সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নিচে সবুজ প্রান্তর। সারি দিয়ে দাঁড়ানো পাইন গাছ। মিঠে রোদ গায়ে মেখে ছুটি উপভোগ করছেন পর্যটকরা। তিনিও ছিলেন সেই তালিকায়। জিপলাইন রাইডে চড়ে পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাচ্ছিলেন। তিনি তখন মজে জয়রাইডে। কিন্তু ততক্ষণে সেই সবুজ উপত্যকা রক্তে ভেসে গিয়েছে। একের পর এক পর্যটক জঙ্গিদের গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন। কিন্তু সেই আর্তনাদ আর গুলির শব্দ কোনওটাই আর অ্যাডভেঞ্চারের আওয়াজ ভেদ করে ওই ব্যক্তির কানে পৌঁছতে পারেনি। অজান্তে যে ভিডিওতে তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন সেটাতেই ধরা পড়েছে পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার নৃশংসতা। এই ভাইরাল ভিডিও দেখে 'আল্লা হু আকবর' বলা সেই অপারেটরকে ফের তলব করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ।
জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তির নাম ঋষি ভট্ট। ২২ এপ্রিল ছুটি কাটানোর জন্য স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে তিনিও গিয়েছিলেন পহেলগাঁওয়ের ওই 'অভিশপ্ত' জায়গায়। ইতিমধ্যেই এই ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এবার প্রকাশ্যে এসেছে ঋষির ভিডিও। ওই দিন জিপলাইন রাইডে ওঠার পর সেলফি স্টিক দিয়ে মোবাইলে ভিডিও বানাচ্ছিলন তিনি। যেখানে দেখা গিয়েছে, রাইডে উঠে খুবই উচ্ছ্বসিত ঋষি। আনন্দে চিৎকার করছেন। কিন্তু স্লাইড শুরু করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই নিচে দেখা যাচ্ছে সেই ভয়ংকর দৃশ্য। অনেকেই বসে খাবার খাচ্ছিলেন। কেউ কেউ বাচ্চাদের নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছিলেন। ঠিক সেই সময়ই গুলির কান ফাটানো আওয়াজ। শুরু হয় জঙ্গিদের তাণ্ডব। তাদের গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন একের পর এক পর্যটক। ভয়ে বাকিরা এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করছেন। কিয়স্কে লুকানোর চেষ্টা করছেন। জিপলাইন রাইড শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত ঋষি এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড একচুলও উপলব্ধি করতে পারেননি। তিনি তখনও মজে নিজের আনন্দে।
কিন্তু জিপলাইনের ওপর প্রান্তে নামার পরই গোটা পরিস্থিতি মালুম হয় ঋষির। চোখের সামনে সবুজ উপত্যকার রঙ টকটকে লাল হয়ে যেতে দেখেছেন তিনি। ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই নেটিজেনদের চর্চায় তিনি। সাংবাদিকরাও পৌঁছে গিয়েছে তাঁর কাছে। হারহিম অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে গলা শুকিয়ে আসে ঋষির। তিনি জানান, "আমি আমার স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে দৌড়াতে শুরু করলাম। আমরা দেখলাম সকলে একটা গর্ত মতো জায়গায় লুকানোর চেষ্টা করছে। যাতে তাদের সহজে দেখা না যায়। আমরাও সেখানেই লুকিয়ে ছিলাম। ৮-১০ মিনিট পর যখন গুলির আওয়াজ থামল, তখন আমরা মেন গেটের দিকে দৌড়াতে শুরু করি। কিন্তু ফের গুলি শুরু হয় এবং চার থেকে পাঁচজনকে গুলি করা হয়। এভাবে আমাদের সামনে প্রায় ১৫-১৬ জন পর্যটককে গুলি করা হয়। আমরা যখন গেটে পৌঁছালাম, তখন দেখি স্থানীয় বাসিন্দারা ইতিমধ্যেই চলে গিয়েছে। টাট্টু ঘোড়ার গাইড আমাদের বাইরে যেতে সাহায্য করেন।"
এদিকে, ওই ভিডিওতেই জিপলাইন অপারেটরকে একটি ধর্মীয় বাক্য বলতে শোনা যায়। 'আল্লাহু আকবর'। পহেলগাঁওয়ের হামলার (Pahalgam Terror Attack) তদন্তে ওই অপারেটরকে ফের তলব করেছে এনআইএ। (যদিও এই ভিডিওগুলোর সত্যতা যাচাই করেনি সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল)। এর আগেও তদন্তের স্বার্থে ওই কাশ্মীরি যুবককে ডেকে পাঠিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। ভিডিওটি দেখে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেটিজেনরা। অনেকেই ওই জিপলাইন অপারেটরকে সন্দেহ করছেন। তিনি হামলার সঙ্গে জড়িত কি না তা তদন্ত করে দেখার দাবি জানিয়েছেন। ২২ এপ্রিল জঙ্গিরা এসেছিল সেনার পোশাকে। বেছে বেছে হিন্দু পরিচয় জেনে পর্যটকদের হত্যা করে তারা। ২৫ পর্যটক ও এক স্থানীয় যুবক মিলিয়ে মতো ২৬ জন প্রাণ হারান। সব মিলিয়ে প্রাণ হারান ২৬ জন। এই হামলায় পাক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈবার হাত দেখছে নয়াদিল্লি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বদলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ভারত। বাতিল করা হয়েছে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি।
