shono
Advertisement
Aravalli

উন্নয়নের বলি আরাবল্লী? ধ্বংস রুখতে এবার প্রধান বিচারপতি-রাষ্ট্রপতিকে চিঠি পরিবেশ কর্মীর

সুপ্রিম নির্দেশিকা পুনর্বিবেচনার আর্জি।
Published By: Kishore GhoshPosted: 07:42 PM Dec 22, 2025Updated: 07:47 PM Dec 22, 2025

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আরাবল্লী পর্বতমালায় খনন নিয়ে নতুন করে অস্বস্তি বাড়ল মোদি সরকারের। এবার পরিবেশ কর্মী হিতেন্দ্র গান্ধী প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তকে চিঠি লিখে সুপ্রিম কোর্টের আরাবল্লী খনন সংক্রান্ত নির্দেশিকা পুনর্বিবেচনার আর্জি জানালেন। একই চিঠি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছেও পাঠিয়েছেন ওই সমাজকর্মী।

Advertisement

সম্প্রতি এই বিষয়ে সুপ্রিম রায়ে বলা হয়, আরাবল্লী পাহাড়ের ১০০ মিটার বা তার বেশি উচ্চতার ভূমি ও আশপাশের ঢাল, সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকবে। যার অর্থ এটাই যে ১০০ মিটারের কম পাহাড়গুলির সংরক্ষণের আওতায় থাকবে না। অথচ আরাবল্লীর ৯০ শতাংশ পাহাড়ের উচ্চতা ১০০ মিটারের নিচে। প্রধান বিচারপতি এবং রাষ্ট্রপতিকে লেখা চিঠিতে পাহাড়ের উচ্চতা ভিত্তিক রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হিতেন্দ্র গান্ধী। তাঁর বক্তব্য, আরাবল্লীর উচ্চতা-ভিত্তিক মানদণ্ড উত্তর-পশ্চিম ভারতের পরিবেশের সুরক্ষাকে অনিচ্ছাকৃতভাবে দুর্বল করে দিতে পারে।

'আরাবল্লী পশ্চিম ভারতের প্রাকৃতিক ঢাল', ২০ নভেম্বরের রায়ের সময় সুপ্রিম কোর্টের এই মন্তব্যকে গুরুত্বপূর্ণ বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন পরিবেশ কর্মী। কিন্তু ১০০ মিটার উচ্চতার নিরিখে খননের অনুমতি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন হিতেন্দ্র। তিনি বলেন, আরাবল্লীর সম্পূর্ণ অংশই পশ্চিম ভারতের প্রাকৃতিক সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অভিযোগ উঠছে, শিল্পপতি বন্ধুদের পকেট ভরাতে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের ফুসফুস প্রাচীন আরাবল্লী পর্বতমালা ধ্বংসের ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করেছে মোদি সরকার। সেই কারণেই কয়লা ও নির্মাণ শিল্পে ব্যবহৃত পাথরের অভূত ভাণ্ডার আরাবল্লীতে খননকার্য চালানোর আইনি পথ সুগম করা হয়েছে। বিতর্ক চরম আকার নিতেই সোমবারই এই ইস্যুতে মুখ খুলেছে মোদি সরকার। জানানো হয়েছে, খননকার্য হলেও ৯০ শতাংশ আরাবল্লী সুরক্ষিত থাকবে।

আরাবল্লী ইস্যুতে তীব্র প্রতিবাদ ও বিতর্কের মাঝেই কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব জানান, আরাবল্লী পর্বতশ্রেণি নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ও আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। আরাবল্লী অঞ্চলের পরিবেশের উপর এখনই কোনও বিপদের আশঙ্কা নেই। ভূপেন্দ্রর বক্তব্য, “সুপ্রিম কোর্টের ১০০ মিটার সংক্রান্ত নির্দেশকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। ফলে অযথা এই বিষয়ে বিভ্রান্তি না ছড়ানোই কাম্য। আরাবল্লীর মোট এলাকা ১ লক্ষ ৪৭ হাজার বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে মাত্র ০.১৯ শতাংশ এলাকায় খননের অনুমোদন দেওয়া হবে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আরাবল্লীর ৯০ শতাংশ এলাকা সংরক্ষিত অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত এবং সেই নিয়ম কোনওভাবেই শিথিল করা হবে না।”

তবে সরকার এই দাবি করলেও বিতর্ক এড়ানো যাচ্ছে না। কারণ, ভারতের ভূ-প্রাকৃতিক দিক থেকে আরাবল্লীর গুরুত্ব অপরিসীম। হরিয়ানা থেকে শুরু করে রাজস্থান, গুজরাট ও দিল্লি পর্যন্ত বিস্তৃত আরাবল্লী পর্বতমালা জীববৈচিত্র তো বটেই এইসব অঞ্চলের জলের প্রধান উৎস। এখান থেকেই উৎপত্তি চম্বল, সবরমতী ও লুনি মতো নদী। তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে পাহাড়ের বাস্তুতন্ত্রে গুরুতর প্রভাব পড়বে। রাজস্থানের থর মরুভূমির বিস্তৃতি আটকায় আরাবল্লী। এই পর্বতমালা না থাকলে দিল্লিও মরুভূমির কবলে চলে যেত। ফলে পরিবেশকর্মীদের দাবি, আরাবল্লী যদি খনি, রিয়েল এস্টেটের মতো কর্পোরেটদের হাতে পড়ে তবে আরাবল্লি থেকে পাওয়া নিরাপত্তার ৯০ শতাংশই নষ্ট হয়ে যাবে। ভয়ংকর দূষণ তো বটেই সর্বনাশ হবে জীববৈচিত্রের। ভূগর্ভস্থ জলের রিসাইকেল কমে আসবে। জলসংকট চরম আকার নেবে।

কেন পুঁজিপতিদের নজরে আরাবল্লী?
জানা যায়, এই আরাবল্লী পর্বতমালা খনিজ সম্পদে ভরা। স্যান্ডস্টোন, লাইমস্টোন, গ্রানাইট, মার্বেল পাথরের বিপুল ভাণ্ডার রয়েছে এখানে। এছাড়াও, সোনা, তামা, দস্তা, লেড–এর মতো মিনারেল সমৃদ্ধ এই পাহাড়। ফলে দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিপতি শিল্পপতিদের লোভাতুর নজর রয়েছে এই পর্বতশ্রেণির উপর। পরিবেশ রক্ষক নিলম আহলুওয়ালি বলেন, পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন পর্বতকে ধ্বংস করে ফেলতে চাইছে সরকার। যেটি শুধু মরভূমির প্রসারে প্রাকৃতিক বাধা হিসেবেই কাজ করে না। দেশের একটা বড় অংশে জল ও বিশুদ্ধ বাতাস সরবরাহ করে। সাংবাদিক অরবিন্দ চোতিয়া বলেন, ‘একটা ১০০ মিটার ফিতে দিয়ে আরাবল্লিকে এ ভাবে মাপা সম্ভব? এটি শুধু একটা পাহাড় নয়, এটা আমাদের লাইফলাইন।’

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • সুপ্রিম রায়ে বলা হয়, আরাবল্লী পাহাড়ের ১০০ মিটার বা তার বেশি উচ্চতার ভূমি ও আশপাশের ঢাল, সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকবে।
  • আরাবল্লীর সম্পূর্ণ অংশই পশ্চিম ভারতের প্রাকৃতিক সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
Advertisement