সংবাদ প্রতিদিন ডিডিটাল ডেস্ক: ‘আদিবাসী রাষ্ট্রপতি’ প্রসঙ্গে অবমাননাকর মন্তব্য করে বিপাকে পড়লেন ইন্ডিয়া টুডে (India Today) কলকাতার সেলস বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায় (Indranit Chatterjee)। গতকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেন ইন্দ্রনীল। সেখানে লেখেন, “আমি একজন গর্বিত পুরনোপন্থী। আমি যেমন সমকামী বিবাহ সমর্থন করি না, তেমনই অদিবাসী রাষ্ট্রপতি মানতে পারছি না।” ইন্দ্রনীলের এই মন্তব্যের পরেই তাঁকে ছাঁটাই করে ইন্ডিয়া টুডে গ্রুপ। সংস্থার তরফে বলা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় অশালীন মন্তব্যের কারণে কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দ্রৌপদী মুর্মুর (Droupadi Murmu) মধ্যে দিয়ে দেশ প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি পেয়েছে। এনডিএ প্রার্থী হলেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে থেকেই দ্রৌপদীকে নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে একাধিক সামাজিক সংগঠন, বহু মানুষ। জাতপাতের গোড়ামির দেশে রাইসিনা হিলসে আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধির পা দেওয়া সামাজিক অগ্রগমণ, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। যদিও এই বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন বিতর্কিত মন্তব্য করে খবরে আসা সংবাদমাধ্যম কর্মী ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়।
[আরও পড়ুন: ভরা বাজারে নমাজ পাঠ, হরিদ্বারে গ্রেপ্তার ৮]
ইন্দ্রনীলের সাফ কথা, সব মানুষকে সব পদে মানায় না। তিনি লেখেন, “কিছু পদ রয়েছে, যা বিশেষ ভাবে গৌরবের, ‘সকলের’ জন্য হতে পারে না। আমরা কি একজন সাফাইকর্মীকে দুর্গোপুজো করার অনুমতি দিতে পারি? একজন হিন্দু কি মাদ্রাসায় পড়াশোনো করবেন? এই ঘটনা আসলে শাসক দলের পাতি আর্থ-সামাজিক গিমিক। যাতে করে বিরোধী দলকে মধ্যমা দেখিয়ে ইচ্ছে মতো আইন পাশ করিয়ে নেওয়া যায়।”
এখানেই না থেমে ইন্দ্রনীলের আরও দাবি, দ্রৌপদী মুর্মুর রাষ্ট্রপতি হওয়া আসলে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিদের অপমান। অপমান করা হয়েছে এপিজে আবদুল কালাম, প্রণব মুখোপাধ্যায়, এস রাধাকৃষ্ণণ, জাকির হুসেন ড. শংকর দয়াল শর্মা, রাজেন্দ্র প্রসাদ-সহ অন্যদের। “বাবা ইন্দ্রর জাতপাতের রাজনীতি পছন্দ নয়,” মন্তব্য ইন্দ্রনীলের।
[আরও পড়ুন: বোর্ডের পরীক্ষায় ৫০০-তে ৫০০! তাক লাগিয়ে সিবিএসই দ্বাদশে প্রথম বুলন্দশহরের তানিয়া]
ইন্দ্রনীলের ‘পুরনোপন্থী’ পোস্ট মুহূর্তে ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। নিন্দার ঝড় ওঠে। ইন্ডিয়া টুডের বক্তব্য, কর্মীর আপত্তিকর মন্তব্যে অস্বস্তিতে পড়েছে সংস্থা। এরপরেই তাঁকে ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এক বিবৃতিতে সংস্থার সিইও দীনেশ ভাটিয়া জানিয়েছেন, “ইন্দ্রনীল স্বীকার করেছেন, মুহূর্তের ভুলে এই মন্তব্য করে ফেলেন। নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। পোস্টটি অল্প সময় পরে ডিলিট করেন।” যদিও এরপরেও গতকাল কর্মীকে ছাটাই করে সংস্থাটি। কারণ সে সংস্থার আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, ২০২২ সালে দাঁড়িয়ে ঠিক কোন মানসিকতা থেকে একজন শিক্ষিত যুবক বলতে পারেন, একজন আদিবাসী রাষ্ট্রপতি হতে পারেন না, সাফাইকর্মী দুর্গাপুজো করতে পারেন না? হিন্দুত্ববাদকেই তো উৎসাহ দেয় গেরুয়া শিবির, তাদেরই পছন্দের প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু। তাহলে কি এই মানসিকতা অল্প গোড়ামি ভার্সেস বেশি গোড়ামির! সংকীর্ণতার নয়া যুদ্ধ?