে পায়ে হেঁটে এই দলের সদস্যরা বন্যপ্রাণের পায়ের ছাপ, গাছের গায়ে নখের আঁচড়ের ছবি তুলবে। মল, মূত্র, লোম পড়ে থাকলে তা সংগ্রহ করে প্যাকেট বন্দি করবে। তবে সব ক্ষেত্রেই সেই সমস্ত স্থানের জিপিএস লোকেশন কাগজে উল্লেখ করতে হবে। এই সমীক্ষা থেকে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে তৃতীয় পর্যায়ে সেই সমস্ত স্থানে ক্যামেরা ট্র্যাপ বসানো হবে। তবে জঙ্গলে হাতি উপস্থিত থাকলে সেই সমস্ত জায়গাকে এড়িয়ে যেতে সমীক্ষার সদস্যদের নিষেধ করেছে জেলা বন দফতরের আধিকারিকরা।