সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১৩০ কোটি জনসংখ্যার ভারতে যেখানে প্রতি দশ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র ১৮ জনের করোনা স্ক্রিনিং টেস্ট করার পরিসংখ্যান বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, সেখানে স্ক্রিনিং পরীক্ষার অভূতপূর্ব নজির গড়ল রাজস্থানে টেক্সটাইলের শহর ভিলওয়াড়া (Bhilwara)। ১৯ মার্চ এই শহরে প্রথম করোনা (COVID-19) পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার পর থেকে ১৪ দিনের মধ্যে প্রায় ২৮ লক্ষের বেশি শহরবাসীর করোনা স্ক্রিনিং টেস্টের আয়োজন করে এই শহরের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। এবং এর মধ্য দিয়ে এই শহর এখন করোনা যুঝে ওঠার ক্ষেত্রে দেশের অন্যান্য করোনা সংক্রামিত অঞ্চলের ‘মডেল’ হিসাবে প্রশংসা পেল।
১৮ মার্চ ভিলওয়াড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালের একজন চিকিৎসক প্রথম করোনা আক্রান্তও হন। তখনই তাঁর সংস্পর্শে আসা সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে রোগীর স্ক্রিনিং হয় এবং কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হয়। তারপর স্বাস্থ্য দপ্তর এমন বিপুল স্ক্রিনিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ২৮ লক্ষ জনের স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ২৮১৬ জনের স্যাম্পল নেওয়ার পর শেষমেশ ২৭ জনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। এর ফলে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে সুবিধা হয় কর্তৃপক্ষের। এছাড়াও, যেহেতু এই শহরের প্রথম করোনা পজিটিভের ঘটনার নির্দিষ্ট কোনও সংক্রমণের অতীত মিলছিল না, তাই কর্তৃপক্ষ আরও কঠোর পদক্ষেপ করে।
[আরও পড়ুন: করোনা যুদ্ধের পুরস্কার, ফুল ছুঁড়ে হাততালি দিয়ে পুলিশকর্মীদের কুর্নিশ আমজনতার]
এই গণ-স্ক্রিনিংয়ের পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক সার্ভে, শহরের সীমান্ত বন্ধ করা এবং সীমান্ত প্রহরার কড়াকড়ি, শহর জুড়ে ‘নো মুভমেন্ট জোন’ তৈরি করা হয়। প্রথম পর্যায়ে শহরে জরুরি পরিষেবামূলক দোকানপাট খোলা থাকলেও দ্বিতীয় পর্যায়ে সম্পূর্ণ লকডাউন মোতায়েন করে শহরের কর্তৃপক্ষ। বন্ধ করা হয় সমস্ত রকম যানবাহন চলাচল। জরুরি তৎপরতার সঙ্গে শহরের হোটেল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বেসরকারি হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড গড়ে তোলা হয়, গড়ে তোলা হয় কোয়ারান্টাইন সেন্টারও। ২৭টি হোটেলে প্রায় ১৬০০টি কোয়ারান্টাইন বেড, ২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং হস্টেলে প্রায় ১২ হাজার এবং জেলা হাসপাতালগুলিতে ২০০ থেকে প্রায় ৫০০ বেডের ব্যবস্থা করা হয় ঝড়ের গতিতে। তৃতীয় পর্যায়ে ঘরে ঘরে পৌঁছে ২৮ লক্ষ জনের স্ক্রিনিং টেস্ট করা হয়। যার জন্য ২০০০ স্বাস্থ্যকর্মীর টিম তৈরি করা হয়। প্রথম ওই করোনা পজিটিভ চিকিৎসকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সংস্পর্শে আসা প্রায় ১৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী এবং তাঁদের পরিবারের প্রত্যেককে কোয়ারান্টাইনের ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ। এর ফলে ওই বেসরকারি হাসপাতালের প্রায় ৭০০০ জন রোগীর করোনা নেগেটিভ সুনিশ্চিত করা সম্ভব হয়। ভিলওয়াড়ায় বর্তমানে করোনা সংক্রমণের নিয়ন্ত্রণ প্রায় হাতের মুঠোয় আনা গিয়েছে। ইতিমধ্যে ২ জনের মৃত্যু হলেও সংক্রমণের তেমন কোনও খবর নেই। এই বিপুল তৎপরতার জন্য ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা বলেন, দেশের অন্য করোনা-বিপর্যস্ত শহর ও রাজ্যগুলি ‘মডেল’ হিসাবে গ্রহণ করুক।
The post ‘হটস্পট’ থেকে শূন্য সংক্রমণ! করোনা নিয়ন্ত্রণে গোটা দেশের ‘মডেল’ রাজস্থানের এই শহর appeared first on Sangbad Pratidin.
