সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: বাঙালি অধ্যুষিত বাংলায় হালে পানি পায় না বিজেপি! অথচ দিল্লির 'বাঙালি মহল্লা'য় ঘরে ঘরে ফুটল পদ্ম। রাজধানীর যেকটি বিধানসভায় বাঙালির আধিক্য রয়েছে তার মধ্যে অধিকাংশই বিজেপির দখলে। তবে ওই সমস্ত বিধানসভায় আপকে জেতাতে মাঠে নেমেছিলেন তৃণমূল সাংসদরা। তবুও শেষরক্ষা হয়নি। দুটি আসনে মুখরক্ষা করলেও বাকিগুলিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে আপ।
গ্রেটার কৈলাস, কালকাজি, করোল বাগ, ত্রিলোকপুরী পটপরগঞ্জ, পালাম, লক্ষ্মীনগর, উত্তম নগর, সঙ্গম বিহার এবং লক্ষ্মীনগর বিধানসভাগুলিতে বাঙালির আধিক্য। এর মধ্যে আটটি কেন্দ্র গিয়েছে বিজেপির ঝুলিতে। বাকি দুটিতে কালকাজি এবং করোল বাগে জিতেছে আপ। কেজরির হয়ে মাঠে নেমেছিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা, মহুয়া মৈত্ররাও। 'বাঙালি মহল্লা' করোল বাগে আম আদমি পার্টির হয়ে প্রচার করেছিলেন মহুয়া। কালকাজিতে সভা করেছিলেন 'বিহারীবাবু' শত্রুঘ্ন সিনহা। এই দুই আসনই মুখরক্ষা করেছে কেজরিওয়ালের। ত্রিলোকপুরী, লক্ষ্মীনগরেও তৃণমূল সাংসদ আপের হয়ে 'ঝাড়ু' ধরলেও সেখানে খাতা খুলতে পারেনি কেজরির দল। ফুটেছে পদ্ম।
কোন অঙ্কে বাঙালি ভোটার তথা দিল্লিবাসীর মন জিতেছে বিজেপি? এর নির্দিষ্ট কোনও কারণ নেই। তবে রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, বাঙালিরা কোনওদিনই একজোট ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেনি। প্রত্যেক ভোটারের আলাদা আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেশ-দশের কথা ভেবে ভোট দেন তাঁরা। এক্ষেত্রে নিজেদের নিজের মহল্লার উন্নয়নের বিষয়টি গৌণ হয়ে যায়। এক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে। এছাড়া দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে এ বছর লড়তে হয়েছে ১০ বছরের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতাকে সঙ্গী করে। ক্ষমতায় আসার পর ১২ বছরে কিছু কিছু প্রতিশ্রুতি পূরণ করলেও বহু কাজ বাকি রয়ে গিয়েছে। দিল্লির মতো রাজ্যে শুধু খয়রাতির উপর ভরসা করে কেজরিওয়াল ভোটে জয়ের আশায় ছিলেন। কিন্তু দেশের রাজধানীতে ভোটে জিততে হলে রাস্তাঘাট, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন দরকার, সর্বস্তরের মানুষের কাছে উন্নয়নের আলো পৌঁছে দেওয়া দরকার, সেটা বোধ হয় ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। দিল্লির বহু প্রান্তে রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, নর্দমায় জল জমা, অপরিচ্ছন্ন আবর্জনার স্তূপ মাথাচাড়া দিচ্ছিল। এমনকী কেজরির গর্বের সরকারি স্কুল, মহল্লা ক্লিনিকেরও বেহাল দশা। তাছাড়া স্থানীয় বিধায়কদের বিরুদ্ধেও দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছিল। তার প্রতিফলনই মিলল ভোটবাক্সে।
